ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের আবেদন শুনানি চলছে।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়েছে।
এর আগে রোববার বিচারপতি মো: আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এটিএম আজহারের রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন। ওইদিন রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য উত্থাপন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান বলেন, শুনানি করতে তাদের আপত্তি নেই। এটিএম আজহারের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আপিল বিভাগ রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করেছেন। আমরা আশা করি রিভিউ আবেদন মঞ্জুর হবে এবং এটিএম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দেওয়া হবে।
এর আগে ৯ জানুয়ারি রিভিউ আবেদনের বিষয়টি উত্থাপন করেন সিনিয়র আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেছিলেন, তিনি ১০ বছর ধরে মৃত্যুর সেলে আছেন। জরুরি ভিত্তিতে উনার রিভিউ আবেদন শুনানি করা দরকার।
২০২০ সালের ১৯ জুলাই খালাস চেয়ে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদন করেছিলেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। ২৩ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১৪টি যুক্তি দেখিয়ে উনার খালাস চাওয়া হয়।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর এটিএম আজহারুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি মো: নূরুজ্জামান।
ওইদিন আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন প্রবীণ আইনজীবী মরহুম খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন (মৃত) অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আপিল বিভাগের রায়ে এটিএম আজহারে বিরুদ্ধে আনা ২, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। এছাড়া ৫ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর কারাদণ্ড থেকে খালাস দেয়া হয়। এছাড়া ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে ৫ বছর কারাদণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়।
রায় ঘোষণার পর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে সরাসরি অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার কোনো অভিযোগ ছিল না। তিনি কখনো ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি তখন ১৮ বছরের যুবক এবং কলেজের ছাত্র ছিলেন। সব অপরাধ পাকিস্তানি আর্মিরা করেছে।
তিনি বলেন, আইনের বিধান অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড দেয়া সঠিক হয়েছে কি না সেটাই আমরা রিভিউ আবেদনের মাধ্যমে আদালতে তুলে ধরব।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর এটিএম আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি ১১৩ যুক্তিতে এটিএম আজহারকে নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়ে আপিল করেন তার আইনজীবীরা। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ এ মামলার আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এটিএম আজহারুল ইসলাম কারাগারে আছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫
টিএ/এমএম