‘শুভ কাজে সবার পাশে’ বসুন্ধরা শুভসংঘের এই স্লোগান সামনে রেখে অসচ্ছল শিক্ষার্থী ও নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য নান্দাইলের ২০ শিক্ষার্থী ও নারীকে দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন। দীর্ঘ তিন মাস সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে তাদের দেওয়া হয় এসব সেলাই মেশিন।

গত বৃহস্পতিবার(১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটায় নান্দাইল সদরে অবস্থিত সমূর্ত জাহান মহিলা কলেজ চত্বরে অসচ্ছল ও অসহায় শিক্ষার্থী এবং নারীদের মধ্যে ২০টি সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম। প্রধান অতিথি ছিলেন নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার। বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী কমিশনার ভূমি মো. ফয়জুর রহমান, নান্দাইল সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বাদল চন্দ্র দত্ত ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন মাস্টার। অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ২০ জনের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেন ইউএনও সারমিনা সাত্তার।

অসচ্ছল এসব নারীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেলাই মেশিন পেয়ে তারা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

শিউলি আক্তার জানান, বিয়ে হওয়ার পর তিনি এই কলেজে ডিগ্রিতে পড়ছেন। ইতিমধ্যে একটি সন্তান হয়েছে। তার স্বামীর উপার্জনে সংসার ঠিকমতো চলে না। তাই পড়া লেখা চালিয়ে যেতে কষ্ট হচ্ছিল। এই অবস্থায় তিনি নিজেও একটি কাজ খোঁজছিলেন। পরে বসুন্ধরা শুভ সংঘের সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নাম লিখিয়ে পোশাক তৈরি করা শিখেছেন। এখন আশা করছেন, এই সেলাই মেশিন দিয়ে পোশাক তৈরি করে উপার্জন করতে সক্ষম হবেন। সংসারের অভাব দূর হবে। সেলাই মেশিন পেয়ে স্বামীও খুশি।
রিকশা চালকের মেয়ে তামান্না আক্তার বলেন, জমজ বোনসহ তারা তিনজন। বাবা অসুস্থ্য হয়েও রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। এ অবস্থায় দুই বোন এক সঙ্গে সমূর্ত জাহান মহিলা কলেজে একাদশে পড়ছেন। এ অবস্থায় পড়ালেখা হুমকির মুখে ছিল। কোনো কূল কিনারা পাচ্ছিল না। এর মধ্যে বসুন্ধরা শুভ সংঘের সেলাই প্রশিক্ষণে ভর্তি হয়ে তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে পেয়েছেন কাঙ্কিত মেশিন। যা দিয়ে আয় করে এখন দুই বোনের পড়ালেখার পাশপাশি সংসারে সাহায্য করতে পারবেন।

বিএনপি নেতা ও স্থানীয় সমুর্ত জাহান মহিলা কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন মাস্টার বলেন,ঘটনাটি দেখে আমি আর্শ্চয্য হয়েছি। এটাও কি সম্ভব? আমার দেখা বসুন্ধরাই সর্বশ্রেষ্ট কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তারাই এখন মানবিকতার কাজ করছে। অন্যদের দেখে শিক্ষা নেওয়া উচিত।

নান্দাইল সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বাদল চন্দ্র দত্ত বলেন, আমরা শুধু নিতে জানি। দিতে জানিনা। কিন্তু বসুন্ধরা শুভসংঘ বিনা অর্থে প্রশিক্ষণ শেষে যেভাবে উন্নত মানের সেলাই মেশিন দিয়েছে তা অকল্পনীয়। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।
নান্দাইল উপজেলা সরকারী কমিশনার ভূমি মো. ফয়জুর রহমান বলেন, অসহায় এসব শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ শেষে বিনা মূল্যে সেলাই মেশিন দেওয়া হলো। তারা এই মেশিনের মাধ্যমে কাপড় সেলাই করে যা উপার্জন করবেন, সেটি কিছুটা হলেও সংসারের চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে।

সমূর্ত জাহান মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বলেন,বসুন্ধরা যা করেছে তা আমার কাছে অতুলনীয়। আমার কলেজের অসহায় হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানদের খোঁজে বের করে পড়ালেখার পাশপাশি প্রশিক্ষণ শেষে যেভাবে যোগ্যতার ভিত্তিতে বিনা অর্থে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়েছে তা অনেক বড় একটা পাওনা। আমি বসুন্ধরাকে এই জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার বলেন, আমি পাশের উপজেলা থেকে সদ্য বদলি হয়ে এসেছি। আগের কর্মস্থলেও বসুন্ধরা শুভসংঘের কর্মতৎপরতা দেখেছি। তারা মানবতার কাজে কাজ করে। তাদের পাশে থাকতে পেরে আমি অনেক ভাগ্যবতি। এই উপজেলাতে এসে একই কর্মকাণ্ড দেখে আমি অভিভূত। এখানে আমি বসুন্ধরা শুভ সংঘের সাথে কাজ করতে চাই। তিনি বলেন, যে ভাবে বসুন্ধরা অসহায়দের পাশে আছে তা দেখে অন্যরাও অনুপ্রানিত হওয়ার কথা। তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে।

উল্লেখ্য গত ২০২২ সালে উপজেলার আঁচারগাঁও ইউনিয়নের ঝাউগড়া গ্রামে প্রশিক্ষন শেষে ২০জন অসচ্ছল নারীদের মাঝে প্রথমবারের মতো সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের সবাই এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪
এমএম