ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বিএনপির মহাসমাবেশে যুক্ত হচ্ছে জামায়াত!

ইফফাত শরীফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২৩
বিএনপির মহাসমাবেশে যুক্ত হচ্ছে জামায়াত!

ঢাকা: রাজধানীতে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। আগামী শনিবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকায় দলটির ডাকা এ কর্মসূচিতে তাদের সাবেক জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী যুক্ত হতে পারে বলে আভাস মিলেছে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানিয়েছেন, শুধু জামায়াত নয়, সমমনা অন্যান্য ইসলামী দলগুলোও এ কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারে। জামায়াতের যোগদানের ব্যাপারে তিনি অবশ্য সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, জামায়াতের আমিরসহ নেতাকর্মী, আলেম ওলামাদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ২৮ অক্টোবর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত। দলটি ঘোষণা দিলেও এ কর্মসূচি পালনে পুলিশের অনুমতি এখনও মেলেনি।

২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ‘লগি-বৈঠার’ সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত কর্মীদের স্মরণে প্রতিবছর বিক্ষোভ সমাবেশ করতো জামায়াত। এবারই প্রথম এই দিনে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে মহাসমাবেশ করার উদ্যোগ নিয়েছে।  

একই দিন বিএনপিও মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের এদিনকার মহাসমাবেশে ‘চমক’ হিসেবে জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো থাকছে কিনা তা নিয়ে রাজনৈতিক ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে; হচ্ছে নানা জল্পনা-কল্পনা।  

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত ছিল বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গী। পরে ২০ দল ভেঙে যায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র আড়াই মাস আগে বিএনপির সঙ্গে অন্যান্য দলের যুগপৎ আন্দোলনে ফের যুক্ত হয় জামায়াত।

বিএনপির এবারের ‘চূড়ান্ত’ আন্দোলনের সঙ্গে জামায়াত সম্পৃক্ত হতে যাচ্ছে বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন দলটির ঢাকা মহানগরের এক দায়িত্বশীল নেতা। তিনি বলেন, মাঝখানে বিএনপির সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল জামায়াতের। তবে দুই দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সব ঠিক করা হয়েছে। সামনের দিনগুলোয় বিএনপির সঙ্গে সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতও আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পৃক্ত হবে।

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াত যুক্ত যাচ্ছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই, আমি জানি না। আমরা কিছু বলতে পারবো না।

তবে ইসলামী দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত হতে পারে বলে মনে করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি বলেন, ইসলামী দলগুলো এলেও আসতে পারে। এটা তাদের ইচ্ছা।  

জানা গেছে, ২৮ অক্টোবর সরকারও নিজের অবস্থান জানান দিতে রাজপথে থাকবে। সরকার ও বিরোধী—দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে রাজনৈতিক মাঠে ‘আগুন লাগতে পারে’ বলেও অনেকে ধারণা করছেন।

ইসলামী দলগুলোর অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, যদি বিএনপি-জামায়াত এক হয়- তারা রাজপথে সহিংসতা চালাবে। সরকার পক্ষ থেকে বিএনপির কর্মসূচিতে এখন পর্যন্ত কোনো আপত্তি জানানো হয়নি। কিন্তু বিএনপির দাবি, তাদের সমাবেশকে বাধা দিতে প্রশাসন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করছে।  

জামায়াতের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন
জানা গেছে, জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে প্রশাসন কঠোর নীতি অনুসরণ করছে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাশকতা-সহিংসতায় অভিযুক্ত দলটির কর্মসূচি পালনে অনুমতির বাধ্যবাধকতার কথা বলেছেন।

জামায়াতের সমাবেশের অনুমতি প্রসঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জামায়াতের পার্থক্য রয়েছে। অন্য রাজনৈতিক দল যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত নয়। জামায়াতের নিবন্ধন ইতোমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের অনুমতি ছাড়াই যদি তারা সভা-সমাবেশ করতে চায়, সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জামায়াতের পক্ষ থেকে পুলিশের এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০২৩
ইএসএস/এমএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।