ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

সহিংস রাজনীতির পুনরাবৃত্তি চায় না বনলতা সেনের নাটোর

রাইসুল ইসলাম, এডিশনাল আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৫ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৭
সহিংস রাজনীতির পুনরাবৃত্তি চায় না বনলতা সেনের নাটোর নাটোরের রাজনীতি নিয়ে মুখ খুলতে ভয়/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নাটোর: নাটোর রানি ভবানীর শহর। আবার জীবনানন্দ দাশের কবিতায় সেই বনলতা সেনকে আমরা চিনি নাটোরের বনলতা সেন হিসেবেই।  বিখ্যাত কাঁচা গোল্লার জন্যও নাটোরের খ্যাতি জগৎ জোড়া। আম লিচু আর চলন বিলের বিখ্যাত মিঠা পানির শুঁটকির জন্যও দেশ জুড়ে খ্যাতি নাটোরের।

নাটোর প্রাচীন শহর তা বোঝা যায় শহরে পা রাখলেই। নাটোর পৌরসভার বয়সই নাকি প্রায় দেড়শ বছর।

১৮৬৯ সালে যার পত্তন।

এহেন প্রাচীন নাটোর শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে রাজনীতি সচেতনতাই কাম্য।   তবে রাজনীতি নিয়ে সচেতনতা থাকলেও নাটোর শহরের বাসিন্দাদের রাজনৈতিক ব্যাপারে মুখ খোলার আগ্রহ যেন একটু কমই।

নাটোর শহর খুব বেশি বড় না হলেও অন্যান্য মফস্বল শহরের মত ঠিক তাকে এক রাস্তার শহরও বলা যাবে না।

বাস টারমিনাল থেকে মূল শহরের দিকে যেতে পড়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ  পয়েন্ট মাদ্রাসার মোড়। তিন রাস্তার এই মোড় থেকে ডানদিকে একটি রাস্তা গেছে স্টেডিয়াম, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দিকে। আর সোজা রাস্তা চলে গেছে শহরের প্রাণকেন্দ্র বাজারের দিকে।

নাটোরের বিখ্যাত পচুর হোটেলে ভাত খেয়ে মাদরাসার মোড় থেকে চেপে বসলাম ব্যাটারি চালিত অটোতে। গন্তব্য শহরের প্রাণকেন্দ্র বাজার এলাকা।

অটো চালক বয়স্ক মানুষটি খুবই আন্তরিক। শহরেরই বাসিন্দা তিনি। নিজের কেনা অটো নিজেই চালান। দিন শেষে আয় কোনদিন ৫শ কোনদিন ৭শ।

সাংবাদিক, একই সঙ্গে শহরে নতুন জেনে নিজে থেকেই হরবড়িয়ে অনেক কথা বলা শুরু করলেন। বেশিরভাগই নাটোর কত পুরনো শহর ইত্যাদি।

কিন্তু প্রসঙ্গ যখন এসে ঠেকলো এলাকার  রাজনীতিতে, তখন যেন কিছুটা চুপ মেরে গেলেন তিনি।   চাপাচাপি করতেই তার কথায় উঠে এলো  নিকট অতীত কালের এই অঞ্চলের সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতির চিত্র। রাজনৈতি সহিংসতায় নিকট অতীতে নাটোরে ঝরেছে অনেক প্রাণও। তবে কয়েক বছর আগের তুলনায় এখন পরিস্থিতি অনেক শান্ত বলেও জানালেন। দুই তিন বছরে তেমন কোন বড় রাজনৈতিক সহিংসতার সাক্ষী হয়নি নাটোর শহরবাসী।   এ পরিস্থিতি বজায় থাকলেই খুশি তিনি।

তবে আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ চান প্রবীণ এই অটোচালক। তার মতে সেয়ানে সেয়ান টক্কর না হলে তা কিসের জাতীয় নির্বাচন।

একই মত দিলেন শহরের কানাইখালি এলাকার চায়ের দোকানে বসা স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ কর্মীও। তিনিও চান বিএনপি নির্বাচনে আসুক। তিনি বললেন, তাদের মত তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে ভোট হলো উৎসব। সেখানে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি না থাকলে তো ভোট ঠিক জমে না।

কানাইখালি মোড়ের চায়ের দোকানের ওই আড্ডায় ছিলেন আরও বেশ কয়েকজন। তাদের সঙ্গে কথায় উঠে এলো  নাটোরের রাজনীতির অনেক কিছুই।   জানা গেল স্থানীয় রাজনীতির গতিপ্রকৃতি। তবে তারা সবাই অনুরোধ জানালেন, তাদের নাম বা পরিচয় যেন প্রকাশ না করা হয়।

আসলে তাদের যেন তাড়া করছে নাটোরের অতীতের সহিংস রাজনীতির ছায়া। নিকট অতীত কালের সেই সহিংস স্মৃতির কারণেই  স্থানীয় রাজনীতির ব্যাপারে খোলামেলা কথা বলতে এখনও অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তারা।

তবে আগের থেকে বর্তমান পরিস্থিতি অনেক ভালো বলে জানালেন তারা সবাই।

আড্ডায় এক ঠিকাদার জানালেন, আশানুরূপ উন্নয়ন না হওয়া নিয়ে নাটোরবাসীর আক্ষেপের কথাও।

সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু নাটোরবাসীর প্রাণের দাবি শহরের বুক চিড়ে চলে যাওয়া প্রধান রাস্তাটি আর প্রশস্ত হয় না। হবে হচ্ছে করে আওয়ামী লীগেরও পরপর দুই মেয়াদ পার হওয়ার পথে, কিন্তু রাস্তা আর চওড়া হয় না। হরিশপুর বাইপাস থেকে শুরু হয়ে শহরের বুক চিড়ে বন বেলঘরিয়া বাইপাসে গিয়ে ঠেকা এই রাস্তাটির অপ্রশস্ততার কারণে প্রতিদিনই শহরে সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। দিনের ব্যস্ততম সময়ে সড়কটি ধরে বাজারের এ মাথা থেকে ও মাথা যেতে মাঝেমাঝে ঘণ্টাও পেরিয়ে যায় বলে জানালেন ওই ঠিকাদার।

পাশাপাশি ভৌগলিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও  নাটোরে কোন ভারী শিল্প গড়ে না ওঠার আক্ষেপও ঝড়লো তার কণ্ঠে।

তিনি জানালেন নাটোর বগুড়া, রাজশাহী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার মাঝখানে অবস্থিত। ঢাকার সাথে যোগাযোগ সড়ক ও রেল দুই মাধ্যমেই ভালো। কিন্তু তারপরও নাটোরে তেমন কোন শিল্প গড়ে ওঠেনি। এজন্য স্থানীয় রাজনীতিকদেরই দায়ী করলেন তিনি।

সম্পূর্ণ অচেনা একটি শহরে, অপরিচিত জনদের সাথে মেতে ওঠা আড্ডা থেকে বিদায় নিতে নিতে রাত প্রায় এগারোটা।

এমন অনেক ইঙ্গিতই পাওয়া গেল এই আড্ডা থেকে, যার থেকে বোঝাটা সহজ হলো কোন পথে নাটোরের স্থানীয় রাজনীতি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৭
আরআই/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।