ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩২, ০৬ মে ২০২৫, ০৮ জিলকদ ১৪৪৬

তারার ফুল

ক্রিস্টোফার নোলানের ‘ইন্টারস্টেলার’

পদার্থবিদ্যা আর ভালোবাসা মিলে গেলো যেখানে

বৃষ্টি শেখ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৩৮, নভেম্বর ১২, ২০১৪
পদার্থবিদ্যা আর ভালোবাসা মিলে গেলো যেখানে ‘ইন্টারস্টেলার’ ছবিতে ম্যাথু ম্যাকোনাহে ও অ্যান হ্যাথাওয়ে

হলিউডে মহাকাশযাত্রা নিয়ে মেলা ছবি তৈরি হয়েছে। এগুলো একই সঙ্গে দর্শকদের মুগ্ধ করে প্রযোজকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে এবং সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

এবার মহাকাশ নিয়ে ছবি পরিচালনা করলেন ক্রিস্টোফার নোলান। নাম ‘ইন্টারস্টেলার’। এটাই তার সবচেয়ে দীর্ঘ ছবি। এর ব্যাপ্তি ২ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট।  

undefined

 

জর্জ লুকাস, স্টিভেন স্পিলবার্গ, জেমস ক্যামেরনের মতো বিখ্যাত নির্মাতাদের মতো হলিউডে নোলানেরও এমন ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে যে, ধারণা করে নেওয়া হয় আলাদা কিছু একটা হবে। বলিউডে এই নোলানের ‘মেমেন্টো’ (২০০০) অবলম্বন করে ‘গজিনি’ আর ‘দ্য প্রেস্টিজ’ (২০০৬) অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয়েছে ‘ধুম থ্রি’। দুটিতেই অভিনয় করেন আমির খান। এ ছাড়া নোলান পরিচালিত ‘ইনসমোনিয়া’ (২০০২), ‘ইনসেপশন’ (২০১০) এবং বাদুড়-মানবকে নিয়ে ট্রিলজি ‘ব্যাটম্যান বিগিন্স’ (২০০৫), ‘দ্য ডার্ক নাইট’ (২০০৮) ও ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস’ (২০১২) ছবিগুলো হলিউডে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। নোলানের ছবিগুলো বরাবরই দর্শকের মনের গহীনে আঁচড় কেটেছে।

undefined

 

চলচ্চিত্রকার হিসেবে নোলানের বদনাম আছে। তার চরিত্রগুলো নাকি বেশিরভাগই নেতিবাচক। এবার অবশ্য মহাকাশে গিয়ে কোমল হয়েছেন। তিনি বরাবরই দর্শকদের চমকে দিয়ে এসেছেন। তাই তার মহাকাশ যাত্রার ছবি যে শুধু নভোযানেই আটকে থাকবে না, তা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। এজন্য স্থান-কাল-সময়ের জটিলতা দূর করতে ভালোবাসার মতো সুক্ষ্ম অনুভূতিকেই বেছে নিয়েছেন ৪৪ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ নির্মাতা। পদার্থবিদ্যা আর ভালোবাসা কী মেলানো সম্ভব? হলিউডের ত্রিমাত্রিক দুনিয়ায় একজনই তা মেলাতে পারেন। ছবিটি বানানোর সময় নোলান বলেছিলেন, ‘স্ট্যানলি কুব্রিকের ‘২০০১ : অ্যা স্পেস ওডিসি’ তার নতুন ছবির অনুপ্রেরণা। ’ তবে বোদ্ধাদের অভিমত, নোলানের মুন্সিয়ানায় ‘ইন্টারস্টেলার’ কুব্রিকের ঘরানা ছেড়ে আরও বড় পর্যায়ে পৌঁছেছে। ছবিটি দেখলে বেশিরভাগ দর্শকই বাকরুদ্ধ না হয়ে পারবেন না বলে মনে করছেন অনেকে।

undefined

ছোটখাটো জিনিস কোনোদিনই ভাবেন না নোলান। সেখানে পর্বত সমান ঢেউ, বরফ-জমা মেঘ, চোখ ধাঁধানো ‘ওয়ার্মহোল’ সবই আছে। তার ছবিতে কল্পনাই মুখ্য ছবি হয়ে দাঁড়ায়। ‘ইনসেপশন’-এর স্বপ্নচুরির রাজ্যে যে অদ্ভুত স্থাপত্যের জাদু বুনেছিলেন তিনি, সে জাদু মহাকাশে ফিরে ফিরে এসেছে ‘ইন্টারস্টেলার’-এ। সেই ভেলকি শুধু চোখের নয়, যেন মনেরও। স্থান-কাল ভুলে দর্শক নোলানের মাধ্যাকর্ষণে এমন আকৃষ্ট হচ্ছেন যে, তা থেকে বেরোনো কঠিন।  

 

বক্স অফিস ও সমালোচক দুই-ই নোলানের সমান বন্ধু। তাই বাণিজ্য নিয়ে কখনও দুশ্চিন্তা করতে হয় না তাকে। মহাকাশ নিয়ে নোলানের এই মহাকাব্যকেও নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না। এরই মধ্যে ছবিটি আয় করে ফেলেছে প্রায় ১৪ কোটি ডলার। সাড়ে ১৬ কোটি মার্কিন ডলার বাজেটে নির্মিত ছবিটিতে অভিনয় করেছেন পাঁচ অস্কারজয়ী অভিনেতা ম্যাথু ম্যাকোনাহে, অ্যান হ্যাথাওয়ে, ম্যাট ডেমন, মাইকেল কেইন ও এলেন বার্সটিন। সঙ্গে আছে দুই রোবটের মজাদার কথোপকথন আর হ্যান্স জিমারের আবহসংগীত।

undefined

 

‘ইন্টারস্টেলার’ ছবির গল্পও আপাতদৃষ্টিতে দেখলে কঠিনই মনে হবে। গল্পটা মোটামুটি এরকম- পৃথিবীর আবহাওয়া এমনভাবে বদলে গেছে যে, সবাইকে নিজের পেশা ছেড়ে চাষবাসে মন দিতে হয়েছে। ধূলিঝড়ের আক্রোশে কোনো ফসলই বাঁচানো যাচ্ছে না। মোটামুটি মেধা আছে এমন ছাত্রছাত্রীদের স্কুল ছেড়ে কৃষিকাজে মন দিতে বলা হচ্ছে। কিন্তু তা-ও খাদ্যকষ্ট এমনভাবে ঝেঁকে বসেছে যে, এ পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকার আশা একেবারে নেই বললেই চলে।  

undefined

এমন বিপদের মুখে নাসার একদল মহাকাশচারী সৌরমন্ডল ছেড়ে অন্য নক্ষত্রপুঞ্জে পাড়ি দেয় নতুন বাসস্থানের খোঁজে। এ দলের অধিনায়ক কুপার (ম্যাথু ম্যাকোনহে)। সঙ্গে আছেন অ্যামিলিয়া (অ্যান হ্যাথওয়ে), রোমিলি (ডেভিড জিয়াসি), ডয়েল (ওয়েস বেন্টলি) ও দুই রোবট টার্স ও কেস। মহাকাশে নানা বিপদ ছাড়াও তাদের সবচেয়ে বড় শত্রু  হলো সময়। সময় যে কারও জন্য অপেক্ষা করে না তা গল্পে বারবারই মনে করিয়ে দিয়েছেন নোলান। অজানা গ্রহের এক ঘণ্টা পৃথিবীর সাত-আট বছর! তাই সেটা থাকার যোগ্য কি-না যাচাই করতে যতো সময় কুপাররা লাগাবে, পৃথিবীর মানুষের কাছে বেঁচে থাকার সময় ততো কমে আসবে।  

undefined

গতবার সর্বাধিক সাতটি অস্কারজেতা মহাকাশনির্ভর ছবি ‘গ্র্যাভিটি’র মতো নিছকই বিয়োগান্তক হতে পারতো ‘ইন্টারস্টেলার’, কিন্তু নির্মাতা যখন নোলান, তখন গল্প পুরোটা ত্রিমাত্রিক হয় কী করে! নোলান যে বাকিদের চেয়ে অনেক আলোকবর্ষে এগিয়ে! তাই ত্রিমাত্রা ছাড়িয়ে তিনি পৌঁছে গেছেন পাঁচ মাত্রার দেশে! সেখান থেকে পৃথিবীর মানুষের একমাত্র যোগসূত্র বাবা-মেয়ের ভালোবাসা।  

undefined

একটি দৃশ্যে কুপার তার বাবাকে (জন লিথগো) বলেন, ‘একসময় আমরা নক্ষত্রের দিকে নিজেদের খুঁজতাম। আর এখন মাটির ধূলায় নিজেদের খুঁজি। ’ আরেকটি দৃশ্যে কুপার একটি গ্রহ থেকে ফিরে এসে দেখে পৃথিবীতে ২৩ বছর কেটে গেছে। সে গত ২৩ বছরের ভিডিও মেসেজগুলো পরপর দেখতে থাকে। নিমেষের মধ্যে তার দুই ছেলেমেয়ে মধ্যবয়সী হয়ে যায়। এই দৃশ্যে ম্যাকোনাহের হাসি-কান্না মাখা অভিনয় ভোলার নয়। কুপারের মেয়ে মার্ফের ভ‚মিকায় প্রথমে ম্যাকেনজি ফয়, মাঝে জেসিকা চ্যাস্টেইন ও সবশেষে কাজ করেছেন এলেন বার্সটিন।  

undefined

নোলান পুরনো ঘরানার পরিচালক। এজন্যই তিনি এখনও মনে করেন গল্পটাই আসল, বাকি সব গৌন। সহজে অভাবনীয় গল্প বোনার বেলায় তার জুড়ি নেই। হলিউডে ভুরি ভুরি মহাকাশযাত্রার ছবি থাকা সত্ত্বেও গল্প থেকে সবরকম ক্লিশে অনায়াসে বাদ রাখতে পারেন। নোলান বলে কথা!

 

বাংলাদেশ সময় :  ১৮১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ