ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

তারেক খালাস, বিশ্বজিৎ ও বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রায়

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
তারেক খালাস, বিশ্বজিৎ ও বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রায়

ঢাকা: ঢাকার নিম্ন আদালত ২০১৩ সালে সারা বছরই আলোচনায় ছিল। আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ মামলার রায়, বিশ্বজিত হত্যা মামলার ফাঁসির রায় ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান খালাস পাওয়ার ঘটনাগুলো ছিল উল্লেখযোগ্য।



এ ছাড়াও সারা বছর ধরে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার, রিমান্ড, মাহমুদুর রহমানকে স্কাইপে কেলেঙ্কারীর মামলায় গ্রেফতার, ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের ৬১ জনের মারা যাওয়ার তথ্য প্রকাশ করে অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমানকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে।

BGB-Harun-পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলার রায়:
বছরের শেষ দিকে গত ৫ নভেম্বর দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয়, কলঙ্কজনক এবং সর্ববৃহৎ এ হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

রায়ে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২৬২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর আগে দেশের ইতিহাসে কোনো মামলায় এত বিপুল সংখ্যক আসামিকে সাজা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্তদের মধ্যে আছেন, বিডিআরের তৎকালীন উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) তৌহিদুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন খান, মির্জা হাবিব আব্দুর রহিম, আব্দুল জলিল, মেজর গোফরান মল্লিক, ল্যান্সনায়েক শাহ আলম, হাবিলদার আবু তাহের, সিপাহী সেলিম রেজা, শাহ আলম, আলতাফ হোসেন, সাজ্জাদ হোসেন, কাজল, আব্দুল মবিন, বেসামরিক সদস্য জাকির হোসেন, আজিম পাটওয়ারী, রেজাউল করিম, রফিকুল ইসলাম, মিজানুর রহমান।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন পিন্টু ও আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলী রয়েছেন।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। ইতিহাসের ঘৃণ্যতম নৃশংসতম এ হত্যাকাণ্ডের ৪ বছর ৮ মাস পর মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।


তারেক রহমান খালাস:
গত ১৭ নভেম্বর বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অর্থপাচার-সংক্রান্ত  মামলায় বেকসুর খালাস দেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোতাহার হোসেন। একই রায়ে তারেকের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৪০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড করেন আদালত।

তারেক রহমানের দুর্নীতির বিষয়টি গত ৫ বছর ফলাও করে প্রচার করতো মহাজোট সরকার। এ রায়ের ফলে তাদের মুখ বন্ধ হয়ে যায়।

বিএনপি নেতাদের কারাবাস:
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাস কাটে কাশিমপুর কারাগারে। পল্টনের একটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি জামিন পান।

এছাড়াও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাইকে কোন না কোন সময় গ্রেফতার করে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

বর্তমানে কারাগারে আছেন,  বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় ছাত্র সহ-বিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার।

Court-Photo-2বিশ্বজি‍ৎ হত্যা মামলা:
বহুল আলোচিত দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা করা হয় গত ১৮ ডিসেম্বর।   ওই রায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মীর মৃত্যুদণ্ড এবং অপর ১৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন ঢাকার চার নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবিএম নিজামুল হক।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নিরীহ দর্জি বিশ্বজি‍ৎ দাসকে নির্মমভাবে চাপতির কোপ ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
 
স্কাইপে মামলা:
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক চৌধুরী ও ব্রাসেলসে বসবাসরত আইনজ্ঞ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপি হ্যাকিংয়ের অভিযোগে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর মামলা হয়।

এ মামলায় গত ১১ এপ্রিল গ্রেফতার হন আমারদেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মামলায় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার কার্যালয় থেকে গ্রেফতার হন মাহমুদুর।

সেই থেকে মাহমুদুর রহমান কারাগারে আটক আছেন। এখন পর্যন্ত তিনি আট মামলায় গ্রেফতার থাকলেও জামিনের আবেদন করেননি।

অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান:
গত ৫ মে হেফাজতের সমাবেশ নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে ১০ আগস্ট আদিলুর রহমানকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

তার জামিন শুনানিতে ব্রিটিশ হাইকমিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মান, ফ্রান্স, নেপাল দূতাবাসের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকতেন।

সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে তিনি জামিন না পেলে উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করলে গত ৮ অক্টোবর বিচারপতি বোরহানউদ্দিন ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ৬ মাসের জামিন দিলে দুদিন পরে কারামুক্ত হন আদিলুর।
 
জামিন পাওয়ার পর গত ২১ অক্টেবর আদালতে হাজিরা দিতে এসে সাংবাদিকদের তিনি জানান, অধিকার কোনো মিথ্যা তথ্য দেয়নি। আদালতেই তা প্রমাণ হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
সম্পাদনা: এম জে ফেরদৌস, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।