ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব: নবযুগের সূচনা 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৯
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব: নবযুগের সূচনা 

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বা ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে বিশ্বের সব উন্নত দেশ। আসন্ন এই বিপ্লবের মাধ্যমে সবাই নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থান আরো দৃঢ় করে তোলার পরিকল্পনা করছে। এই বিপ্লব মূলত প্রযুক্তির বিপ্লব, যা পৃথিবীর মানুষের জীবনকে নিয়ে যেতে চায় এক ধাপেই শতবর্ষ এগিয়ে। 

এই পরিবর্তন সব মানুষের জীবন মান উন্নত করবে, আয় বাড়াবে সব শ্রেণির মানুষেরই। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ইন্টারনেট অব থিংস এর মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।

তাই এই শিল্পবিপ্লব থেকে লাভবান হওয়ার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। প্রযুক্তির উৎকর্ষ কাজে লাগিয়ে পরিবর্তিত-পরিবর্ধিত হবে শিল্প-অর্থনীতির নানা ক্ষেত্র।      

গত তিনশ’ বছরে প্রযুক্তির বিকাশ মানবসভ্যতার উন্নয়নে অভূতপূর্ব ভূমিকা রেখেছে। পরবর্তী সময়ে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলো কৃষি থেকে শিল্পায়নে স্থানান্তরিত হয়েছে। টমাস নিউকোমেনের (Thomas Newcomen) বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রথম শিল্পবিপ্লব শুরু হয়েছিল ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। এটি ছিল বাণিজ্যিকভাবে সফল প্রথম বাষ্পীয় ইঞ্জিন।  

প্রথম শিল্পবিপ্লব আমাদের উপহার দেয় যান্ত্রিকীকরণের সূচনা, কৃষি ও ফসলের উপর ভিত্তি করে শিল্পভিত্তি প্রবর্তন, খনির শিল্পের অগ্রগতি বিশেষত লোহা ও কয়লা উত্তোলন। পরবর্তীকালে আমরা ১৯ শতকের শুরুতে অর্থাৎ ১৮৭০ সালে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের মাধ্যমে দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবে প্রবেশ করে পাই আলোকিত পৃথিবী।  

তৃতীয় শিল্পবিপ্লবটি ছিল ডিজিটাল বিপ্লব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিস্তার যা নতুন ‘জ্ঞান অর্থনীতির’ (Knowledge Economy) জন্ম দিয়েছে ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেটের উদ্ভাবনের মাধ্যমে। এটি জগৎকে এনেছে হাতের মুঠোয়। এই বিপ্লবের ফলে হাজার হাজার নতুন ব্যবসা এবং লাখ লাখ নতুন চাকরি তৈরি হয়েছে এবং একবিংশ শতাব্দীতে একটি টেকসই বৈশ্বিক অর্থনীতির ভিত্তি স্থাপন করেছে।

উন্নত প্রযুক্তির কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক ইন্টারনেট অব থিংস আপনার বাসার সব আসবাব ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোনের সঙ্গে যুক্ত-এই সিস্টেমকেই বলা যায় ইন্টারনেট অব থিংস।  

যেমন– আপনার বিদ্যুতের বিল দেওয়া নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না, বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাবে আপনার স্মার্টফোনে, বাসায় কি কি বাজার নেই তা জানিয়ে দেবে ফ্রিজ! আপনার শরীরে কি কি পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি তাও জানিয়ে দেবে আপনার স্মার্টফোনের স্ক্রিন! তখন আপনার চিন্তিত হবার কী কারণ থাকতে পারে বলুন তো!

রোবটিকস দূরনিরাপত্তা, কারখানার বিপজ্জনক কাজ, স্থাপনার শ্রমিক, কিংবা স্রেফ নিরাপত্তাপ্রহরী বা গৃহস্থালি কাজ সব কাজই করতে শুরু করবে রোবট। ‘পায়ের উপর পা তুলে খেতে’ এখন কেবল একটি রোবটেরই অপেক্ষা!

অটোমেশন কারখানার সব মেশিন এমন একটি সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, যা স্বয়ংক্রিয় চালনা থেকে শুরু করে পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান করবে; একেই বলা হচ্ছে অটোমেশন। এতে বাঁচবে শ্রমখরচ, কমবে মানবিক ত্রুটি। একাধিক কাজ যখন একটি যন্ত্র করতে পারবে তখন খরচ নিয়েও আর ভাবতে হবে না!

সুস্থতায় বংশগত রোগ কমাতে আসবে নিরোগ জিন, কঠিন অসুখের প্রতিষেধক। আর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অস্ত্রোপচার করতে ছুরি-কাঁচি ছাড়া কম্পিউটারের দক্ষ হাতের বহুল ব্যবহার শুরু হবে এই বিপ্লবে। মানুষ হয়তো অমর হবে না, কিন্তু পৌঁছে যাবে অমরত্বের কাছাকাছি!

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং পৃথিবীর বিপুল জনসংখ্যা নিয়ে ভিন্ন গ্রহে বসতি গড়তে মানুষকে আর মাথা ঘামাতে হবে না; মানুষকে নিরাপদ রাখতে আসছে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটিং।

একবিংশ শতাব্দীতে সব কিছুই বিক্রিযোগ্য। কে না জানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্যাক্সি কোম্পানি উবারের নিজের কোনো ট্যাক্সি নেই, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিডিয়া ফেসবুকের নিজস্ব কোনো কন্টেন্ট নেই, পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শপগুলোর একটি আলিবাবার কোনো গুদাম নেই এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় আবাসন প্রোভাইডার এয়ারবিএনবির নিজেদের কোনো রিয়েল এস্টেট নেই।

শিল্পবিপ্লবের ধাপবিশ্বের সবচেয়ে খুদে ইউটিউবার ৫ বছরের রায়ান প্রতিমাসে কেবল তার খেলনাগুলো দিয়ে খেলতে কেমন লাগে তা জানিয়েই মিলিয়ন ডলার উপার্জন করে। ইউটিউবও কিন্তু নিজস্ব কন্টেন্টের জন্য খ্যাতি পায়নি!

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব পৃথিবীকে আক্ষরিক অর্থেই ‘গ্লোবাল ভিলেজে’ পরিণত করবে। যোগাযোগব্যবস্থা হবে অভাবনীয় উন্নত, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হবে পাড়ার দোকানে কেনা-বেচার মতোই সহজ। ডিজিটাল বিপ্লবের এই শক্তির চিত্রটি বিশ্বব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ডিজিটাল ডিভিডেন্ডস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে।

এতে বলা হয়েছে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন একদিনে বিশ্বে ২০ হাজার ৭০০ কোটি ই-মেইল পাঠানো হয়, গুগলে ৪২০ কোটি নানা বিষয় খোঁজা হয়। এক যুগ আগেও তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে এ পরিবর্তনগুলো ছিল অকল্পনীয়।

অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখে একসময় মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খাওয়া বাংলাদেশের পক্ষে যে একদিন প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে তা অনেকেই কল্পনা করতে পারেনি।  

কিন্তু বর্তমান সরকারের সদিচ্ছা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে আজ আমরা প্রযুক্তিখাতে বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জন করেছি। দেশের সব প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে ফোরজি ইন্টারনেট প্রযুক্তি; যা যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। যোগাযোগমাধ্যম আরো দৃঢ় করার লক্ষ্যে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে দেশের প্রথম নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১।  

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠছে ২৮টি হাই-টেক পার্ক; যা আমাদের তরুণ উদ্যোক্তা ও প্রকৌশলীদের এগিয়ে চলার পথকে আরো সুগম করে তুলছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষ এবং উদ্ভাবনের ফলে দেশের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে গড়ে উঠছে উন্নত ও আধুনিক ল্যাব।

বর্তমান সরকারের এমন প্রশংসনীয় পদক্ষেপের কারণে আমাদের দেশে সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্ম গড়ে উঠছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব থেকে আমরা যদি লাভবান হতে চাই, তাহলে আমাদের দেশকে প্রযুক্তিবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার বিকল্প নেই।  

বিশ্বজুড়ে চলমান মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৭ থেকে ৮ শতাংশ স্থিতিশীল জিডিপি অর্জন করেছে। বিশ্বে সপ্তম জনবহুল (১৬০ মিলিয়ন) দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সামাজিক ক্ষেত্রে ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে যাচ্ছে।  

এদেশের ১৫ থেকে ৩৫ বছরের ৮০ মিলিয়ন (৮ কোটি) যুবশক্তিকে আধুনিক জ্ঞান ও দক্ষতা এবং উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে গড়ে তোলা সম্ভব হলে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অর্জিত হবে। আমাদের ৮ কোটি ১৫-৩৫ বছরের যুবক-ই আমাদের বিশাল সম্পদ।  

তাদের কেন্দ্র করেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দিনরাত পরিশ্রম করে একটি ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে দিয়েছেন। আমাদের মাথাপিছু আয় প্রায় ২ হাজার ডলারের মতো। ২০৪১ সালে এটি করতে হবে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার। বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদের একটি লক্ষ্য দিয়েছেন, সেটা ডেল্টা প্ল্যান।  

যদি সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি, তাহলে এত বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী নিয়ে আমরা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে রোল মডেল হবো। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয় এ লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

তার স্বপ্ন, ‘আগামীতে হাইটেক সেক্টরে কাজ করবে বাংলাদেশের তরুণরা। কেবল চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে অংশ নয়, নেতৃত্বস্থানীয় অবস্থানেও আসবে বাংলাদেশ। ’ তার মতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত ভবিষ্যতের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। এজন্য চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে এখন কথা বলার সময় এসেছে।  

কারণ, দ্রুত বদলে যাওয়া প্রযুক্তি মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনছে। ফলে, অর্থনীতির বিকাশ ও শিল্পায়নও দ্রুত ঘটছে। ২০২৫ সালের মধ্যেই ন্যানো ম্যাটেরিয়ালের বাণিজ্যিক ব্যবহার দেখা যাবে। এসব ন্যানো ম্যাটেরিয়াল স্টিলের চেয়েও ২০০ গুণ শক্ত কিন্তু চুলের চেয়েও পাতলা। থ্রিডি প্রিন্টেড লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট হবে। ১০ শতাংশের বেশি গাড়ি হবে চালকহীন।  

সরকার, ব্যবসা ও সাধারণ মানুষের জীবনেও এর প্রভাব দেখা যাবে। আগামীর বাংলাদেশ পৃথিবীর এসব উন্নত প্রযুক্তিগুলোকে গ্রহণের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে। ভবিষ্যতে মোবাইল সুপারকম্পিউটিং, চালকহীন গাড়ি, কৃত্রিম বুদ্ধিমান রোবট, নিউরো প্রযুক্তির ব্রেন, জেনেটিক এডিটিং দেখতে পাবে। প্রযুক্তির এসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের জন্য আমাদের উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে হবে।  

উদাহরণস্বরূপ, ৪ হাজার ৫৫৪ ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্র, শতাধিক সহজলভ্য জনসেবা, ই-তথ্য সংগ্রহ ও স্মার্ট স্বাস্থ্য কার্ড বাংলাদেশকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে নিয়ে যাচ্ছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব তথা ডিজিটাল বিপ্লবের ফলে সবকিছুর পরিবর্তন হচ্ছে গাণিতিক হারে।  

এর প্রভাবে পাল্টে যাচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়া, ব্যবস্থাপনা, এমনকি রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যবস্থাও। এক কথায়, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হচ্ছে ডিজিটাল অবকাঠামোর ওপর নির্মিত মানবসভ্যতার নতুন একটি যান্ত্রিক অনুভূতিপ্রবণ সিস্টেমে পদার্পণ, যা একগুচ্ছ ইমার্জিং টেকনোলজি সমন্বিত ও নিখুঁত ক্রিয়াকলাপের ফল। এটা ইন্টারনেটের কল্যাণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নিউরো-প্রযুক্তির নিত্যনতুন ক্ষমতার প্রকাশ আর প্রচলিত কর্ম সম্পাদন ও ব্যবস্থাপনার ধরনকে বিদায় জানিয়ে নতুনতর এক জগতের সূচনা।  

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বৈশ্বিক শ্রমবাজার, ভবিষ্যতের কাজকর্মের ধরন, আয়ের অসমতা, ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তা, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের কাঠামোকে প্রতিনিয়ত প্রভাবিত করছে। এ প্রভাবের ফলে পাল্টে যাচ্ছে সবকিছু। এমনকি সু-প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা, কৃষি, অর্থনীতি, শিক্ষাব্যবস্থা, চিকিৎসা ক্ষেত্রেও আসছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

এই পরিবর্তনের ফলে যেমন ভাঙন ধরেছে পুরাতন সব প্ল্যাটফমে, তেমনি উন্মোচিত হয়েছে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার। এই পরিবর্তনই আমাদের জন্য নিয়ে আসবে সব সেক্টরে নতুন উন্নয়নের জোয়ার। আমাদের দেশের বিদ্যমান সমস্যাগুলোই আমাদের এক একটি সম্ভাবনা।
 
নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০২১, ২০৩০, ২০৪১, ডেল্টা প্ল্যান অর্জন করা সম্ভব। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম অনেক মেধাবী। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবেলায় আমাদের পরিকল্পিত প্রস্তুতি নিয়ে এগোতে হবে।

এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং শিক্ষকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণ করা। তাই পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। আমাদের ৮ কোটি ১৫-৩৫ বছরের যুবক-ই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বিশাল সম্পদ। আমাদের তরুণরা মেধাবী। তাদের কেন্দ্র করেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে।  

এ প্রসঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্থপতি সজীব ওয়াজেদ জয়-এর কথাটি মাথায় রেখে তরুণদের এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেছেন, ‘তরুণরা নতুন নতুন প্রযুক্তি সৃষ্টির প্রয়াসে কাজ করবে কিন্তু সেটা অন্যদের অন্ধভাবে অনুসরণ করে নয় (youths to innovate new technologies rather than imitating others) । ’

বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৫০ বছর আগেই হাই-টেক পার্ক গড়ে উঠেছিল। আমাদের এই যুবশক্তি থেকে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। ইনোভেশন ফার্ম গড়তে হবে। সম্ভাবনাময় এই জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে তা সম্ভব। তারা গবেষণা করবে, স্থানীয় (দেশের) সমস্যা সমাধান করবে এবং সেটা বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে দেবে।  

দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য গবেষণার বিকল্প নেই। গবেষণা হতে হবে আউটকাম বেজড (ফলাফলভিত্তিক)। গবেষণার মাধ্যমে দেশের বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য গবেষকদের রিওয়ার্ড বা প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া গবেষণা হতে পারে লোকালি ও ইন্টারন্যাশনালি কোলাবরেটেড। এক্ষেত্রে গবেষণার মান ও ব্যাপ্তি বাড়বে।  

যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ’ বছরের একটা ঐতিহ্য রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যদি পটুয়াখালী কিংবা নতুন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সঙ্গে কোলাবরেটলি গবেষণা করতে পারেন,  তবে সেটা খুবই ফলপ্রসূ হতে পারে। অথবা এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যদি ইউরোপ কিংবা এশিয়া বা আমেরিকার একটা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকের সঙ্গে তার গবেষণা করতে পারেন সেটা বেশ ইউনিক হতে পারে। আর গবেষণার একটা মোটিভ থাকে, প্যাটেন্ট থাকে, কপিরাইট থাকে, এর পরবর্তী ধাপ হচ্ছে স্ট্যার্টআপ বা এন্ট্রপ্রেনারশিপ, যেটা দিয়ে কমার্শিয়ালাইজেশন হবে।  

বাংলাদেশের মতো এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড এবং ডিজিটাল বিপ্লবের ফল এক সঙ্গে কাজে লাগানোর সুযোগ খুব কম দেশেরই রয়েছে। আমার বিশ্বাস ২০২৫ সালের পরে দেশে আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রসমূহে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রভাব মোকাবেলা করতে আমাদের তরুণরাই সক্ষম হবে।  

দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করতে পারলেই প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে আমরা সঠিকভাবে এগোতে পারবো। তাহলেই সম্ভব হবে অতিরিক্ত কর্মক্ষম জনমানবকে কাজে লাগানো আর চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলা।

লেখক: তথ্যপ্রযুক্তিবিদ; সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৯

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।