ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

একাত্তর

মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার পথিকৃৎ অধ্যাপক বিমল কান্তির গল্প  

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৬
মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার পথিকৃৎ অধ্যাপক বিমল কান্তির গল্প   ছবি-অনিক খান/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

স্বাধীনতা অর্জনের ২৪ বছর পরেও যে বীর প্রতীকের হদিস ছিলো না, তাকেই খুঁজে বের করেন অধ্যাপক বিমল কান্তি দে। 

ময়মনসিংহ: স্বাধীনতা অর্জনের ২৪ বছর পরেও যে বীর প্রতীকের হদিস ছিলো না, তাকেই খুঁজে বের করেন অধ্যাপক বিমল কান্তি দে।  

১৯৯৫ সালে তারামন বিবি বীর প্রতীকের সন্ধান দেওয়া এ অধ্যাপক ময়মনসিংহের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণার স্বীকৃত এক পথিকৃৎ।

 

অধ্যাপক বিমলের এ কাজ সেই সময়ে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গবেষণায় তার প্রভাব পড়ে ময়মনসিংহে।  

এরপর স্থানীয় পরিসরে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রহসহ গবেষণার দিকটিকে গুরুত্ব দেন। এর আগে ময়মনসিংহে মুক্তিযুদ্ধের সমৃদ্ধ ইতিহাস ছিলো অন্ধকারে।  

মাত্র ১৪ বছর বয়সে পাকিস্তানিদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে লড়াই করা অকুতোভয় নারী মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে খুঁজে বের করার পর স্থানীয় রণাঙ্গণে ইতিহাস চর্চা ও গ্রন্থনায় গবেষণার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। এরপরেও থেমে থাকেননি এ অধ্যাপক।  

মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধানে ক্লান্তিহীন পথচলা এ মানুষটি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে নয় নম্বর সেক্টরের অন্যতম বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবদাস বিশ্বাস ওরফে খোকন নামে আরেক বীর প্রতীককেও খুঁজে বের করেন। প্রায় দুই যুগ ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছেন নিরুদ্দেশ আরেক বীর প্রতীক আব্দুল মজিদকে।  

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক বিমল কান্তি ১৯৮৬ সালে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। সেই সময় জেলা প্রশাসন ময়মনসিংহ জেলার দ্বি-শতবার্ষিকী উৎসবকে ঘিরে ‘ময়মনসিংহের জীবন ও জীবিকা’ নামের একটি গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নেয়।  

সেই সভায় অধ্যাপক বিমল কান্তি প্রস্তাব করেন, ময়মনসিংহের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি প্রবন্ধ রচনার।  

এরপর সর্বসম্মতিক্রমে অধ্যাপক বিমলকেই এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। পেশাগত জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও মাস কয়েক ময়মনসিংহের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ও বিভিন্ন জেলায় চিঠি লিখে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে লিখে ফেলেন ১০৮ পৃষ্ঠার একটি প্রবন্ধ। প্রবন্ধটির নাম দেওয়া হয় ‘বৃহত্তর ময়মনসিংহে মুক্তিযুদ্ধ-৭১’।  

বাংলায় এমএ পাস করে শিক্ষকতায় যুক্ত অধ্যাপক বিমল কান্তির জন্ম জেলার ত্রিশাল উপজেলার কাঁঠাল গ্রামে। দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজে অধ্যাপনা শেষে ১৯৯৯ সালে তিনি নেত্রকোণা সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ পদ থেকে অবসর নেন।  

ময়মনসিংহ নগরীতে স্থায়ীভাবে বসবাস করা ৭৫ বছর বয়সী এ অধ্যাপক এখনও সময় পেলে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান। তাদের মনে বপণ করতে চান মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্রের বীজ।  

অধ্যাপক বিমল জানান, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণার শুরুর দিকেই তিনি খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি গেজেট খুঁজে বের করবেন। সেই গেজেটে দেখা যায়, ৫৫ বীর প্রতীকের কোনো হদিস নেই। বীর প্রতীকপ্রাপ্তদের কারও পিতার নাম, আবার অনেকের ঠিকানা লেখা হয়নি।  

তারামন বিবিকে খুঁজে বের করার স্মৃতিচারণ করেন বাংলানিউজের কাছে। জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত এ কিংবদন্তির সন্ধানে ডাক বিভাগের মাধ্যমে চিঠি লেখেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের জামালপুর, শেরপুর ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার প্রশাসনের কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধার কাছে।  

দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ১৯৯৫ সালের দিকে সন্ধান মেলে তারামন বিবির। এরপর আরেক বীর প্রতীক বশীর আহম্মেদের সন্ধান দেন এ অধ্যাপক।  

এসব ঘটনা প্রবাহ নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করে। একই সঙ্গে তিনি হদিস দেন তারামনের ধর্ম পিতা মহিব হাবিলদার ও বীর প্রতীক, বীর উত্তম খেতাবধারী অনারারি ক্যাপ্টেন আফতাব আলীকে।

স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরেও খেতাবপ্রাপ্ত ৫৫ বীর প্রতীককে খুঁজে না পাওয়ায় আক্ষেপ ঝরে এ গবেষকের কণ্ঠে, এটা সরকারের ব্যর্থতা। তাদের খুঁজে বের করে প্রাপ্য সনদ, পদক ও ভাতা দেওয়া সময়ের দাবি।  

জীবনের গোধূলি বেলায় বয়স থামার তাগিদ দিলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে নিখোঁজ বীর প্রতীকদের খুঁজে বের করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিমল কান্তি দে। অনেক খুঁজেছেন।  

দেখতে দেখতে কেটে গেছে প্রায় দুই যুগ। কিন্তু আব্দুল মজিদ বা ভূইয়া নামের দুই বীর প্রতীকের আজও দেখা পাননি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৬
এমএএএম/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।