ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন জরুরি

মনোয়ার হোসেন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০২০
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন জরুরি

বাংলাদেশ এখন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কোভিড-১৯ মহামারি দেশের স্বাস্থ্য ও অর্থখাতসহ প্রায় সকল খাতকেই মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে।

এরকম একটি পরিস্থিতিতে দেশে তামাকজাত পণ্যের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে জনস্বাস্থ্য আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) তামাককে করোনা সংক্রমণ সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার কথা বলেছে।  

ধূমপানের কারণে শ্বাসতন্ত্রের নানাবিধ সংক্রমণ এবং শ্বাসজনিত রোগ তীব্র হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাধিক গবেষণা পর্যালোচনা করে ডব্লিওএইচও জানিয়েছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। এছাড়া তামাক ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন জটিল অসংক্রামক রোগ যেমন, হৃদরোগ, ক্যানসার, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। বাংলাদেশে এখনও ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করেন, যার মধ্যে ১ কোটি ৯২ লক্ষ ধূমপায়ী এবং ২ কোটি ২০ লক্ষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন। ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সের প্রায় ৭ শতাংশ (GYTS,২০১৩) কিশোর-কিশোরী তামাকপণ্য ব্যবহার করে। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ ২৬ হাজার (বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, ২০১৮) মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে। সার্বিকভাবে তামাক ব্যবহারের এই চিত্র অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

বাংলাদেশ ২০০৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) স্বাক্ষর করে। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হয় এবং ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধন করে আরও যুগোপযোগী করা হয়। ২০১৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধিমালা পাস করা হয়। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ এসডিজি’র স্বাস্থ্য সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এফসিটিসিকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে মূলধারার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তামাকের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ২০১৬ সালের ৩০-৩১ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন’ শীর্ষক সাউথ এশিয়ান স্পিকার’স সামিট এর সমাপনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সংশোধন করার ঘোষণাও দেন তিনি।

বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কিছু দুর্বলতা যেমন, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি (সিএসআর) নিষিদ্ধ না থাকায় তামাক ব্যবহার হ্রাসে তা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। চলমান কোভিড-১৯ মহামারিতেও ব্যবসা অব্যাহত রাখতে তামাক কোম্পানিগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি (সিএসআর), লবিং, অনুদান ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচারসহ বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করেছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির নামে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান, ব্রান্ড ইমেজ প্রচারের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেইজে লাইভ টকশো এ অংশগ্রহণ, করোনায় ধূমপায়ীদের ক্ষতি কম এজাতীয় ভ্রান্ত তথ্য প্রচার ইত্যাদি অব্যাহত রেখেছে কোম্পানিগুলো।

তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার সুযোগ থাকায় সরকারের নীতিপ্রণেতাদের সাথে অপ্রয়োজনীয় যোগাযোগ তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক নীতি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে থাকে। সুতরাং তামাকের নেতিবাচক প্রভাব থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এফসিটিসির আলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করার মাধ্যমে তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি।

লেখক: কবি এবং উন্নয়ন কর্মী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।