কক্সবাজার থেকে: লবণ নিত্যদিনের খাদ্য তালিকার অন্যতম উপাদান। খাদ্যে তালিকার বাইরেও ড্রাইং, কাপড় তৈরি, চামড়া শিল্পে লবণ ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
কক্সবাজার জেলা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে ইসলামপুর ইউনিয়নের অনেকাংশজুড়েই হয় লবণ চাষ। মাঠে লবণ চাষিদের সঙ্গে এবং লবণ রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় লবণ চাষের ইতিহাস।

নদীর লবণাক্ত পানি দিয়েই উৎপাদিত হচ্ছে লবণ। সমতল ভূমিকে চারপাশে মাটির ছোট আইল (মাটি দিয়ে উঁচু করে বেড়ার মত) দিয়ে ছোট প্লট আকৃতির জায়গা বানানো হয়। এরপর ছোট প্লটগুলো রোদে ভালভাবে শুকিয়ে কালো পলিথিন বিছিয়ে দেওয়া হয়। এরপর নদী থেকে ইঞ্জিনচালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে লোনা পানি এনে ছোট ছোট ওই প্লট ভর্তি করা হয়।

লবণ চাষের ভরা মৌসুম ফাল্গুন-চৈত্র মাস। বছরের ছয় মাস লবণ চাষ হয় ইসলামপুরে, বাকি ছয় মাস একই জায়গা চাষ হয় লোনা পানির চিংড়ি।

জাবেদ আল মামুন ১৫ বছর ধরে লবণ চাষের সঙ্গে জড়িত। নিজের ও লিজ নেওয়াসহ ৪০ কানি (এক কানি সমান ৪০ শতাংশ) জমি লবণ চাষে ব্যবহার করেন তিনি।
এ লবণ চাষি বলেন, লবণ চাষের ভরা মৌসুম হচ্ছে ফাল্গুন-চৈত্র মাস। আরও চার মাসও লবণ উৎপাদন হয় ভালো। রোদ থাকলে চৈত্র মাসে এক কানিতে ১২০ মণ পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়।

সারাদেশের লবণের চাহিদার ৮০ ভাগই কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মেটানো হয়ে থাকে। কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর ইউনিয়ন ছাড়াও কুতুবখালী, মহেশখালী, ইসলামাবাদ, ফুকখালী, বাড়বুআলী, চপুলন্ডীসহ বেশ কিছু জায়গায় লবণ চাষ হয়। লবণ চাষ যেসব জায়গায় হয়, সেখানে অন্য কোনো ফসল হয় না।
মাঠ পর্যায়ে এক বস্তা (৮০ কেজিতে এক বস্তা) লবণের মূল্য ৬০০ টাকা, মিলে রিফাইন করার পর তা হয়ে যায় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। ইসলামপুর লবণ শিল্প এলাকা থেকে নৌকা ও ট্রাকে করে বিভিন্ন জেলায় লবণ সরবরাহ করা হয়।
লবণ চাষকে কেন্দ্র করে ইসলামপুরে রয়েছে ৪০টি রিফাইনারি ফ্যাক্টরি। এর মধ্যে বর্তমানে ৩০-৩৫টি ফ্যাক্টরি সচল রয়েছে। একটি রিফাইনারি ফ্যাক্টরি চালু করতে হলে সপ্তাহে কমপক্ষে ৭০ টন লবণ প্রয়োজন। লবণ রিফাইনারিতে প্রতিটি ফ্যাক্টরিতে ৩০-৪০ জন শ্রমিক কাজ করেন, এ শ্রমিকদের কাজ দিতে হলে সপ্তাহে ৭০ টন ‘র’ লবণ প্রয়োজন বলে জানান মিতালী সল্ট রিফাইনারি স্বত্বাধিকারী মো. ইউনূস।
লবণ শিল্পের ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, পঞ্চদশ শতাব্দীতে কক্সবাজার জেলায় লবণ চাষ শুরু হয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সহায়তায় এখানে বাণিজ্যিকভাবে লবণ ব্যবসা বিকাশ লাভ করলেও অষ্টদশ শতাব্দীতে ইংরেজ সরকার এদেশে লবণ উৎপাদন নিষিদ্ধ করে ইংল্যান্ড থেকে লবণ আমদানি শুরু করে। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে উপকূলীয় জমি পরিষ্কার করে সাগরের পানি সূর্যে ও তাপে বাষ্পীভূত করার মাধ্যমে এক ব্যক্তি লবণ চাষ শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে কক্সবাজার সদর উপজেলার গোমাতলী মৌজাতে এক ব্যক্তি ১২০ একর জমি দীর্ঘ মেয়াদি বন্দোবস্ত নিয়ে লবণ চাষ শুরু করেন। সে থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লবণ উৎপাদনের যাত্রা শুরু হয়।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) তথ্যমতে, কক্সবাজার জেলায় ৬৩ হাজার ৫৩২ একর লবণের মাঠ রয়েছে। আর লবণ চাষি রয়েছেন ৪৩ হাজার ৫০০ জন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৬
এসএম/আরএ
** ছেঁড়া দ্বীপে যেতে অবশ্য করণীয়
** কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন-সুন্দরবন ঘিরে নানা পরিকল্পনা
** প্রশাসনের ছত্রছায়ায় চলছে ঝুঁকিপূর্ণ ‘জেট স্কি’
** লাবনী-সুগন্ধা নয়, পুরো সৈকতে উপযোগী পরিবেশ দরকার
** বয়া ছাড়াই জাহাজ চলছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে
** প্রবাল পাথরের ভাঁজে ভাঁজে মাছের খেলা
** পঁচা মাছে নষ্ট হচ্ছে সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য
** দূর থেকে ভাসমান, কাছে গেলেই দৃশ্যমান ছেঁড়া দ্বীপ
** পর্যটন নগরীতে বাংলা ভাষার বেহাল দশা
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ