ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

ফিরে দেখা ২০১৯

খুলনায় আলোচিত ছিল সেসব ঘটনা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯
খুলনায় আলোচিত ছিল সেসব ঘটনা ছবি: সংগৃহীত

খুলনা: সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। এ প্রবাদবাক্যটিকে আবারও যথার্থ প্রমাণ করে চলে যাচ্ছে আরও একটি বছর। এবছর খুলনায় ঘটে গেছে অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা, রয়েছে বেশকিছু প্রাপ্তিও। তেমনই কিছু ঘটনা নিয়ে এবারের আয়োজন-

পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলন
বছরের শুরু থেকেই খুলনায় শুরু হয় পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলন। থেমে থেমে এ আন্দোলন বছরের শেষ পর্যন্ত গড়ায়।

১১ দফা দাবিতে খুলনাঞ্চলের নয়টি পাটকলের শ্রমিকদের আন্দোলন এখনো অব্যাহত চলছে। দাবি আদায়ে রাজপথ-রেলপথ অবরোধ, সভা-সমাবেশ, ভুখা মিছিল, বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচিতে উত্তাল ছিল শিল্পনগরী। এসব কর্মসূচি শেষে গত ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় পাটকল শ্রমিকদের আমরণ গণঅনশন। এতে অসুস্থ হয়ে ১২ ডিসেম্বর প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক আব্দুস সাত্তার (৫৫) মারা যান।

পাঁচ যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
১০ ফেব্রুয়ারি খুলনার রূপসা সেতু বাইপাস সড়কে একটি প্রাইভেটকারের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের সংঘর্ষে গোপালগঞ্জ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের পাঁচ নেতা নিহত হন। হঠাৎ এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি সামনে এসে পড়লে তাকে বাঁচাতে গিয়ে ট্রাকটি প্রাইভেটকারের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকারে থাকা পাঁচজন প্রাণ হারান।

হত্যাকাণ্ড
২০১৯ সালে খুলনায় কয়েকটি লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে ছিল হাবিবুর রহমান নামে এক যুবকের ১২ টুকরো মরদেহ উদ্ধার। ৭ মার্চ নগরীর শেরেবাংলা রোড থেকে পলিথিনে মোড়ানো হাবিবুর রহমানের মরদেহের একটি অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ফারাজীপাড়া রোডে ড্রেনের পাশ থেকে দু’টি ব্যাগে থাকা মাথা, দুই হাতসহ টুকরো টুকরো অংশ উদ্ধার করা হয়।

২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশ্যে মহিদুল ইসলাম (২৭) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। দুপুর পৌনে ৩টার দিকে নগরের সোনাডাঙ্গা এলাকার মজিদ সরণির সুজুকি শোরুমের সামনে ওই ঘটনা ঘটে।

২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামে ব্রাইট সি ফুডসের কম্পিউটার অপারেটর সারজিল ইসলাম সংগ্রামকে (২৮) লোকসম্মুখে গুপ্তি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

ধর্ষণ
১৮ জুন নগরীর ইসলামিয়া কলেজে সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ করেন কলেজের নৈশপ্রহরী মহিবুল্লাহ (৫০)। ২৮ জুন ইসলামিয়া কলেজের অদূরে বয়রা শ্মশানঘাট আল আকসা এলাকায় ১৩ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করা হয়। ২৯ জুন শনিবার পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে শান্ত নামে এক বখাটের ধর্ষণের শিকার হয় এক কিশোরী। পুলিশ এজাহারভুক্ত ১০ আসামির মধ্যে ছয়জনকে গ্রেফতার করে। এছাড়া খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির এলএলবির (২০) এক ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে শিঞ্জন রায় (২৫) নামে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে আটক করা হয়।

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ
এ বছর খুলনার সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হচ্ছে জিআরপি থানায় এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ। ওই ঘটনাটি পুলিশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে এ খবরটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এ ঘটনায় তৎকালীন জিআরপি থানার ওসি উছমান গনি পাঠানসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের হয়েছে।

১ অক্টোবর ডুমুরিয়া থানা এলাকায় একব্যক্তিকে তুলে নিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাত সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এদের মধ্যে একজন এসআই, তিনজন এএসআই ও তিনজন কনস্টেবল। গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে বরখাস্ত আদেশ কার্যকর হয়েছে বলে জানা যায়।

নগরীর খালিশপুর থানাধীন মুজগুন্নী পার্কের সামনে থেকে এক গৃহবধূকে অপহরণের পর আবাসিক হোটেলের কক্ষে আটকে রাখার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পুলিশ সদস্য মো. মিরাজ উদ্দিনকে (৩৩) ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। মিরাজ খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি করতেন।

১৮ জুন ডুমুরিয়া উপজেলার নির্বাচনি ডিউটিতে গিয়ে দিঘলিয়া থানার এএসআই নাজমুল হকের পিস্তল ও ১২ রাউন্ড গুলি খোয়া যায়। এ ঘটনায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। অবশ্য একদিন পরেই পার্শ্ববর্তী একটি ঘের থেকে ওই অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়।

খেলার মাঠের যা কিছু
২০১৯ সালে খুলনার ক্রীড়াঙ্গনে ছিল মনে রাখার মতো বেশ কিছু সাফল্য, ছিল না পাওয়ার হতাশাও। জাতীয় ক্রিকেট লিগে খুলনা বিভাগের শিরোপা পুনরুদ্ধার, অনূর্ধ্ব-১৮ ক্রিকেটে খুলনা জেলার শিরোপা জয়, খুলনার সিনিয়র ডিভিশন ক্রিকেট মাঠে ফেরাসহ বেশ কিছু সাফল্য আছে এই বছরে। এছাড়া সংস্কারকাজে বন্ধ থাকার প্রায় পাঁচ বছর পর এপ্রিলে খেলা ফেরে খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে।

প্রতারণা
২০১৯ সালে খুলনায় মোটা অংকের মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের প্রায় হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় বেসরকারি চারটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে এহসান সোসাইটি, চলন্তিকা যুব সোসাইটি, সেফ ইসলামী গ্রুপ লিমিটেডের নাম। প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের অর্থ ফেরত না পেয়ে হাজার হাজার গ্রাহক পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে প্রায় একশ’ মামলা হলেও গ্রাহকরা অর্থ ফেরত পাননি এখনো।  

অন্যান্য
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালে। এছাড়া আধুনিক খুলনা রেলস্টেশনের যাত্রাও শুরু হয় এ বছর।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯
এমআরএম/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।