ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

রোনালদোর সাফল্য, নেইমারের ইতিহাস ও ইতালির কান্নার বছর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
রোনালদোর সাফল্য, নেইমারের ইতিহাস ও ইতালির কান্নার বছর রোনালদো, জিয়ানলুইজি বুফন ও নেইমার

মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেলো আরও একটি বছর, ২০১৭। আসছে নতুন ২০১৮ সাল, ফুটবল বিশ্বকাপের বছর। আন্তর্জাতিক ফুটবলে কম আলোচনার জন্ম দেয়নি শেষ হতে যাওয়া বছরটি। বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকে ইতালির বাদ পড়াটা ছিল সবচেয়ে বড় অঘটন। দলবদলে নেইমারের ইতিহাস গড়াও বছরের আলোচিত ঘটনার একটি। পাশাপাশি বিশ্ব ফুটবলের বছরটা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোময় বললেও ভুল হবে না। দলীয় সাফল্য কিংবা ব্যক্তিগত অর্জন, সবদিক থেকেই রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগিজ সুপারস্টারের জয়জয়কার।

বছর যেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর
এ বছরটাকে বারবার হয়তো পেতে চাইবেন সিআর সেভেন। জানুয়ারিতে ফিফা বর্ষসেরার পরস্কার (দ্য বেস্ট ফিফা মেন’স প্লেয়ার) জিতে শুরু করেন ২০১৭।

তার নৈপুণ্যে লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগের পর উয়েফা ও স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপা ঘরে তোলে রিয়াল মাদ্রিদ। চলতি মাসে তার একমাত্র গোলেই ব্যাক-টু-ব্যাক ক্লাব বিশ্বকাপ জেতার নজির স্থাপন করে জিনেদিন জিদানের দল। নিজেদের ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক বছরে পাঁচ শিরোপার রেকর্ড গড়ে স্প্যানিশ জায়ান্ট লস ব্লাঙ্কসরা।

এতোসব প্রাপ্তির পুরস্কারস্বরূপ টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফিফা ‘দ্য বেস্ট’ ও আরেক মর্যাদাপূর্ণ একক খেতাব ব্যালন ডি’অর নিজের করে নেন ৩২ বছর বয়সী রোনালদো। নাম লেখান নতুন উচ্চতায়। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন বিস্ময় লিওনেল মেসির সমান পাঁচটি ব্যালন ডি’অর ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন পর্তুগিজ আইকন। যেটি দিয়ে থাকে বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’।

প্রথম ফুটবলার হিসেবে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় শত গোলের রেকর্ডের পর শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগেও গোলের সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন রোনালদো। তার হাত ধরে ইতিহাস গড়ে রিয়ালও। এসি মিলানের পর টানা দু’বার ইউরোপ সেরার মুকুট ঘরে তোলে গ্যালাকটিকোরা। টুর্নামেন্টের নাম বদলে চ্যাম্পিয়নস লিগ হওয়ার পর যা প্রথম দৃষ্টান্ত।

রোনালদোর কথা আসছে আর মেসির কথা আসবে না তা কী করে হয়! বার্সার হয়ে ২০১৭ সালে একটি শিরোপার দেখাই পেয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। দলগত অর্জন কেবল কোপা দেল রে। চলতি মৌসুমে অবশ্য দুর্দান্ত গতিতে ছুটছে কাতালানরা।

ফিফা দ্য বেস্ট, ব্যালন ডি’অর দৌড়ে দর্শক হয়ে থাকলেও শীর্ষ ইউরোপিয়ান লিগের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হিসেবে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু পুনরুদ্ধার করেছেন বার্সার প্রাণভোমরা। স্পর্শ করেছেন রোনালদোকে (চারবার)।

অবশ্য গত বছরের মতো জাতীয় দলের জার্সিতে এ বছর সাফল্য পাননি রোনালদো। ইউরো জিতে কনফেডারেশন্স কাপে জায়গা করে নিলেও সেমিফাইনালে কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন চিলির কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে পর্তুগিজদের।

বাছাইপর্বে ছিটকে কাঁদলো ইতালি
আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বের টিকিট কাটতে ব্যর্থদের তালিকায় বড় অক্ষরে লেখা থাকবে ইতালির নাম। ৬০ বছর পর এই প্রথম বিশ্বকাপ দেখবে না আজ্জুরিদের। গ্রুপ পর্বে স্পেনের পেছনে থেকে দ্বিতীয় হয়ে সুইডেনের বিপক্ষে দুই লেগের প্লে-অফ বাধা অতিক্রম করতে পারেনি চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। অশ্রুসিক্ত চোখে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে দেন সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফন। অব্যাহতি নিতে হয় কোচ জামপিয়েরো ভেনতুরাকে।

বাছাইপর্বের নাটকীয়তা অবশ্য এখানেই শেষ নয়। বাদ পড়ার হতাশায় ডোবে আরিয়েন রোবেনের নেদারল্যান্ডস, আলেক্সিস সানচেজের চিলি, গ্যারেথ বেলের ওয়েলস। এই তারকাদের অনুপস্থিতি রাশিয়া বিশ্বকাপ রঙ হারিয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গতবারের রানার্সআপদের ঘিরেও ছিল একই শঙ্কা। শেষ ম্যাচে এসে ইকুয়েডরের মাঠে হ্যাটট্রিক করে আর্জেন্টিনাকে বলতে গেলে উদ্ধার করেন মেসি।

অন্যদিকে, এবার প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে ওঠে পানামা। গত ইউরোতে চমক দেখানো আইসল্যান্ডও ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছে। ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ খেলতে মুখিয়ে আছে মিশর।

নেইমারের পিএসজি রেকর্ড
মেসি, রোনালদো, নেইমার— সময়ের সেরা তিন ফুটবলার। তৃতীয়জন দলবদলের সব রেকর্ড চুরমার করে গোটা ফুটবল বিশ্বেই হইচই ফেলে দেন এ বছর। গত আগস্টে বার্সেলোনা অধ্যায়ের (২০১৩-১৭) ইতি টেনে প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে (পিএসজি) পাড়ি জমান ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন। তাকে কিনতে ফরাসি দলটিকে গুণতে হয় ২২২ মিলিয়ন ইউরো (২২ কোটি ২০ লাখ ইউরো)।

আগের বছর ফরাসি তারকা পল পগবা ১০ কোটি ৫০ লাখ ইউরোতে (১০৫ মিলিয়ন ইউরো) জুভেন্টাস ছেড়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে গিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ের আসনে বসেন। তার দ্বিগুণেরও বেশি ট্রান্সফার ফি’তে দলবদলের বাজারের নতুন অধিপতি ২৫ বছর বয়সী নেইমার। মেসি-রোনালদো অধ্যায়ের শেষে যাকে ভাবা হচ্ছে ‘আগামীর বিশ্বসেরা’। বর্ষসেরার লড়াইয়ে এখনই যে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন। ২০১৫ সালের পর এবারও ব্যালন ডি’অর শেষ করেছেন তৃতীয় হয়ে।

এছাড়া, এ বছর বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব শেষ করে গ্রুপ পর্বের ড্র দেখেছে বিশ্ববাসী। দেখেছে কনফেডারেশন্স কাপে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির জয়। আগামী ফুটবল বিশ্বকাপের বছর হিসেবে ২০১৮ আরও বড় বড় ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
এমআরএম/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।