ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আব্রাহাম লিংকনের নিষ্ঠুর হত্যা গণতন্ত্র ও বাস্তবতা

নঈম নিজাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২০
আব্রাহাম লিংকনের নিষ্ঠুর হত্যা গণতন্ত্র ও বাস্তবতা নঈম নিজাম

আমেরিকার রাজনৈতিক সংকট নতুন কিছু নয়। এর চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছিল আব্রাহাম লিংকনের সময়।

আনুষ্ঠানিকভাবে দাস প্রথা বিলুপ্ত করেন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। কালোদের অন্ধকার জীবনের আলো ফিরিয়ে দেন তিনি। দক্ষিণ আমেরিকানরা তা মেনে নিতে পারেনি। তারা ছিলেন কালোদের দমিয়ে রাখা এবং  দাস প্রথার পক্ষে।  টানটান উত্তেজনা আমেরিকা জুড়ে। সবাই ভেবেছিলেন ক্ষমতার কথা ভেবে আব্রাহাম লিংকন পিছু হটবেন। সাতটি প্রদেশের দাস প্রথার অনড় অবস্থানের পক্ষে থাকবেন। কিন্তু তাঁর নাম আব্রাহাম লিংকন। তিনি নিজের অবস্থান থেকে এক চুলও সরলেন না। এতে শুরু হলো গৃহযুদ্ধ। একদিকে দক্ষিণ আমেরিকানরা। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট লিংকন। যুদ্ধ চলতে থাকে। সেই যুদ্ধে মারা যান আট হাজার মানুষ। সারা বিশ্ব হতবাক হয়ে দেখল আমেরিকানদের কান্ড! কিন্তু একজন আব্রাহাম লিংকন সবকিছু সামাল দিয়ে পরিস্থিতি বদলাতে থাকেন। শোক আর অশ্রুতে ভাসল আমেরিকা। পরিস্থিতি সামাল দিতে কৌশলী ভূমিকা নেন প্রেসিডেন্ট। যুদ্ধ আর শান্তি কামনায় চলল তাঁর কাজ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নিহতদের স্মরণসভায় তিনি দেন দুনিয়া কাঁপানো ভাষণ। পেনসিলভেনিয়ার গেটিসবার্গে সেই ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘‘গভর্মেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল’’ অর্থাৎ ‘জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা সরকার, জনগণের জন্য সরকার। ’ সেই ভাষণ আজও দুনিয়াকে তোলপাড় করে চলছে। এই অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা ছিলেন অ্যাডওয়ার্ড এভার্ট। তখনকার সময় তাঁর চেয়ে ভালো বক্তা আর কেউ ছিলেন না। মানুষ লাইন ধরে যেত তাঁর বক্তৃতা শুনতে। কিন্তু ইতিহাস সবাই রচনা করেন না। একজন থাকেন আলাদা করে। অ্যাডওয়ার্ড এভার্ট বক্তব্য রাখলেন প্রায় দুই ঘণ্টার কাছাকাছি। আর মাত্র দুই মিনিট বললেন লিংকন। সেই দুই মিনিটে কেঁপে উঠল বিশ্ব। বদলে গেল গণতন্ত্রের সংজ্ঞা। তৈরি হলো আমেরিকানদের আবেগ। কিন্তু তারপরের ইতিহাস ভীষণ নিষ্ঠুর। পাঁচ বছরের গৃহযুদ্ধ অবসানের মহানায়ক শেষ পর্যন্ত নিজেকে রক্ষা করতে পারলেন না। পারলেন না  বাঁচতে। স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন থিয়েটার দেখতে। মনটা ছিল ফুরফুরে। হঠাৎ থিয়েটারের একজন অভিনেতা জন উইলকেস বোথ কাছ থেকে গুলি করলেন। এক দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে পরাজিত হন আব্রাহাম লিংকন । ১৮৬৫ সালের ১৫ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। ১৮৬০ সালে রিপাবলিকানদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। পরের বছর ভোটে জয়ী হয়ে ইতিহাস গড়েন। রিপাবলিকান পার্টির এই নেতা ছিলেন মানবিক। মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে নিয়েছিলেন বিভিন্ন কর্মসূচি। সাতটি প্রদেশ কনফেডারেট গঠন করে গৃহযুদ্ধের কবল থেকে আমেরিকাকে রক্ষা করেন। বিলুপ্ত করেন দাস প্রথা।

সেই আব্রাহাম লিংকনের দল থেকে মসনদে আসীন ট্রাম্প সাহেবের পাগলামি দেখে অনেক কিছু মনে পড়ছে। ফলাফল নিয়ে এত নাটকের কোনো মানে হয় না। আমেরিকায় এত নাটক করা যায় না। মামলা-মোকদ্দমা করেও কোনো লাভ হবে না। আমেরিকান সিস্টেম আমাদের দেশের মতো নয়। গণতন্ত্র নিয়ে আমেরিকা অনেক যন্ত্রণা পোহাচ্ছে। তাই বলে নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন করেনি তারা। ট্রাম্পের পাগলামির জবাব দিয়েছে ব্যালটের মাধ্যমে। আর এই কঠিন বাস্তবতায় আমাদের সিইসি নূরুল হুদা সাহেব বলেছেন, আমেরিকার শেখার আছে তার হুদা কমিশনের কাছে। বড় আজব দেশে বাস করছি। বুঝতে পারছি, ট্রাম্পের পছন্দ হুদা টাইপের কমিশন। কিন্তু আমেরিকার রাজনৈতিক সংস্কৃতি আলাদা। এখানে চাইলেই জোর করে ক্ষমতায় থাকা যায় না। করা যায় না শিষ্টাচারবহির্ভূত কান্ড! বুঝি জটিল সময়ে আমাদের অনেক কিছু স্বাভাবিক নয়। ভোট ভোট খেলা নিয়ে ব্যস্ত নির্বাচন কমিশন। সরকার আর বিরোধী দল, গণতন্ত্র কোনো কিছু নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। থাকলে এত জটিলতা তৈরি হতো না। ভোট হতো না প্রশ্নবিদ্ধ। সর্বশেষ ঢাকার যাত্রাবাড়ী আসনে সরকারি হিসাবে ৯০% মানুষ ভোট দিতে যায়নি। ঢাকা-১৮ আসনে ৮৫.৮২ শতাংশ মানুষ যায়নি কেন্দ্রে। এই হিসাব ভাবনার বিষয়। সবকিছুর হিসাব কোথায় যেন মিলছে না। আলোচনায় না-ই গেলাম সিরাজগঞ্জে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৩২৫ ভোটের বিপরীতে প্রাপ্ত ৪৬৮ ভোটের বিষয়ে। ঢাকা-১৮ আসনে আওয়ামী লীগ ৭৫ হাজার ৮২০ ভোট। বিএনপি পেয়েছে ৫ হাজার ৩৬৯ ভোট। হুদা কমিশনের সুবিধা আছে। তারা এসব নিয়ে চিন্তিত নয়। বরং আমেরিকার সঙ্গে তুলনা করছেন নিজেদের। শাবাশ! আপনাদের হিম্মত আছে। কিন্তু মনে রাখুন, সবারই চিরদিন এক রকম থাকে না। বাস্তবতায় ফিরে আসতে হবে। এই দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ দিয়েছেন। শেখ হাসিনা তিল তিলভাবে গড়ে তোলা আন্দোলনকে বিশালত্বে নিয়ে ভোটাধিকার আদায় করেন। ভাত ও ভোটের অধিকার শেখ হাসিনার অর্জন। সেই অর্জনকে ক্ষতিগ্রস্ত যারা করলেন, তাদের বলছি কাজটি বেশি ভালো হয়নি। স্বল্প মেয়াদে ঠিক আছে। দীর্ঘ মেয়াদে এই দায় অতি উৎসাহী প্রশাসনিক বিভিন্ন যন্ত্রের কর্মকর্তা আর হুদা কমিশনকে নিতে হবে। একটু হিসাব কষুণ সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। আচ্ছা বুকে হাত দিয়ে বলুন, শতভাগ নিরপেক্ষ ভোট হলে বিএনপি কতটি আসন পেত? বাস্তবতা হলো মাঠ ছিল আওয়ামী লীগ কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে।  শীর্ষ ব্যবসায়ীরা মঞ্চে উঠে শেখ হাসিনার প্রতি আস্থার ধারাবাহিকতার কথা জানিয়েছিলেন। মিডিয়ার সমর্থন ছিল আওয়ামী লীগের পক্ষে। বিপরীতে খালেদা জিয়া ছিলেন কারাগারে। তারেক রহমান লন্ডনে। বিএনপির দুই শতাধিক প্রার্থী মাঠে নামেননি মামলা-হামলায় জর্জরিত থাকার কারণে। অনেকে এলাকায় যাননি। কেউ ছিলেন কারাগারে। সেই নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে কতটি আসন পেত বিএনপি জোট? সব হিসাব-নিকাশে ৪০ থেকে ৬০ আসন। এই আসন নিয়ে বিএনপি সংসদে গেলে, আর মির্জা ফখরুল বিরোধী দলের নেতা হলে কী এমন সমস্যা তৈরি হতো? কিছুই হতো না। বরং পাঁচ বছর কোনো ফিসফাঁস হতো না। প্রশাসনিক কর্তারা দাম্ভিক হতে পারতেন না। ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতিতে কেউ সরকারের ভিতরে ঝামেলা তৈরি করতে পারতেন না। পাঁচ বছর ক্ষমতাসীনরা চলত বিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান ছাড়া।

অতি উৎসাহীরা সর্বনাশ ডেকে আনে। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসে নেতা-কর্মীদের ওপর ভর করে। আর বিদায় নেয় বিভিন্ন সংস্থা, আমলা, হাইব্রিড আর কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভর করে। ইতিহাস তাই বলে। অতীতের সব নিষ্ঠুরতা সে প্রমাণ বহন করে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়াতে এটা এক দৃষ্টান্ত। এ কারণে রাজনৈতিক দলকে নিজের ওপর ভর করে চলাই ভালো। দুঃসময়ের কর্মীরা হারিয়ে গেলে রাজনৈতিক দলের কিছুই থাকে না। অতি উৎসাহী সরকারি কর্তাদের ওপর নির্ভরশীলতা রাজনীতিতে সব সময় হতাশা তৈরি করে। আর রাজনৈতিক সরকার অন্যদিকে ঝুঁকে গেলে সবকিছু বিলীন হয়। বুঝি এই কথাগুলো কারও ভালো লাগবে না। তবুও বলছি, বাস্তবতার কিছু কঠিনতম সত্য দেখে। রাষ্ট্রের বয়স বাড়ছে। আমাদেরও কম হয়নি। চারপাশটা দেখে বিষাদে মন ছেয়ে যায়। গোটা বিশ্বেই চলছে নানামুখী সংকট। জানি না এই কঠিনতম সময় কীভাবে অতিক্রম হবে। মহামারী মানুষের মন চিন্তা চেতনায় আনছে পরিবর্তন। তবুও মানুষ চাইলে অসাধ্য সাধন হয়। আমেরিকানরা হু কেয়ারস জাতি। কেউ কাউকে তোয়াক্কা করে না। ভোট দিতে তাদের আগ্রহ ছিল না। এবার সবাই লাইন দিয়ে ভোট দিয়েছে। করোনা মহামারীতে ট্রাম্পের বাড়াবাড়ি, বর্ণবৈষম্য আর দাম্ভিকতার অবসান হয়েছে। জীবন যুদ্ধে পুড়তে পুড়তে নিজেকে নতুন করে জ্বালিয়েছেন বাইডেন। তেরো শতকের বিখ্যাত মুসলিম কবি জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি বলেছেন, ‘মোমবাতি হওয়া সহজ কাজ নয়। আলো দেওয়ার জন্য প্রথমে নিজেকেই পুড়তে হয়। ’ রুমির আরেকটি লাইন আছে, ‘সিংহকে তখনই সুদর্শন দেখায় যখন সে খাবারের খোঁজে শিকারে বেরোয়। ’ শুধু মুখে গণতন্ত্রের কথা বললে হবে না। আচরণ, কার্যক্রমে চরিত্রে গণতন্ত্রের লেবাস থাকতে হবে। ১৮৬৪ সালে আমেরিকার গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন আব্রাহাম লিংকন। এবার জো বাইডেন জয়ী হয়ে আমেরিকাকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন। এই নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বেশি খুশির কোনো কারণ নেই। ডেমোক্র্যাটদের একটি সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা থাকে। এই এজেন্ডার বাইরে তারা যায় না। যেতে পারে না। কালোদের প্রিয় মানুষ বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট আর জো বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালেই বাংলাদেশ জিএসপি হারিয়েছিল। জানি না এবার কী হারাব। ডেমোক্র্যাটরা সব সময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিপক্ষে, মানবাধিকার, আইনের শাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের পক্ষে। তাই অতি উৎসাহী হয়ে লাভ নেই। বেশি খুশি সবার জন্য ভালো নাও হতে পারে।

এই জগতে সব কাজের ভালোমন্দ আছে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছাত্র থাকাকালে একবার বাড়িতে গেলেন। দেখলেন গ্রামের বিধবা নারীরা ভয়াবহ দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। ব্যথিত হয়ে কলকাতা ফিরে বিধবা নারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন ঈশ্বরচন্দ্র। ব্যস আর যায় কোথায়। ধর্মবিদরা তাঁর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল।

ঈশ্বরচন্দ্র বুঝলেন, ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা নিয়েই তাদের সঙ্গে লড়তে হবে। তিনি তাই করলেন। শুরু করলেন পড়া। দেখলেন ধর্মে পরিষ্কারভাবে বিধবা বিয়ের কথা রয়েছে। শাস্ত্রীয় প্রমাণ নিয়ে তিনি দাঁড়ালেন বিধবা নারীদের পক্ষে। বেদে পরিষ্কারভাবে রয়েছে, ‘হে নারী! মৃত পতির শোকে অচল হয়ে লাভ কী বাস্তব জীবনে ফিরে এসো। পুনরায় তোমার পাণি গ্রহণকারী পতির সঙ্গে তোমার আবার পতিত্ব তৈরি হবে। ’ বিদ্যাসাগর নতুন ভাবনায় কাজ শুরু করলেন। থাকলেন সত্য ও সুন্দরের পক্ষে। আজ এত বছর পর বিশ্ব নানামুখী সামাজিক, রাজনৈতিক জটিলতা মোকাবিলা করছে। হিংসা-বিদ্বেষ সবকিছু গ্রাস করে নিয়েছে। কঠিনতম এই সময়ে মনে পড়ছে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের একটি চিঠির কথা। নিজের সন্তানের শিক্ষককে তিনি চিঠিটি লেখেন।

চিঠিতে আব্রাহাম লিংকন লিখেছিলেন-  “মাননীয় মহোদয়, আমার পুত্রকে জ্ঞান অর্জনের জন্য আপনার কাছে পাঠালাম। তাকে মানুষ হিসাবে গড়ে তুলবেন এটাই আপনার কাছে বিশেষ দাবি। আমার পুত্রকে অবশ্যই শেখাবেন-সব মানুষই ন্যায়পরায়ণ নয়, সব মানুষই সত্যনিষ্ঠ নয়। তাকে আরও শেখাবেন, প্রত্যেক খারাপ লোকের মাঝেও একজন বীর থাকতে পারে। প্রত্যেক স্বার্থবান রাজনীতিকের মাঝেও একজন নিঃস্বার্থ নেতা থাকেন। তাকে শেখাবেন পাঁচটি ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চেয়ে উপার্জিত একটি ডলার অনেক মূল্যবান। এও শেখাবেন, কীভাবে পরাজয় মেনে নিতে হয় এবং কীভাবে বিজয় উল্লাস উপভোগ করতে হয়। হিংসা থেকে দূরে থাকার শিক্ষাও তাকে দেবেন। যদি পারেন নীরব হাসির গোপন সৌন্দর্য তাকে শেখাবেন। সে যেন আগেভাগে বুঝতে পারে, যারা পীড়নকারী তাদের খুব সহজে কাবু করা যায়। বইয়ের মাঝে কী রহস্য আছে তাও তাকে বুঝতে শেখাবেন। আমার পুত্রকে বলবেন, বিদ্যালয়ে নকল করে পাস করার চেয়ে অকৃতকার্য হওয়া অনেক বেশি সম্মানজনক। নিজের ওপর তার যেন সুমহান আস্থা থাকে। এমনকি সবাই যদি সেটাকে ভুল মনে করে। তাকে শেখাবেন, ভদ্রলোকের প্রতি ভদ্র আচরণ করতে, কঠোরদের প্রতি কঠোর হতে। আমার পুত্র যেন এ শক্তি পায়- হুজুগে মাতাল জনতার পদাঙ্ক অনুসরণ না করার। সে যেন সবার কথা শোনে এবং সত্যের পর্দায় ছেঁকে যেন ভালোটাই  শুধু গ্রহণ করে। দুঃখের মাঝে কীভাবে হাসতে হয়, আবার কান্নার মাঝে লজ্জা নেই এ কথা বুঝাতে শেখাবেন। নির্মম নির্দয় যারা তাদের ঘৃণা করতে শেখাবেন। আর সাবধান করবেন অতিরিক্ত আরাম আয়েশ থেকে। আমার পুত্রের প্রতি সদয় আচরণ করবেন, কিন্তু সোহাগ করবেন না। কেননা আগুনে পুড়ে ইস্পাত খাটি হয়। আমার সন্তানের যেন অধৈর্য হওয়ার সাহস না থাকে, থাকে সাহসী হওয়ার ধৈর্য জানাবেন। শেখাবেন, নিজের প্রতি তার যেন সুমহান আস্থা থাকে, আর তখনই তার আস্থা থাকবে মানব জাতির প্রতি। ”

এত বছর পর আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি? আমাদের জগৎ সংসারের অনেক কিছু এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। অসাম্প্রদায়িকতা, মানবতা, সততা, নিষ্ঠা হারিয়ে গেছে। চন্দন কাঠ পুড়ে ছাই হলে কোনো মূল্য থাকে না। বিভাজনের রাজনীতি ভালো কিছু দেয় না। তারপরও আশাবাদ ছাড়া যাবে না। থাকতে হবে বাস্তবতার সঙ্গে। সত্যিকারের দক্ষ, মেধাবী রাজনীতিবিদের কোনো বিকল্প নেই। সততা, নিষ্ঠা আসমান থেকে আসবে না। অতীত দেখা আছে সবার।  ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে হারানোর পর মনে হলো করোনাকালে অনেক উচ্চতর প্রজন্মকে হারাচ্ছি। সমাজে কমে যাচ্ছে ব্যক্তিত্ববান মানুষের সংখ্যা।

ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আয়ের বড় অংশই দান করতেন। সবাই দান করতে পারেন না। সবাই মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন না।  মানুষের জন্য কাজ করার মানসিক শক্তিসম্পন্নদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সমাজের জন্য কাজ করা মানুষের সংখ্যা এখন অনেক কম। অর্থ বিত্ত থাকলেই হয় না। মন থাকতে হয়। রাজশাহীর একজন খুকি আপা দিনভর পত্রিকা বিক্রি করে জীবন চালান। উপার্জিত অর্থের বড় অংশই দান করেন। একজন খুকি আপা চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন, এই জীবন ক্ষণস্থায়ী।  দুই দিনের দুনিয়াতে যে কোনো অবস্থানে থেকে মানুষের পক্ষে দাঁড়ানো যায়। মানবতার পক্ষে কাজ করা যায়।  অকারণে লড়াই আর প্রতিহিংসা ছড়িয়ে কোনো লাভ নেই।
 
লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।