‘নাওয়ের কাম, বাড়ির কাম আর বিয়ার কাম শেষ হয় না’- ‘জয়যাত্রা’ ছবির প্রথম দৃশ্য। চারপাশে গ্রাম, নদী, গাছপালা।
এক দশক পূর্তি উপলক্ষে ছবিটির পরিচালক তৌকীর আহমেদ ‘জয়যাত্রা’ নিয়ে, এর যাত্রা জয় নিয়ে কথা বললেন বাংলানিউজের তারার ফুলের সঙ্গে। স্মৃতি থেকে ঘটনা তুলে আনতে আনতে তিনি নস্টালজিক হয়ে পড়ছিলেন। এটাই তার পরিচালিত প্রথম ছবি। গল্পকে পর্দায় তুলে আনতে গিয়ে কত সংগ্রাম, ত্যাগ, পরিশ্রম ঝরাতে হয়েছে- সেটা তো মুখে বলে বোঝানো সম্ভব নয়! ‘জয়যাত্রা’ নির্মাণ করতে সময় লেগেছিলো পুরো একটা বছর। লোকেশন খুঁজতে শত শত মাইল পাড়ি দিয়েছেন তৌকীর ও তার বাহিনী। ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের প্রতিটি প্রান্ত। অনেক ঘুরে যাত্রা থামলো বগুড়ায়। গাবতলী গ্রাম। তৌকীর যেমনটা চেয়েছিলেন, গ্রামটা ঠিক তেমনই। সহজ-সরল মাটির রাস্তা, এলোমেলো গাছের ভিড়, একপাশে নদী। সেখানেই তৈরি হয়েছিলো এক থেকে দেড়শ’ মানুষের ক্যাম্প।

বাধা ছিলো অনেক। তবে কখনও আশা ছাড়েননি তৌকীর। প্রশাসনের বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করেছেন। সহযোগিতা এসেছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কিছু সাঁজোয়া যান ছিলো বগুড়ায়। সেগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। ঠিকঠাক করে সচল করতে সময় লাগলো অনেক। আটটি গাড়ি দেওয়া হলো সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। কিন্তু একসঙ্গে চারটির বেশি গাড়ির দৃশ্যধারণ করা সম্ভব হয়নি। কিছুক্ষণ চলার পরপরই বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো সেগুলো।
আরেকদিনের ঘটনা বলা যাক। চট্টগ্রাম থেকে বিমান আনা হলো ঢাকায়। বুড়িগঙ্গা নদীতে ‘জয়যাত্রা’ ইউনিট প্রস্তুত। বিমান উড়লো আকাশে। এদিকে মেঘের অবস্থা খুবই খারাপ। ওইদিন দৃশ্যধারণ কোনোভাবেই করা সম্ভব নয়। বাধ্য হয়ে, আরেকদিনের জন্য অপেক্ষা। বিমানের ব্যয়বহুল জ্বালানির দিক উপেক্ষা করে পরদিন আবারও বিমান এলো বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে।

২০০৪ থেকে ২০১৪- ‘জয়যাত্রা’ নিয়ে তৌকীরের অনেক স্মৃতি। অনেক কষ্ট, পরিশ্রম, চিন্তার ফসল এই ‘জয়যাত্রা’। তিনি বলছেন, ‘ভালো লাগা থেকেই ছবিটির কাজে হাত দিয়েছিলাম। এক দশক ধরে দর্শক ছবিটি দেখছে। মনে রেখেছে। এটাই আনন্দের। যদিও বাণিজ্যিকভাবে আমরা তেমন সফলতা পাইনি, কিন্তু ছবিটি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। করছে এখনও। ’
বলে রাখা ভালো, ‘জয়যাত্রা’ ২০০৪ সালের শ্রেষ্ঠ ছবিসহ মোট সাতটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিলো। ‘জয়যাত্রা’র যাত্রা চলতে থাকুক!
বাংলাদেশ সময় : ১৮৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৪