ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

রাজনৈতিক চাপমুক্ত ছিলো আওয়ামী লীগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৭
রাজনৈতিক চাপমুক্ত ছিলো আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক চাপমুক্ত ছিলো আওয়ামী লীগ

ঢাকা: রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দিক থেকে বড় ধরনের কোনো আন্দোলন বা চাপ ছাড়াই আরও একটি বছর পার করলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে এ বছর অনুষ্ঠিত দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনেই পরাজিত হয়েছে দলটি।

পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ শিক্ষাকে সরকার স্বীকৃতি দেওয়ায় রাজনৈতিকভাবে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় ক্ষমতাসীন দলকে। বিএনপির দিক থেকে বারবার নির্দলীয় সহায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হলেও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের সিদ্ধান্তেই আওয়ামী লীগ অনড় থাকে।

বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনার সম্ভাবনাও নাকচ করে দেয়।

এছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বছরজুড়েই দলীয় কার্যক্রমে নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। দলের সদস্য সংগ্রহসহ সারা দেশে সভা-সমাবেশ ও বর্ধিত সভা করেছে আওয়ামী লীগ। সিটি করপোরেশন নির্বাচন।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়

গত ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। এর আগে গত ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর কাছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকেও পরাজয় মেনে নিতে হয়।

দুটি নির্বাচনই সুষ্ঠু হওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্বস্তি প্রকাশ করলেও দলীয় প্রার্থীর পরাজয় দলটির জন্য অস্বস্তিকর হয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের আগের বছর অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ এসব নির্বাচনে পরাজয় দলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। কুমিল্লায় পরাজয়ের কারণ হিসেবে আভ্যন্তরীণ কোন্দলকে চিহ্নিত করেছেন তারা।

সর্বশেষ রংপুরের পরাজয়ে ভোটের ব্যবধান সন্তোষজনক মনে করছেন না দলটির নেতারা। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় প্রার্থীর এতো কম ভোট পারওয়ার বিষয়টি অনুসন্ধান করার নির্দেশ দিয়েছেন।

বিএনপির সঙ্গে সংলাপ সহায়ক সরকার নাকচ 

বছরজুড়েই আলোচনায় ছিলো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির সঙ্গে সংলাপ ও তাদের নির্বাচকালীন সহায়ক সরকারের দাবি। ঘুরে ফিরে বিভিন্ন সময় বিএনপি এ দাবি অব্যাহত রেখেছে। বার বারই বিএনপির এই দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন করার ব্যাপারে পূর্বের কঠোর অবস্থানই অব্যাহত রেখেছে দলটি।

সংবিধানের বাইরে গিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বা এ বিষয় নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনায় যাবে না বলে বার বার স্পষ্ট করেছেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতারা। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে বলেও তারা স্পষ্ট করেছেন।

সর্বশেষ গত ৭ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কোন দল নির্বাচন করবে, কোন দল করবে না এটা তাদের সিদ্ধান্ত। যারা সত্যি নির্বাচন করতে চায় তারা নির্বাচনে আসবে। আর যাদের সিদ্ধান্ত নির্বাচন করবে না, তারা করবে না।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপইসির সংলাপে ১১ দফা 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপের অংশ হিসেবে গত ১৮ অক্টোবর মতবিনিময় করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই সংলাপে দলটির পক্ষ থেকে ১১ দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রধান প্রস্তাব ছিলো নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও নির্বাচনী এলাকার সীমানা পরিবর্তন না করা।

এছাড়া আরেকটি অন্যতম প্রস্তাব ছিলো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের জন্য ইভিএম চালু করা। তবে এসব প্রস্তাবের মধ্যে সেনা মোতায়েন না করার প্রস্তাবটি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত ছিলো। বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের জোর দাবি জানালেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকেই দায়িত্বে রাখার প্রস্তাব করে আওয়ামী লীগ।

সংলাপে বিএনপি নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনের নির্বাচনের দাবি জানায়। আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ না থাকলেও ইসির সঙ্গে আলোচনায় আওয়ামী লীগের নেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন এগুলো মীমাংসিত বিষয়। গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুয়ায়ী হয়েছে, আগামী নির্বাচনও সে অনুযায়ী হবে।

সাংগঠনিক কার্যক্রমে নির্বাচনী প্রস্তুতির গুরুত্ব 

নির্বাচনকে সামনে রেখে এ বছর সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির বিভিন্ন উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো দলের সদস্য পদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করা যা চলমান রয়েছে। গত ২০ মে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ সদস্য পদ নবায়নের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্ধোধন করেন।

নতুন ভোটার ও নারী ভোটারদের সদস্য করার টার্গেট নিয়ে মাঠে নামে আওয়ামী লীগ। সদস্য সংগ্রহ অভিযানকে জোরালো করতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরুর সময় উপস্থিত ছিলেন। বছরজুড়েই জেলা, উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ে বর্ধিত সভা, সমাবেশ ও জনসভার আয়োজন করা হয়। এসব কর্মসূচিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।

নির্বাচনের আগে তৃণমূল পর্যায়ে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে ফেলার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০ মে দলের বর্ধিত সভায় জেলার নেতাদের এ ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশ দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে জেলার নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকও শুরু করেন। তিনি কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, সাতক্ষীরা, নীলফামারিসহ ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি জেলার নেতাদের ডেকে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। যদিও এ প্রক্রিয়াটি আর বেশি দূর আগায়নি।

কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি নিয়ে সমালোচনা

কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রিকে উচ্চ শিক্ষার স্বীকৃতি প্রদান নিয়ে নানামুখী সমালোচনার মধ্যে পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গত ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমমান দেওয়ার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কওমি মাদ্রাসার আলেমদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই স্বীকৃতির ঘোষণা দেন তিনি।

এ সময় অনুষ্ঠানে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা ও নানা গুঞ্জন ওঠে। অভিযোগ ওঠে ধর্মীয় রাজনীতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের আপসের।

সমালোচনার মুখে গত ১৩ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, আমরা তো হেফাজতের আদর্শের সঙ্গে কোনো কম্প্রোমাইজ করিনি। হেফাজত মূল বিষয় নয়। মূল বিষয় সরকার কাওমি মাদ্রাসার উচ্চ শিক্ষার স্বীকৃতি দিয়েছে। এখানে ধর্মীয় রাজনীতির সঙ্গে আপসের অভিযোগ হাস্যকর।

বড় ধরনের রাজনৈতিক চাপ ছিলো না

বছরের শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের দিক থেকে বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক চাপ মোকাবিলা করতে হয়নি আওয়ামী লীগকে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন বছর পূর্তিতে ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র রক্ষা দিবস উদযাপনের কর্মসূচি নেয় আওয়ামী লীগ। একই দিন গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের ঘোষণা দেয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গন কিছুটা উত্তপ্ত হয়। তবে পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় সমাবেশ করা থেকে সরে দাঁড়ায় বিএনপি।

এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি তোলা হলেও দলটি কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। সারা বছরই বক্তব্য ও পাল্টা বক্তব্যের মধ্যেই আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক আক্রমণ সীমাবদ্ধ ছিলো।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৭
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।