ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

উপাচার্য প্যানেল, শিক্ষক রাজনীতি ও ডাকসু ছিল আলোচনায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৭
উপাচার্য প্যানেল, শিক্ষক রাজনীতি ও ডাকসু ছিল আলোচনায় বছরজুড়ে ঢাবির আলোচিত ঘটনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: কালের অমোঘ নিয়মে বিদায় নিচ্ছে ২০১৭। এবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন, শিক্ষক রাজনীতি ও ডাকসু ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এছাড়া সমাবর্তন, ভর্তি জালিয়াতি, প্রশাসনে পরিবর্তন, বিভিন্ন আন্দোলনে বছরজুড়ে ঢাবি ছিল আলোচনায়। ২০১৭ সালে ঢাবির দশটি আলোচিত ঘটনা নিয়ে সাজানো বাংলানিউজের সালতামামি।

নতুন উপাচার্য

২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি ২৭ তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এরপর ২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় তিনি দায়িত্ব নেন, যার মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট।

দীর্ঘদিন তিনি এই পদে থাকাকালে শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তাঁর রিরুদ্ধে।

এসব অনিয়মের অভিযোগ মাথায়  নিয়ে তৃতীয় মেয়াদে উপাচার্য নির্বাচন করতে চাইলে সরকার সমর্থক নীল দলের শিক্ষকদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ২৯ আগস্ট বিতর্কিত সিনেট অধিবেশনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দীন ও থিওরিটিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটেশনাল কেমেস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আজিজকে উপাচার্য প্যানেলে মনোনীত করা হয়। কিন্তু নীল দলের একটি অংশ এই প্যনেল নির্বাচনের যৌক্তিকতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যায়। পরে সবকিছু উপলব্ধি করে ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানকে নিয়োগ দেয় সরকার।

৬ সেপ্টেম্বর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি । ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের এই অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

প্রশাসনে পরিবর্তন

নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান দায়িত্ব নেয়ার পর  ১৯ অক্টোবর প্রক্টর হিসেবে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীকে নিয়োগ দেন। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৬ বছর পর পূর্ণাঙ্গ প্রক্টর পেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এছাড়া নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৫ সহকারী প্রক্টরকে। তারা হলেন ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ কে লুৎফুল কবির, মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল রানা, লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু হোসেন মুহম্মদ আহসান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আবদুর রহিম ও সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনিস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ মাইনউদ্দিন মোল্লা।

এছাড়া সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রথম নারী ডিন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।

অস্থির শিক্ষক-রাজনীতি

এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে দেশ ও জাতির জন্য যেমন সুনাম কুড়িয়েছে, তেমনি অস্থির শিক্ষক রাজনীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ বিরোধে হাতাহাতি, মারামারি, একের বিরুদ্ধে অন্যের মামলা, জিডি, পাল্টপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল একদা ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ নামে খ্যাত এই বিদ্যাপীঠ।

এক বছরে দুই সমাবর্তন
একই বছরে ঢাবি দু’বার সমাবর্তনের আয়োজন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ৪ মার্চ। এতে সমাবর্তন-বক্তা ড. অমিত চাকমাকে ডক্টরেট অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ৪ জুলাই বিশেষ সমাবর্তনে আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার মহাপরিচালক ইউকিয়া আমানোকে  ডক্টর অব ল’জ ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

গবেষণায় সাফল্য

এবছর বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বঙ্গবন্ধু দ্বীপের গবেষণায় সাফল্য লাভ করেছেন। খুলনার মংলা উপজেলার দুবলার চর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু দ্বীপ নিয়ে গবেষণায় সাফল্য লাভ করে ঢাবির ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের  অধ্যাপক মো. শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে ২৯ সদস্যের টিম।

১০ বর্গ কি. মি. আয়তনের এই দ্বীপটি সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যা নিয়ে এর আগে কেউ গবেষণা করেনি। ঢাবির গবেষকদের রিপোর্ট নিয়ে সরকার এখন কাজ করছে।

এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছেন।

ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া সিনেট ও উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন

ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া ২২ মে সিনেট ও ২৯ আগস্ট উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকদের হাতাহাতির মতো ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীরা মুখে কালো কাপড় পরে, কালো ব্যাজ ধারণ করে মানববন্ধন করেছেন।

ভর্তি জালিয়াতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে শতভাগ সুষ্ঠু বলে দাবি করা হলেও জালিয়াতি করে সুযোগ বাগিয়ে নিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। ২০১৭-১৮ সেশনেও ডিভাইস জালিয়াতি করে ভর্তি হয়েছেন অনেকে। ২০১৫ ও ১৬ সালে ‘ঘ’ ইউনিটে জালিয়াতি করে চান্স পেয়েছেন ৫০ এরও অধিক শিক্ষার্থী। ভর্তি জালিয়াতি নিয়ে বাংলানিউজ প্রথম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করলে কর্তৃপক্ষ অনেকের ভর্তি বাতিল করে।    

ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে গতি

দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন হচ্ছে না। নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আন্দোলন হলেও কোনো কাজ হয়নি। কিন্তু ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতির ঘোষণা, ওয়ালিদ আশরাফের অনশন, কর্তৃপক্ষের দৃঢ় আশ্বাসে এ আন্দোলন বেশ গতি পেয়েছে।

ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উন্মুক্ত আলোচনা, উন্মুক্ত বিতর্ক, উন্মুক্ত সংলাপ, প্রতিবাদী গানের আয়োজন, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, মুখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ প্রদর্শন প্রভৃতি বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেন। সর্বশেষ ২৫ নভেম্বর ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে অনশন করেন সান্ধ্যকালীন কোর্সের ছাত্র ওয়ালিদ আশরাফ। পরে উপাচার্যের আশ্বাসে তিনি অনশন ভঙ্গ করেন।

আলোচনায় ঢাবি ছাত্রলীগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি তৎপর ছিল ছাত্রলীগ। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করলেও নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য তীব্র সমালোচিত হয়েছে সংগঠনটি। কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা, খাবারের মান উন্নয়ন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি গ্রহণ, রাত ১২ টার পর মিছিল বন্ধ করা ও  বই বিতরণের মতো কর্মসূচির  জন্য প্রশংসিত হয় তারা। পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থী ও নিজ দলের কর্মীদের মারধর করা , হল ছাড়া করা ও চারুকলায় হামলার জন্য সমালোচিত হয় তারা।

অধিভুক্ত কলেজের আন্দোলন

২০১৭ সালে ঢাবির অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের আন্দোলন ছিল উল্লেখযোগ্য। পরীক্ষার রুটিন প্রকাশের দাবিতে আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলে চোখ হারান তিতুমীর কলেজের ছাত্র ছিদ্দিকুর রহমান। এছাড়া ঢাবির পূর্ণাঙ্গ ইনিস্টিটিউট করার দাবিতে বেশ কয়েকবার সড়ক অবরোধ করেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ছাত্রীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৭
এসকেবি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।