কাছাড়িয়া হাওর (সুনামগঞ্জ) থেকে: চারদিকে থই থই পানি, মাঝে মাঝে ছোট্ট ছোট্ট গ্রাম। হরেক রকম গাছ-গাছালিতে ভরা পানিবেষ্টিত একটি গ্রামের নাম বিশ্বম্ভরপুর।
সবে নয় মাস হলো বিয়ে করেছেন আবুল কালাম আজাদ। বয়স ২০ বছর। ৫ বছরব বয়স থেকেই ইঞ্জিনচালিত নৌকার হাল ধরেছেন তিনি।
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কাছাড়িয়া হাওর (স্থানীয়দের ভাষায় কছড়া হাওর) ভ্রমণের সময় কথা হয় তার সঙ্গে। আজাদ মাঝি বলেন, ‘পাঁচ বছর থৈন নৌকাত হাল ধরছি। বর্ষাকালে নৌকা চালাই, অন্য সময় রাজমিস্ত্রি বা অন্য কোনো কাজ করি’।
তার মতো এ অঞ্চলের অধিকাংশ লোকই বর্ষার সময় নৌকা চালান। আর অন্য সময় দিনমজুরি বা অন্য কোনো কাজ করেন।
অন্যের নৌকা শেয়ারে চালান আজাদ। দিন শেষে যা আয় হয়, তার অর্ধেক নৌকার মালিককে দিতে হয়। সারাদিন নৌকা চালিয়ে ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা আয় হয়। কোনো কোনোদিন এক হাজার টাকা পর্যন্তও উপার্জন করেন আজাদ মাঝি।
বিশ্বম্ভরপুর বাজার থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে বাহাদুরপুর, শান্তিপুর, রায়পুর, ঘাগৈট, ফুলপরি, গোলাপপুরসহ ৪৮টি গ্রাম। এর প্রতিটি গ্রামই এখন পানিবন্দি।
এসব গ্রামের প্রতিটিতে ৭০০ থেকে ৯০০ লোকের বসবাস। বছরের ছয়মাস পানির মধ্যেই বসবাস করতে হয় গ্রামবাসীদের। তাই গ্রামের বাজার বা শহরে কোনো কাজে যেতে হলে নৌকা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই তাদের। বাংলা বছরের বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত সময় তারা হয় নৌকা চালান, অথবা হাওরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এর মধ্যে নৌকা চালানো যায় চারমাস। যখন ভরা বর্ষা, শুধু তখনই নৌকায় চলাচল করেন স্থানীয়রা।
দূরত্ব অনুযায়ী ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত প্রতিজনের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা হয়। প্রতি নৌকায় ৫০ থেকে ৭০ জন যাত্রী বহন করা যায়। নৌকা চালিয়ে মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় হয় মাঝিদের। তাই দিয়ে সংসার চালান তারা।

পর্যটকদের সোনার হাওর হয়ে সীমান্তঘেঁষা লাউড়ের গড় হাওর ও টাংগুয়ার হাওর ভ্রমণে নিয়ে যান মাঝিরা। বর্ষা মৌসুমে পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান এসব হাওর অঞ্চল।
আজাদ মাঝির বিয়ের কাহিনীও সিনেমার মতো। তার স্ত্রী সেতুর বাড়ি বগুড়ায়। একটি রং নম্বর থেকে কথা বলতে বলতে পরিচয়, অতঃপর বিয়ে। নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন সেতু। ভালোবাসার টানে বাড়ি ছেড়ে সেতু চলে আসেন আজাদের বাড়িতে। সেতুকে নিয়েই এখন আজাদের স্বপ্ন।
হাওরের ঢেউয়ের দোল খেতে খেতে নৌকা চলে শান্তিপুর গ্রামের দিকে। আর এই ফাঁকে নিজের জীবনের কাহিনী তুলে ধরেন আজাদ। আজাদের মতো বিশ্বম্ভরপুর গ্রামে আরও ২০ জন মাঝি নৌকা চালিয়ে জীবন ধারণ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৬
এসএম/এএসআর
*** পানি নয়, সাতছড়ির ছড়ায় এখন শুধুই বালু
**প্রকৃতিপ্রেমিদের জন্য অনন্য সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
** ভাড়াউড়া লেকের সৌন্দর্যে কালো মেঘ যোগাযোগ ব্যবস্থা
**লাউয়াছড়ায় ১৫ হেক্টরের মধ্যেই দর্শনার্থী সীমাবদ্ধ
**লাউয়াছড়ায় অর্থকরী ফসলের আত্মকথা
**নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন মিহির কুমার দো