ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ঋণ পরিশোধে দরকার আরও তিনগুণ ঋণ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ঋণ পরিশোধে দরকার আরও তিনগুণ ঋণ

ঢাকা: চার ধরনের ঋণে দেউলিয়া হয়ে সব ধরনের ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কোম্পানি লিমিটেডের। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিষ্ঠানটি বন্ড ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ২২৪ কোটি টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

কিন্তু এই টাকা সংগ্রহ করার পরও কোম্পানি সব ঋণ পরিশোধ করে উড়োজাহাজের ফ্লাইট চালু করতে আরও দুই থেকে তিন গুণ ঋণের প্রয়োজন। ফলে এই অবস্থায় কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় শেয়ারহোল্ডার ও সংশ্লিষ্টরা।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, দেশ-বিদেশের কোম্পানটির ব্যাংক ঋণ রয়েছে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা। এরমধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ ১৭৬ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং স্বল্পমেয়াদী ঋণ রয়েছে ১১৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এই ঋণের পাশাপাশি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) পাবে প্রায় দেড়’শ কোটি টাকা।

অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা ১১টি উড়োজাহাজ সংস্কার ও সি-চেকের খরচের সঙ্গে নতুন আরও সাতটি উড়োজাহাজের খরচ যোগ হচ্ছে। এছাড়া চলতি বছরের প্রথম থেকেই বাধ্যতামূলক ছুটি কাটানো কর্মকর্তাদের বকেয়া বেতন, অনান্য পাওনা এবং অফিস ব্যয় মেটাতে প্রয়োজন অন্তত ৫শ’ থেকে ৬শ’ কোটি টাকা।

এই পাহাড় পরিমাণ ঋণের বোঝা পরিশোধ করে আবার ব্যবসা সফল করতে কোম্পানিটির প্রয়োজন বিনা সুদে এই টাকা। কিন্তু প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) এবং রাইট শেয়ার ছেড়ে ৬শ’ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার পরও দেউলিয়া হয়ে পড়েছে কোম্পানিটি। এখন কেবল বন্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করছে। আশা করা হচ্ছে, নভেম্বর মাসের মধ্যে এই টাকা সংগ্রহ করতে পারবে।

সাবির্ক বিষয়ে কোম্পানির ব্যস্থপনা পরিচালক (এমডি) ক্যাপ্টন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আগের তুলনায় কোম্পানির ঋণ অনেক কমেছে। চলতি বছরে মধ্যে উড়োজাহাজের ফ্লাইট চালু চেষ্টা করছি। ফ্লাইট চালু করলে ঋণ আস্তে-আস্তে কমে আসবে।

তিনি বলেন, বিদেশি ঋণের ৯০ শতাংশ আমরা পরিশোধ করেছি। ইসলামী ব্যাংকের যে ঋণ ছিল তা অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। অন্যদিকে, কোম্পানির নিজস্ব কার্যালয়ে বিভিন্ন সম্পদ রয়েছে। আমরা তা ব্যবহারের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি।

ঋণ পরিশোধের আগে ফ্লাইট চালু করতে দেওয়া হবে না বেবিচকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমরা বেবিচককে সবোর্চ্চ ১০ কোটি টাকা দেবো। বেবিচক যদি অনুমতি না দেয় তবে আমরা তাদের বকেয়া টাকাও পরিশোধ করতে পারবো না।

বন্ডের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে উত্তোলিত ঋণ পরিশোধ করবে না উল্লেখ করে এমডি তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী বলেন, এই টাকায় নতুন করে আনা সাতটি উড়োজাহাজের ডাউন পেমেন্টের জন্য খরচ করা হবে ১১২ কোটি টাকা।

উত্তরায় কোম্পানির নিজস্ব ৫ কাঠার জমির ওপর ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবন করা হবে। এছাড়া আধুনিক টিকিট প্রক্রিয়ার সুবিধার জন্য রিজারভেশন ফান্ড করা হবে। কিন্তু ঋণের টাকার পরিশোধ এবং বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো কর্মকর্তাদের বেতন এবং অফিস ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে কোনো পরিকল্পনার কথা বলেননি তিনি।

দেড়শ কোটি টাকা পাওনা বেবিচকের

বেবিচক কতৃর্পক্ষ ২০১৫ সাল পর্যন্ত অ্যারোনোটিক্যাল ও নন অ্যারোনেটিক্যাল এবং সারচার্জসহ ইউনাইটেডের কাছে ১০৫ কোটি টাকা পাবে। যা অক্টোবর পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকায়। অথচ এ পর্যন্ত কোম্পানিটি পরিশোধ করেছে মাত্র ২৪ কোটি টাকা।

এই টাকা পরিশোধ না করায় এখন ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। কোম্পানিটি ফ্লাইট চালু করতে বেবিচকের সঙ্গে রফা-দফা করার চেষ্টা করেছে। কিন্ত তারা পাওনা পরিশোধ না করে উড়োজাহাজের ফ্লাইট চালু করতে পারেনি। ফলে এখন বিষয়টি আদালতে গড়াচ্ছে। বেবিচক কতৃর্পক্ষ বলছে, সব টাকা পরিশোধ না করলে কোনোক্রমেই ফ্লাইট চালু করতে দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
এমএফআই/টিআই

**সোয়া ৮শ’ কোটি টাকা তুলে ইউনাইটেড এয়ার ছেড়েছেন পরিচালকরা
**ইউনাইটেড এয়ারের ঘাড়ে আরও সাত প্লেনের বোঝা 
**ইউনাইটেড এয়ারের ৬শ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক ছুটি
**৬শ’ কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে ইউনাইটেড এয়ার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।