ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

মেট্রোরেল নির্মাণে অত্যাধিক খরচের অভিযোগ বিএনপির

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২২
মেট্রোরেল নির্মাণে অত্যাধিক খরচের অভিযোগ বিএনপির

ঢাকা: ভারতের ৮ শহরের মেট্রোরেল নির্মাণ ব্যয়ের তুলনায় বাংলাদেশের কয়েকগুণ বেশি খরচ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। শনিবার(৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এ অভিযোগ করেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মেট্রোরেল নির্মাণকারী ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কস্ট অব কনস্ট্রাকটিং মেট্রোরেল ইন ইন্ডিয়া ভার্সেস ঢাকা মেট্রো!’ র্শীষক এক বিশ্লেষণে ভারতের ৮টি শহরের সঙ্গে ঢাকার মেট্রোরেল নির্মাণ ব্যয়ের তুলনা করা হয়। এতে দেখা গেছে, ভারতের বিভিন্ন শহরে মেট্রোরেল নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় ৪ থেকে ৬ কোটি ডলার। অথচ ২০১৭-২৩ সালে ঢাকার উত্তরা থেকে কমলাপুর ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি খরচ হচ্ছে ২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

তিনি বলেন, ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে মেট্রোরেল (দ্বিতীয় পর্যায়) নির্মাণ প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৪ সালে। ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোরেলের ১৩ দশমকি ৭৯ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড ৬১টি স্টেশনের মধ্যে ১২টি মাটির নিচে। এতে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়ছে ৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। মেট্রোরেলটির একটি অংশ ২০১৮ সালে শেষ হয়েছে ও বাকি অংশ ২০২৩ সালে শেষ হবে।

জয়পুরে মেট্রোর প্রথম পর্বের কাজ শুরু করা হয় ২০১০ সালে। ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোরেলের দুই দশমিক ৭৮ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড। আর ১১টি স্টেশনের ৩টি মাটির নিচে। মাত্র ৫০ কোটি ডলারে নির্মাণ শেষে ২০১৪ সালে তা উদ্বোধন করা হয়। এতে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়ছে ৪ কোটি ১৭ লাখ ডলার। এর দ্বিতীয় পর্বের কাজ শুরু করা হয় ২০১৬ সালে। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোরেলের প্রায় ৬ কিলোমিটার মাটির নিচে। আর ২০টি স্টেশনের ৫টি ভূ-গর্ভস্থ। এতে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় হচ্ছে ৪ কোটি ২৫ লাখ ডলার।

চেন্নাইয়ে মেট্রোরেল নির্মাণ শুরু হয় ২০০৯ সালে। ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোর ২৪ কিলোমিটারই আন্ডারগ্রাউন্ড। আর ৩৪টি স্টেশনের ২০টি মাটির নিচে। ২০১৫ সালে আংশিক উদ্বোধনকৃত এ মেট্রোর পুরোটা ২০১৬ সালে চালু হয়। এর বড় অংশ আন্ডারগ্রাউন্ড হলেও এটি নির্মাণে ব্যয় হয় ২৪৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়ে ৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার।

হায়দ্রাবাদ মেট্রোর নির্মাণ শুরু হয় ২০১২ সালে। ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোর নির্মাণ শেষে ২০১৭ সালে উদ্বোধন করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ২৭৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়ছে ৩ দশমিক ৮১ কোটি ডলার। আর নাভি মুম্বাই মেট্রোরেল নির্মাণ শুরু করা হয় ২০১১ সালে। ২০১৮ সালে এটি উদ্বোধন করা হয়েছে। ২৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রো নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে মাত্র ৬৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ কিলোমিটার প্রতি ব্যয় হচ্ছে ২ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। এটি ভারতের সবচেয়ে কম ব্যয়ের মেট্রো।

প্রিন্স আরও বলেন, ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ লক্ষ্ণৌ মেট্রো নির্মাণ শুরু করা হয়েছে ২০১৪ সালে। এর প্রায় ১০ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড। আর ৩৪ স্টেশনের ১০টি মাটির নিচে। ২০১৭ সালে উদ্বোধনকৃত মেট্রোটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২০৫ কোটি ডলার। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ৫ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।

আহমেদাবাদ মেট্রোর নির্মাণ শুরু হয় ২০১৫ সালে। ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোর ৬ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড। এতে ব্যয় হচ্ছে ১৮২ কোটি ডলার। ফলে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় হবে ৫ কোটি ছয় লাখ ডলার। এছাড়া নাগপুর মেট্রোর নির্মাণও শুরু হয়েছে একই বছর। আগামী বছর এর একটি অংশ উদ্বোধনের কথা রয়েছে। ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোলাইনটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৪০ কোটি ডলার। এতে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়বে ৩ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। কেবল ভারত নয়, ‘২০১৩-১৯ সালের মধ্যে নির্মিত ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার নর্থ-সাউথ মেট্রোরেলের প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১১-২০২১ সালের মধ্যে নির্মিত ভিয়েতনামের হ্যানয় শহরে লাইন-২-এ প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। ২০১৫-২০ সালে নির্মিত পাকিস্তানের লাহোর অরেঞ্জ মেট্রোরেলের নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি খরচ ৬ কোটি ৬১ লাখ ডলার।

বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, ঢাকার মেট্রোরেলের অস্বাভাবিকভাবে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। যা পার্শ্ববর্তী দেশের মেট্রোরেলের ভাড়া থেকে  দুই থেকে পাঁচগুণ বেশি। ঢাকার বাস ভাড়া থেকেও দুই/তিন গুণ বেশি। যা দুর্নীতিবাজ আওয়ামী সরকারের কারণে চরম অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত জনসাধারণের আয়ত্ত্বের বাইরে। মেট্রোরেল আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘন করে মেট্রোরেলের ভাড়া সর্বনিম্ন ২০ থেকে ১০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। ঢাকা মেট্রারেলের সর্বনিম্ন ভাড়া দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই ও লাহোরের ভাড়ার দ্বিগুণ এবং কলকাতার চেয়ে তিনগুণ বেশি। ঢাকার ২০ কিলোমিটারের ভাড়া কলকাতার চারগুণ, নয়াদিল্লি, মুম্বাই ও চেন্নাইয়ের তিনগুণ এবং লাহোরের পাঁচগুণ বেশি।

তিনি বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রাজধানীবাসীকে অবরুদ্ধ রেখে মেট্রোরেলের আংশিক উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ আকাশচুম্বি ব্যয়ের এই মেগা প্রকল্প নিয়ে নিশিরাতের সরকার সীমাহীন অহমিকা আর কথিত কৃতিত্বের আনন্দে ভাসছে। তারা কোটি কোটি টাকার প্রচার মহাযজ্ঞে ঢেকে দিতে চাচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আর প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে ৩-৪ গুন বেশি খরচ করা মেট্রোরেল প্রকল্প নিয়ে ওঠা দুর্নীতি আর লুটপাটের অভিযোগ।

এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, কেবল মেট্রোরেল নয়, দুর্নীতির কারণে সড়ক ও রেলপথ নির্মাণের বাংলাদেশের খরচ উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, চীন-ভারতের চেয়ে যে বহুগুণ বেশি তা বহুল আলোচিত বিষয়। এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ইউরোপে ব্যয় হয় ৩০ কোটি টাকার মতো, চীন-ভারতে ১০-১৩ কোটি টাকা৷ সেখানে বাংলাদেশে ব্যয় হয় ৭০-১২০ কোটি টাকা। রেলপথ নির্মাণের ক্ষেত্রেও হিসেবটা এর চেয়েও বেশি। মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয়ের পরিমাণ অস্বাভাবিক হওয়ার নেপথ্যে যে দুর্নীতি, লুটপাট, কমিশন বাণিজ্য তা সর্বজন জানেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) অ্যাড. আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য (দফতরে সংযুক্ত) মো. আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২২
এমএইচ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।