ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

জলাবদ্ধতা-চিকুনগুনিয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ দুই সিটি কর্পোরেশন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
জলাবদ্ধতা-চিকুনগুনিয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ দুই সিটি কর্পোরেশন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন

ঢাকা: বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা-সমালোচনায় ছিলো ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। গৃহকর, চিকুনগুনিয়া, জলাবদ্ধাতা নিয়ে বছরজুড়েই উত্তাপ ছিল দুই নগর ভবনে। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের অসুস্থতা ও মৃত্যু নিয়েও আলোচনায় কমতি ছিল না।

দখলমুক্ত ফুটপাতডিএনসিসির ফটুপাত দখল মুক্তকরণ
বছরের শুরুতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সকল ফুটপাত দলখমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে অভিযানে নামেন মেয়র আনিসুল হক। এই অভিযানে অনেক প্রভাবশালী মহল বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দখলদারদের একটি তালিকা দিয়ে বলেছিলেন, এরা সবাই দলের লোক আমাদের চেনাজানা। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমার কেউ চেনাজানা নেই, আমার চেনাজানা সাধারণ মানুষ। দখলদারদের ‘বড়লোক হকার’ বলে টিপ্পনি কাটেন মেয়র। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন দূতাবাস থেকে শুরু করে বড় বড় শপিং মলের দখলে থাকা ফুটপাত দখলমুক্ত করেন তিনি। এতে নগরবাসীর মাঝে স্বস্তি ফেরে, প্রশংসিত হন মেয়র।

ফুটপাত হকারমুক্ত করার ঘোষণায় উত্তপ্ত নগরভবন
বছরের শুরুতে ফুটপাত হকারমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে চরম বিপাকে পড়েন মেয়র সাঈদ খোকন। এজন্য মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল থেকে মেয়র সাঈদ খোকনের কড়া সমালোচনা হয়। পুনর্বাসন না করে ফুটপাত দখনমুক্ত করার ঘোষণার প্রতিবাদে নগর ভবন ঘেরাওয়ের হুমকি দেন হকাররা।

যুদ্ধাপরাধী মোনায়েম খানের বাড়ি দখলমুক্ত
স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও যা পারেনি বিভিন্ন সময় ক্ষমতায় থাকা সরকারগুলো। সেই কাজ করে দেখিয়েছেন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। রাজধানীর ভিআইপি এলাকাখ্যাত বনানীর মতো জায়গা থেকে যুদ্ধাপরাধী মোনায়েম খানের বাড়ি বাজেয়াপ্ত করে নগরবাসীর নজরে আসেন মেয়র। এডিস মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশনের তৎপরতাচিকুনগুনিয়ায় বিপর্যন্ত নগরপিতারা
বছরের কয়েক মাস যেতে না যেতেই এডিস মশাবাহী চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। প্রথম দিকে এটাকে আমলেই নেননি দুই মেয়র। দিন দিন যখন চিকুনগুনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে সেইসঙ্গে হতে থাকে তীব্র সমালোচনা তখন আদাজল খেয়ে মাঠে নামেন দুই নগরপিতা। মশা মারতে গিয়ে উল্টো কথার চালে আটকে যান স্মার্ট উত্তরের মেয়র আনিসুল হক। মুখ ফসকে তিনি বলে ফেলেন, কারো ঘরে গিয়ে মশা মারতে পারবেন না, কারো জন্য মশারি টাঙাতে পারবেন না। তখন নগরবাসী তার সমালোচনা করতে একটুও ছাড় দেয়নি। একদিন পরে অবশ্য মেয়র তার কথার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান। তবে অন্যদিকে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ঘোষণা দিয়ে বাহবা কুড়ান নগরবাসীর।

পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ
পুরনো লক্কর-ঝক্কর গাড়ি তুলে দিয়ে রাজধানীতে এক ছাতার নিচে সকল গণপরিবহণ নামানোর চিন্তা করে তাক লাগিয়ে মেয়র আনিসুল হক। এ নিয়ে পরিবহন মালিক, ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কয়েক দফা মিটিং করেন তিনি। কথা দিয়েছিলেন ২০১৭ সালেই রাজধানীতে কিছু নতুন গাড়ি নামাবেন। শেষ অবদি সেই উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখেনি তার প্রয়াণের কারণে।

জলাবদ্ধতায় নাকাল নগরবাসী, ধরাশায়ী দুই মেয়র
বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি, এই অবস্থা অবশ্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু যখন সেই জলাবদ্ধতা কয়েক ঘণ্টা অতিবাহিত হয়ে কয়েক দিনে রূপ নেয় তখন তো নগরপিতাদের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। এবার অবশ্য অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যে কারণে জলাবদ্ধা ছিল পুরো বর্ষাজুড়েই। ‘রাজধানী এখন একটি নদী’, ‘উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছেন মেয়র’- এজাতীয় নানা কটূক্তি শুনতে হয় দুই মেয়রকে। শেষ অবদি মেয়রেরা সব সেবা সংস্থার প্রধানদের নিয়ে বৈঠককালে ওয়াসাকে দায়ী করেন জলাবদ্ধতার জন্য। আগামীতে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির একটি উপায়ও বের হয়ে আসে ওই বৈঠকে। মেয়র সাঈদ খোকনকে হাঁটু পানিতে নেমে জলাবদ্ধতায় মানুষের দুর্ভোগের সামিল হতে দেখা যায়। রাজধানীজুড়ে জলাবদ্ধতায় নাকাল নগরবাসীগৃহকর বাড়ানোর সিদ্ধান্তে সমালোচনা
বছরের মাঝামাঝি নগরবাসীর জন্য নতুন আপদ হয়ে আসে গৃহকর। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা হয় সংসদেও। গৃহকর বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে নগরবাসী মানববন্ধন করে। অবশ্য মেয়র জানিয়েছিলেন গৃহকর বাড়ানো হয়নি, সমন্বয় করা হচ্ছে মাত্রা। শেষ পর্যন্ত বছরের একবারে শেষ সময় গৃহকর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন মেয়র। গৃহকর বাড়ানোর এই সময় অবশ্য উত্তরের মেয়র অসুস্থ ছিলেন। ফলে ডিএনসিসিতে কোনো উত্তাপ ছিল না।

মেয়রের অসুস্থতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন
অসুস্থ নগরী সুস্থ করার কঠিন সংগ্রামে থাকা মেয়র আনিসুল হক নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। শারীরিক চেক আপের জন্য ২৯ জুলাই সপরিবারে লন্ডন যান মেয়র। লন্ডন যাওয়ার কয়েক দিনের মাথায় কষ্টের মাঝে সুখের সংবাদ আসে মেয়রের নানা হওয়ার মধ্য দিয়ে। তবে সেই সুসংবাদ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কেননা সেখানে ১৩ আগস্ট হাসপাতলে চেকআপ করাতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলন আনিসুল হক। এরপর থেকেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন বাইরে থাকায় নানা মহল থেকে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। কেউ কেউ বলতে শুরু করেন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে তিনি আর ফিরবেন না বলেই অসুস্থতার নাটক করছেন। সরকার পতনের ফাঁদ পাতার অভিযোগ তোলা হয় ঢাকা উত্তরের প্রথম মেয়রের বিরুদ্ধে। মেয়র আনিসুল হকের কুলখানিসবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে মেয়র
বছরের শুরুতে কাজের মাধ্যমে মানুষের মনের মণি কোঠায় ঠাঁই পান মেয়র আনিসুল হক। মেয়রের জনপ্রিয়তা কতটা ছিল তা তার মৃত্যুর পরের ঘটনাগুলোর দিকে চোখ বুলালেই অনুমেয়। মেয়রের প্রস্থানের সঙ্গে সঙ্গে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেন শোকবইয়ে পরিণত হয়। দল-মত নির্বিশেষে সবাই মেয়র আনিসুল হকের জন্য আক্ষেপ করতে থাকেন। যদি ৫ বছর পূর্ণ করতে পারতেন তাহলে আসলেই ঢাকার চেহারা বদলে যেত। যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন স্মার্ট সবুজ ঢাকা গড়ার। সেই স্বপ্নে নগরবাসীও আসায় বুক বেঁধেছিল নোংরা শহর থেকেই সত্যিই ঢাকা হবে পরিচ্ছন্ন নগরী। গত ৩০ নভেম্বর রাতে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আনিসুল হক। এখন প্রশ্ন উঠছে তার সেই স্বপ্ন আদৌ পূরণ হবে কি?

বিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র
ঢাকা মহানগরীকে নতুন মাত্রায় সাজাতে সিটি কর্পোরেশনকে উত্তর-দক্ষিণ দুই ভাগে ভাগ করা হয়। বিভক্তির পর ২০১৫ সালের ৬ মে ডিএনসিসি’র নগরপিতা হন মেয়র আনিসুল হক। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম এক বছরের মধ্যেই ১১৮ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করেছেন, ৪৫১টি রাস্তা উন্নয়নের কাজ করেছেন, ১৪৮ কিলোমিটার ড্রেনে সংস্কার করেছেন। ৬৮ কিলোমিটার ফুটপাতের উন্নয়নও করেছেন প্রথম এক বছরেই।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
এসএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।