ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ নিয়েই আসছে নতুন বছর

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩
নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ নিয়েই আসছে নতুন বছর

ঢাকা: বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে আরও একটি বছর অতিক্রম করলো আওয়ামী লীগ সরকার। টানা তিন মেয়াদের সরকারের শেষ বছরও এটি।

আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালে নির্বাচন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংকটের মধ্য দিয়ে পার হওয়া এ বছরের পুরোটা জুড়েই দলটির বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচি দিয়েছে বিরোধীরা। আন্দোলন, সরকারের পদক্ষেপ, আসন্ন নির্বাচনের আলোচনা-সমালোচনাও ছিল শিরোনামে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বছর জুড়েই দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের চাপে থাকতে হয়েছে সরকারকে। আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সারা বছরই ধারাবাহিক বিভিন্ন কর্মসূচি দিতে থাকে বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের সমমনা ও সহযোগী দলগুলো। তবে সংবিধান অনুযায়ী সরকারকে ক্ষমতায় রেখেই নির্বাচন করার অবস্থানে অনড় থেকেই অগ্রসর হয় আওয়ামী লীগ ৷ বিএনপির আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তৎপর থাকে৷

আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত দেশে যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আওয়ামী লীগও সারা বছর রাজপথে ছিল। দলীয় ঘোষণার পর সারা দেশেই বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে শান্তি সমাবেশ নামে পাল্টা কর্মসূচি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির যেকোনো প্রচেষ্টা দমনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় সরকারের আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী।

তবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, হতাহতের ঘটনাও ঘটে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বিএনপিসহ দলটির সমমনারা আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। এ দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশে বিএনপি ও আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এক পুলিশ সদস্য প্রাণ হারান; আহত হন বহু সাংবাদিক। পরে তাদের একজনের মৃত্যু হয়।

নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ সমমনারা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। হরতাল, অবরোধের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারও তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।

অভ্যন্তরীণ এ সংকটের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দিক থেকেও কোনো কোনো দেশের একের পর এক বিভিন্ন তৎপরতা ও পদক্ষেপ এবং নির্বাচন পরবর্তী আরও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিভিন্নভাবে আলোচিত হচ্ছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে ওই সব দেশের পক্ষ থেকে৷ এর ব্যতিক্রম হলে ভিসানীতি কার্যকর, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এ সব চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি এ বছর সরকারের একটি বড় অর্জন ছিল- পারমাণবিক জ্বালানি ইউরেনিয়াম দেশে আনা। গত ৫ অক্টোবর দেশের প্রথম পারমাণবিক প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম রাশিয়া থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝে নেয় বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ। এদিন থেকে ইউরেনিয়ামের মালিকানা আসে বাংলাদেশের হাতে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে ইউরেনিয়াম ব্যবহারকারী ৩৩তম দেশ হয় বাংলাদেশ। ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভার্চুয়ালি অংশ নেন। এছাড়া এ বছরই উদ্বোধন হয় কর্ণফুলী নদীতে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল। বাংলাদেশে এটাই প্রথম কোনো নদীর পানির নিচ দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য তৈরি করা টানেল।

বছরের শেষ দিকে নির্বাচনের সব ইস্যু আরও জোরালো হয়ে উঠে। কোন দল নির্বাচনে আসবে, কোন দল আসবে না- এ নিয়ে ব্যাপক ‘পেন ফাইট’ হয় খবরের কাগজে। শেষ মুহূর্তে বিএনপিসহ কিছু দল নির্বাচন বর্জন করে। তবে অধিকাংশ দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনী প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৭টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে।

ভোট বর্জন করা বিএনপিসহ ১৬টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন প্রতিহত করার কথাও বলেছে। এ লক্ষ্যে কঠোর অবস্থানে দলগুলো যাবে, এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কা করছে আইন রক্ষাকারী সব বাহিনী।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ঠিক রাখতে বার বার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন। গত ২৮ ডিসেম্বর কয়েকটি জেলার নির্বাচনী জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেহেতু নির্বাচন নিয়ে জাতীয়, আন্তর্জাতিকভাবে নানা রকম চক্রান্ত হচ্ছে- নির্বাচনের পরিবেশটা যেন সুন্দর হয়, উৎসবমুখর হয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ হয়। অনুরোধ থাকবে- শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আপনারা বজায় রাখবেন।

আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন। আভ্যন্তরীণ সংকটের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্রসহ কোনো কোনো দেশের যে পদক্ষেপগুলোর কথা কথা উঠছে, কার্যকর হলে সংকট আরও বাড়বে। পুরো অবস্থান মোকাবিলার করার প্রত্যয় নিয়েই নতুন বছর শুরু করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন জোট সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩
এসকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।