ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

বিদায়ী বছরে যশোরে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১০৮ খুন

মিলন রহমান,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
বিদায়ী বছরে যশোরে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১০৮ খুন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

যশোর: বিদায়ী ২০১৩ সালে যশোরে প্রায় দুই ডজন আলোচিত হত্যাকাণ্ডসহ ১০৮টি খুনের ঘটনা ঘটেছে।

এর মধ্যে দুই ইউপি চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, পৌর যুবলীগ নেতা, ছাত্রলীগের সভাপতি, ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি, জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি, শিশু ও স্কুলছাত্র রয়েছে।



তবে, এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন, সনাক্ত করাসহ অধিকাংশ আসামিই গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) রেশমা শারমিন।

সূত্র মতে, আলোচিত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে বেনাপোলের বারোপোতায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে আওয়ামী লীগ নেতা পুটখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হত্যাকাণ্ড। ২৪ মার্চ  বিকেলে ছেলের সামনে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

৯ সেপ্টেম্বর খুন হন যশোরের চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিল্লুর রহমান মিন্টু। ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই দিনে দুপুরে তাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

২৭ অক্টোবর হরতালে বিএনপির জামায়াত ক্যাডাররা কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে অভয়নগর পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন শিমুলকে। ২৯ অক্টোবর শহরের আরএনরোডে দুর্বৃত্তদের হাতে গুলিবিদ্ধ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

২০ নভেম্বর ঝিকরগাছার লাউজানী এলাকায় দুর্বৃত্তরা মুক্তিপণের দাবিতে মিরাজ নামে এক স্কুলছাত্রকে অপহরণের পর হত্যা করে। ২৭ নভেম্বর উপশহর এলাকায় নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হন ইউনিয়ন জামায়াত সেক্রেটারি আব্দুল হাই সিদ্দিকী বুলবুল।

৯ ডিসেম্বর শহরের সিভিল কোর্ট মোড়ে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কবির হোসেন পলাশ। ২৫ ডিসেম্বর জেলা কৃষকলীগের সহ-সভাপতি মনিরামপুরের বাসিন্দা শফি কামলাকে বিএনপি জামায়াত ক্যাডাররা কুপিয়ে হত্যা করে।

একইদিন ঝিকরগাছার গদখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ না করায় দলীয় সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন। এর আগে ২১ ডিসেম্বর শহরের বেজপাড়ায় সতীনের হাতে খুন হন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর জবেদা খানম।  

এছাড়া আরও বিদায়ী বছরে আরও কয়েকটি মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এর মধ্যে ৪ জানুয়ারি শহরের এমএম আলী রোডে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন মোটর পার্টস ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন।

২৯ জানুয়ারি বসুন্দিয়া এলাকায় পরিকল্পিতভাবে দুর্বৃত্তরা ট্রাক চালক শহিদুল ইসলাম ও  হেলপার সোহনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ট্রাকে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখে।  

এছাড়া এ মাসে পুলিশ কনস্টেবল জহুরুল হকের মৃত্যু ছিল আরও একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। ৩১ জানুয়ারি মনিরামপুরে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।

১০ ফেব্রুয়ারি বসুন্দিয়ায় স্ত্রীর পরকীয়ার কারণে খুন হন কামরুল ইসলাম। ১৫ ফেব্রুয়ারি অভয়নগরের শংকরপাশায় বোমা হামলায় খুন হন হ্যান্ডলিং শ্রমিক নেতা আলমগীর হোসেন।

একইদিন ঝিকরগাছার দিকদানায় খুন হন মোটরসাইকেল চালক রফিকুল ইসলাম। ২৪ ফেব্রুয়ারি সদরের ইছাপুরে পুত্রবধূর সভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন বৃদ্ধা লিলি বেগম।

২৩ ফেব্রুয়ারি চুড়ামনকাটির সাবেক মেম্বার আলতাফ হোসেন দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন।

৭ মার্চ সদর উপজেলার শুড়ো গ্রামে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন শরবিন্দ মজুমদার নামে এক কৃষক। ৯ মার্চ শহরের বকচর এলাকায় মুক্তিপণের দাবিতে অপহৃত শিশুপুত্র সানিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে প্রতিবেশি এক নারী।

১০ মার্চ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এজেডএম ফিরোজের ছেলে আবু শাহরিয়ার অর্ণব। ১২ মার্চ শহরের ষষ্ঠীতলায় যৌতুকের দাবিতে রানী দে নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

২৩ মার্চ মনিরামপুরের জয়পুর গ্রামে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ইটভাটা শ্রমিক আনিসুর রহমান।

১১ এপ্রিল সদরের ভায়না ধানঘাটা গ্রামে ডাকাতের হাতে খুন হন স্বপন হোসেন নামে এক ব্যক্তি। ১৫ এপ্রিল অভয়নগরে রুবেল ওরফে পটল নামে এক যুবককে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে।

২১ এপ্রিল চৌগাছার কাদবিলায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে খুন হন মোমিন ও রহিম নামে দু’ব্যক্তি। ২৬ এপ্রিল সদর উপজেলার সাহাপুরে ছেলের হাতে খুন হন আইয়ুব হোসেন নামে এক ব্যক্তি। ২৯ এপ্রিল যশোর শহরের টালিখোলায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হন যুবলীগ কর্মী সরোয়ার হোসেন টুলু।

৩ মে অভয়নগরের একটি বাসা থেকে আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ উদ্দিনের ৪ খণ্ড লাশ উদ্ধার করা হয়। ২১ মে যশোর শহরের নীলগঞ্জ তাঁতীপাড়ায় গৃহবধূ লাবনী খাতুনকে তার স্বামী শ্বাসরোধে হত্যা করে।

২০ মে যশোরের আলোচিত পুলিশের কথিত সোর্স ক্লিক শামিম চৌগাছার বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড় এলাকায় খুন হন। ৩১ মে ঝিকরগাছার নায়ড়ায় অন্তসত্তা গৃহবধূ হালিমা খাতুন হত্যার শিকার হন।

২৮ জুলাই সদরের পতেঙ্গালী গ্রামে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন ইজিবাইক চালক হাফিজুর। ২৯ জুলাই অভয়নগরের পাইকপাড়া বিলে খুন হন হাফিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। ১৮ আগস্ট ঝিকরগাছার মধুখালীতে ভাইয়ের হাতে খুন হন জাকির হোসেন।

২০ আগস্ট উপশহরে স্বামীর হাতে খুন হন বকুল খাতুন। ৪ সেপ্টেম্বর চৌগাছার বুন্দলিতলায় বিএনপির সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন নারায়নপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম। ২৩ সেপ্টেম্বর একই উপজেলার জগন্নাথপুরে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন যুবদল কর্মী আতিয়ার রহমান।

৩ অক্টোবর সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা এলাকায় খুন হন আনোয়ারা বেগম নামে এক নারী। ৩ নভেম্বর বেনাপোলে রুবেল নামে এক কিশোর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। ৯ নভেম্বর সদরের পাগলাদাহে আক্তার আলী চুন্নু দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন।

১৪ নভেম্বর সিকিরহাট খেয়াঘাটে নিহত হন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। ২১ নভেম্বর মনিরামপুরের চিনোটোলায় দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হন যুবদল নেতা আশিকুর রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
সম্পাদনা: প্রভাষ চৌধুরী, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।