ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আগরতলা

জঙ্গি জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে কাজল রানী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৮
জঙ্গি জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে কাজল রানী রঞ্জিত দেববর্মা ও স্ত্রী কাজল রানী দেববর্মা

আগরতলা: দীর্ঘ ২১ বছর জঙ্গি জীবন কাটিয়ে অবশেষে ঘরে ফিরলেন ত্রিপুরা রাজ্যের জঙ্গি সংগঠন অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্সের (এটিটিএফ) নারী বাহিনীর প্রধান কাজল রানী দেববর্মা।

এটিটিএফ’র প্রতিষ্ঠাতা সুপ্রিমো রঞ্জিত দেববর্মার স্ত্রী কাজল রানী দেববর্মা। স্বামীর পথ অনুসরণ করে ত্রিপুরা সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের মাল্টিপারপাস ওয়ার্কার পদের চাকরি ছেড়ে পাড়ি জমান জঙ্গলের জঙ্গি জীবনে।

স্বামীর তৈরি জঙ্গী সংগঠনে যোগ দেওয়ার পর তাকে কিছু প্রাথমিক ট্রেনিং দিয়ে এটিটিএফ’র নারী সেল’র কমান্ডার ইন চিফের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে তিনি যেহেতু স্বাস্থ্য দফতরের ট্রেনিং প্রাপ্ত কর্মী ছিলেন তাই সংগঠনের নারী সদস্যদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়টি দেখতেন তিনি।  

জঙ্গী জীবনে থাকাকালীন ভিন দেশে তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। ভিন দেশে পড়াশোনার করলেও গত কিছু দিন আগে সে মেয়ে দেশে ফিরে আসে। এখন সে চার্টার অ্যাকাউন্ট (সিএ) নিয়ে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের ব্যাঙ্গালুরু শহরে পড়াশোনা করছে।

রোববার (২৯ জুলাই) আগরতলা শহর থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দূরে পশ্চিমজেলার পাহাড়ি গ্রামীণ একটি জনপদ এসরাই এলাকায় বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা কাজল রানীর।

গত শুক্রবার (২৭ জুলাই) হঠাৎই কোনো ধরনের অস্ত্রছাড়াই ত্রিপুরা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার পুলিশ সুপারের কাছে এসে আত্মসমর্পণ করেন তিনি।  

জঙ্গি জীবনে ছিলেন অথচ অস্ত্রছাড়া আত্মসমর্পণ কেন? এমন প্রশ্নে তিনি জানান, সংগঠনের নানা শাখা রয়েছে। সংগঠনের সামরিক শাখা অস্ত্রের দায়িত্বে থাকে। তিনি যেহেতু সামরিক শাখার লোক নন তাই তার কাছে কখনো কোনো অস্ত্র ছিল না। যা কিছু অস্ত্র আছে তা সামরিক শাখার সদস্যদের হাতে রয়েছে। তবে এখন কি কি অস্ত্র রয়েছে তা তিন জানেনা বলেও জানান।

কেনো জঙ্গি জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলেন? তিনি জানান, ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য চট্টগ্রাম থেকে সে দেশের পুলিশ রঞ্জিত দেববর্মাকে আটক করে। পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মাধ্যমে উত্তরপূর্ব ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডাউকি সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এর পর থেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ইচ্ছে জাগে। কিছু দিন আগে যখন একমাত্র মেয়েও ব্যাঙ্গালুরু চলে যায় তখন পুরোপুরিভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, স্বামীর সহযোগিতায় ফিরে আসেন স্বাভাবিক জীবনে। তবে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকায় আত্মসমর্পণে সমস্যা হয়নি। তবে ভিন দেশের ডেরায় থাকায় দেশে ফিরতে দেরি হয়েছে বলেও জানান কাজল রানী।

এতো দিন পর স্ত্রী ফিরে আসায় খুশী রঞ্জিত দেববর্মাও। তিনি বাংলানিউজকে জানান, স্ত্রীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ত্রিপুরা রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে একাধিকবার আবেদন জানিয়ে কোনো সাড়া পাননি। এরপর রাজ্যে নতুন সরকার আসার পর মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব'র কাছে আবেদন জানান।

মুখ্যমন্ত্রীর তৎপরতায় তার স্ত্রী কাজল রানী সহজেই আত্মসমর্পণ করতে পেরেছেন। এখন সাধারণভাবে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চান বলেও জানান রঞ্জিত দেববর্মা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৯ ২০১৮
এসসিএন/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।