ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

বটমক্লিনিং পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সফল রানা সিনহা (ভিডিও)

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২০
বটমক্লিনিং পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সফল রানা সিনহা (ভিডিও) ত্রিপুরায় বটমক্লিনিং পদ্ধতিতে মাছ চাষ। ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা (ত্রিপুরা): মৎস্য দপ্তরের তথ্য অনুসারে সারা ভারতের তুলনায় ত্রিপুরা রাজ্যের মানুষ মাছ পছন্দ করেন বেশি। ভারতে মাথাপিছু মাছ খাওয়ার জাতীয় গড় বছরে ৮ থেকে ৯ কেজি হলেও ত্রিপুরা রাজ্যে সেই গড় ২৫.৪৫ কেজি।

ত্রিপুরার মাছের চাহিদার প্রায় ৭৬.৭১ শতাংশ রাজ্যে উৎপাদিত হয়। বাকি প্রায় ২৩ শতাংশ আমদানি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য তত্ত্বাবধায়ক হীরক সরকার।

চাহিদার শতভাগ মাছ রাজ্যে উৎপাদন করার পাশাপাশি অন্যান্য রাজ্যে রপ্তানি করার লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন মৎস্য দপ্তরের কর্মকর্তারা। এ জন্য তারা প্রথাগত চাষের পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রতি উৎসাহ দিচ্ছেন মাছ চাষিদের। মৎস্য দপ্তরের উৎসাহ ও পরামর্শে প্রথাগত পদ্ধতিতে মাছ চাষের পাশাপাশি বায়োফ্লক, কেইস কালচার ও বটমক্লিনিং পদ্ধতিতেও রাজ্যে এখন মাছ চাষ হচ্ছে।

বটমক্লিনিং পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সফল রানা সিনহা।  ছবি: বাংলানিউজ

বটমক্লিনিং পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে প্রথমবারেই ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন আগরতলার অভয়নগর এলাকার রানা সিনহা। এই পদ্ধতিতে পাকা ট্যাংকে মাছ চাষ করা হয়। দেখতে অনেকটা বায়োফ্লকের মতো হলেও চাষের পদ্ধতি অনেকটাই আলাদা। পানিতে কোনো ধরনের রাসায়নিক মেশাতে হয় না। একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর ট্যাংকের সম্পূর্ণ পানি পরিষ্কার করতে হয়। এভাবে চাষে মাছের রোগবালাই অনেক কম হয় বলে বাংলানিউজকে জানান রানা সিনহা।

এভাবে মাছ চাষের পরিকল্পনা কী করে এলো জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে উৎসাহী হন। পরে মৎস্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের আন্তরিক সহযোগিতায় সম্পূর্ণ নতুন এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন রানা সিনহা। মাত্র তিন মাসেই মাছ বিক্রির উপযোগী হয়। বছরে চারবার একই ট্যাংক থেকে মাছ উৎপাদন করা যায়। হাইব্রিড প্রজাতির হলে মাছের বৃদ্ধি আরো দ্রুত হয়, তবে দেশি প্রজাতির মাছের দাম বাজারে বেশি। মাত্র দুই মাস হয়েছে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন তিনি।  

প্রথম অবস্থায় রানা সিনহা দেশি প্রজাতির শিং মাছ চাষ করছেন। তার মাছ চাষের ট্যাংকে ১৬ হাজার লিটার পানির ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এই পরিমাণ পানিতে ৮ হাজারের বেশি মাছ চাষ করা যায়। প্রথমবার বলে তিনি ৪ হাজার মাছ চাষ করছেন। আর এক মাসের মধ্যে এক-একটি মাছের ওজন ৫২ গ্রাম থেকে ৫৫ গ্রাম হয়ে যাবে, যা বিক্রির জন্য আদর্শ আকার। মাছের কোনো ধরনের রোগ হয়নি, মৃত্যুর হার প্রায় নেই বললেই চলে। সবকিছু বাদ দিয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ লাভ থাকবে বলে জানান রানা সিনহা।

ত্রিপুরা রাজ্যের মৎস্য তত্ত্বাবধায়ক হীরক সরকার।  ছবি: বাংলানিউজ

মৎস্য তত্ত্বাবধায়ক হীরক সরকার বাংলানিউজকে জানান, মাছ চাষের জন্য বটমক্লিনিং আধুনিক এবং সফল একটি পদ্ধতি। দুই থেকে তিনদিন পর পর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পানি পরিবর্তন করতে হয় এবং সপ্তাহে একদিন সম্পূর্ণ ট্যাংক খালি করে নতুন পানি দিতে হয়। মাছের খাবার কম লাগে। কারণ, খাবারের একটি কণাও নষ্ট হয় না। সব কিছু সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে প্রতি লিটারে একটি এমনকি দুটি মাছ এই পদ্ধতিতে চাষ করা সম্ভব।

রানা সিনহার পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকজন বর্তমানে ত্রিপুরা রাজ্যে বটমক্লিনিং পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন। আগামী দিনে রাজ্যে ব্যাপক হারে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মৎস্য তত্ত্বাবধায়ক হীরক সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২০
এসসিএন/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।