ঢাকা, রবিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২, ১১ মে ২০২৫, ১৩ জিলকদ ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

একফসলি জমিতেই ভাত-কাপড়

আসিফ আজিজ ও শুভ্রনীল সাগর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:২১, জানুয়ারি ২৮, ২০১৬
একফসলি জমিতেই ভাত-কাপড় ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বিল হালতি (খোলাবাড়িয়া ও একডালা গ্রাম, নাটোর) থেকে ফিরে: তাদের বিলটি নাকি হাড়ির তলার মতো। আশপাশে বৃষ্টি নামলেই পানি জমা হয়।

বৃষ্টি দু’চারদিন হতে না হতেই টইটম্বুর। সবকিছু গুছিয়ে ওঠার আগেই যেনো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। খোলাবাড়িয়া ও একডালা গ্রামের অধিবাসীদের এমনই ভাষ্য।

undefined


বছরে ছয়-সাত মাস তাদের গ্রাম পানির উপর ভাসে। চৈত্র-আষাঢ় থেকে অঘ্রাণ-পৌষ পর্যন্ত। বাকি সময় ফসলের উপযোগী থাকে বিল। প্রায় ৪০ হাজার একরের এ বিলের বেশি অংশ জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন। বিলের মাঝের চার গ্রাম মিলে যে হাজার আটেক মানুষের বসবাস, তাদের জীবন-জীবিকা চলে এসব জমি থেকে উৎপাদিত ফসল থেকে।

undefined


বর্ষায় কেউ কেউ মাছ ধরেন। কেউ আবার পর্যটকদের নৌকা নিয়ে ঘুরিয়ে চালান সংসার। তবে অধিকাংশ পরিবারের সদস্যরা এসময় বসে কাটান। নৌকাই তাদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম তখন। রাস্তা থাকলেও তা ডুবে থাকে তিন থেকে চার ফুট পানির নিচে।

বিল ঘুরে ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিলের প্রধান ফসল ধান। এছাড়া গম, ভুট্টা, সরিষা, পেঁয়াজ কদম (বীজ পেঁয়াজ), রসুন, আলু, মসুর ডাল, মিষ্টি কুমড়া, লাউ চাষ হয়।

undefined


খোলাবাড়িয়া গ্রামের চাষি মো. ভুট্টোর জমি রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ বিঘার মতো। এখন ব্যস্ত সময়। বছরের খোরাকি হবে ইরি চাষে। আউশ-আমন ফলানোর সুযোগ নেই। মাঠজুড়ে তাই মোটর চলছে অবিরাম। সব বৈদ্যুতিক মোটর। বর্ষায় পানিতে ডুবে থাকলেও পানির স্তর নাকি এখ‍ানে বেশ নিচে।

আরেক চাষি ফারুক জানান, আত্রাইয়ের রাবার ডাম্প যদি সংস্কার করা যায় তাহলে বিলের পানি আরও আগে নেমে যাবে। তখন দুই ফসল করাও সম্ভব হতে পারে।

undefined


এক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূমিকা বেশি। বিলঘেঁষা বারলই নদীর সঙ্গে যুক্ত আত্রাই নদী। আত্রাইয়ের রাবার ডাম্প ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের যদি সংস্কার করা যায় তাহলে এ এলাকার মানুষ অনন্ত দুই ফসলি জমি পাবে বলে মত শিক্ষক আব্দুস সালামের।

তবে বিখ্যাত চলনবিলের অংশ হালতির স্বাভাবিকতায় কিছুটা ছেদ পড়তে পারে বলেও তিনি মনে করেন।

undefined


ভুট্টো জানান, জমিতে যে ধান হয় তা দিয়েই সারা বছর নিজেদের খোরাকি চলে। কিছু ধান বিক্রিও করতে পারেন। আর যে জমিগুলো বাড়ির কাছে সেগুলোতে চাষ হয় পিঁয়াজ কদম, গম, মসুর ডাল প্রভৃতি।

জমির উপর নির্ভরতা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই এ গ্রামের মানুষের। অফ সিজনে কিছু মাছ চাষ করতে পারলেও তাতে সংসার চলে না। আর গ্রামের মানুষ শুটকিও করে না। সব মাছ চলে যায় বাইরে।

undefined


এঁটেল ও দোঁয়াশ মাটিতে যেসব ফসল ভালো হয় সেগুলোই কেবল চাষ করা হয় বলেও জানান তিনি।

undefined


এছাড়া সবার বাড়ির সামান্য জায়গাটুকুও কেউ নষ্ট করেন না বা ফেলে রাখেন না। গায়ে গা ঘেঁষা বাড়িগুলোর সামান্য ফাঁকা জায়গাতে তাই চোখে পড়লো লাউ, কুমড়া ও পুঁইমাচা। এগুলো ভালোই কাজে দেয় সময়-অসময়ে।

undefined


বাড়ির ঢালের ১০ হাত জমিও কেউ খালি রাখেন না এ গ্রামের মানুষ। সেখানে বেগুন, টমেটো, পালং লাগিয়ে ফসল ফলানোয় চেষ্টায় ত্রুটি নেই। বিক্রির চেয়ে নিজেদের চাহিদা মেটানো তাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এভাবে একফসলি জমিতে ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা হয় তাদের।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৬
এসএস/এএ

** লাল ইটের দ্বীপগ্রাম (ভিডিওসহ)
** চলনবিলের শুটকিতে নারীর হাতের জাদু
** ‘পাকিস্তানিরাও সালাম দিতে বাধ্য হতো’
** মহিষের পিঠে নাটোর!
** চাঁপাইয়ের কালাই রুটিতে বুঁদ নাটোর
** উষ্ণতম লালপুরে শীতে কাবু পশু-পাখিও!
** পানি নেই মিনি কক্সবাজারে!
** টিনের চালে বৃষ্টি নুপুর (অডিওসহ)
** চলনবিলের রোদচকচকে মাছ শিকার (ভিডিওসহ)
** ঘরে সিরিয়াল, বাজারে তুমুল আড্ডা
** বৃষ্টিতে কনকনে শীত, প্যান্ট-লুঙ্গি একসঙ্গে!
** ভরদুপুরে কাকভোর!
** ডুবো রাস্তায় চৌচির হালতি
** হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতের দাপট
** ঝুড়ি পাতলেই টেংরা-পুঁটি (ভিডিওসহ)
** শহীদ সাগরে আজও রক্তের চোরা স্রোত
** ‘অলৌকিক’ কুয়া, বট ও নারিকেল গাছের গল্প
** মানবতার ভাববিশ্বে পরিভ্রমণ
** সুধীরের সন্দেশ-ছানার জিলাপির টানে
** নতুন বইয়ে নতুন উদ্যম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ