ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

একাত্তর

হানাদারমুক্ত প্রথম জেলা যশোর

সুকুমার সরকার, সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৬
হানাদারমুক্ত প্রথম জেলা যশোর

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। এ মাসেই প্রায় ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।

ঢাকা: বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। এ মাসেই প্রায় ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।

বাংলাদেশের প্রথম হানাদারমুক্ত জেলা শহর যশোর, ৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় জেলাটি। তবে দেশের অনেকস্থান মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে মুক্তাঞ্চল ছিলো।

আমাদের জাতীয় জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন ১১ ডিসেম্বর। কেবল যশোর নয়, দেশবাসীর জন্যে এই দিনটি গৌরবের। পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত বাংলাদেশের মাটিতে এ দিনে যশোর টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় বিজয় সমাবেশ।

মুক্ত বাংলার প্রথম এ জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। সমবেত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, এ মুহূর্তে আমাদের কাজ হলো যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা।

তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এদিন পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে  প্রায় জনশূন্য যশোর শহরে এসেছিলেন।
 
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জনসভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-সংসদ সদস্য ফণীভূষণ মজুমদার, রওশন আলী, মোশাররফ হোসেন, তবিবর রহমান সরদার, লেখক এম আর আকতার মুকুল ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান প্রমুখ।

জনসভায় প্রধানমন্ত্রী যশোরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ওয়ালি উল ইসলাম ও কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাঞ্চন ঘোষালকে নির্দেশ দেন, আইন শৃঙ্খলায় যেন অবনতি না ঘটে।

তাজউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, স্বাধীন দেশে ধর্ম নিয়ে আর রাজনীতি চলবে না। আর তাই জামায়াত ইসলামী, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
 
এ জনসভা যখন হয় তখন যশোরের আশপাশে যুদ্ধ চলছিলো। বিশেষত খুলনায় তখনও পাকিস্তানি সেনারা শেষ চেষ্টা হিসেবে  যুদ্ধ করছিলেন।

খুলনা হানাদারমুক্ত হয় ১৭ ডিসেম্বর। এর আগের দিন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) প্রায় ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করে।
 
জনসভা শেষে তিনি কালীবাবু নির্মিত যশোর সড়ক পথে ধরে কলকাতা যান। মুক্ত স্বদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম এ জনসভার খবর সংগ্রহের জন্য উপস্থিত ছিলেন লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক পিটার গিল, নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সিডনি এস এইচ সানবার্গ, বালটিমোর সান পত্রিকার প্রতিনিধি, ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিনিধিসহ বহু বিদেশি সাংবাদিক।

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর। সকাল ও দুপুরে পাকিস্তানের নবম ডিভিশনের সঙ্গে ভারতীয় নবম পদাতিক ও চতুর্থ মাউন্টেন ডিভিশনের প্রচণ্ড লড়াই হয়।

বিকেলেই পাক সেনা অফিসাররা বুঝে যান, যশোর দুর্গ আর কোনোভাবেই রক্ষা করা সম্ভব নয়।

বেনাপোল অঞ্চলে দায়িত্বরত লে. কর্নেল শামসকে নওয়াপাড়ার দিকে দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন ব্রিগেডিয়ার হায়াত।

আর নিজের ব্রিগেড নিয়ে রাতের আঁধারে গোপনে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে তিনি পালিয়ে যান খুলনার দিকে। ৬ ডিসেম্বর এভাবেই একাত্তরে প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা হওয়ার গৌরব অর্জন করে যশোর।
 

বাংলাদেশ সময়: ০৪০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৬
এসএস/এমএ
 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।