ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

আ’লীগ নেতার অফিসেই আড্ডা বিএনপি নেতা-কর্মীর!

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৪ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
আ’লীগ নেতার অফিসেই আড্ডা বিএনপি নেতা-কর্মীর! আ’লীগ নেতার অফিসেই আড্ডা বিএনপি নেতা-কর্মীর!- ছবি:আসিফ আজিজ

জুড়ী-বড়লেখা (মৌলভীবাজার) থেকে: আমাদের দেশে রাজনীতি মানেই ক্ষমতাসীন আর বিরোধীদলের রেষারেষি, হিংসা-বিদ্বেষ, গালাগালি-গলাবাজি আর একে অন্যের নিন্দে-মন্দ- এ ধারণা সাধারণ মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল। পরিবেশ-প্রতিবেশও অনেকটা বলে তাই। তবে এর বিপরীত চিত্রও বিরল নয়। মৌলভীবাজার-১ সংসদীয় আসনের (বড়লেখা-জুড়ী) বড়লেখা সদর ইউনিয়নের তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতির হালচাল বলছে এমনই।

রজানীতিকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতায় সহাবস্থানের অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে সদর ইউনিয়নের গ্রাম ডিমাই। আওয়ামী লীগ নেতার কার্যালয় এখানে বিএনপি নেতা-কর্মী-সমর্থকদেরও বড় আড্ডাস্থল।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা বিরল বলাই যায়।
 
বর্তমানে মৌলভীবাজার-১ আসনে সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের তিনবারের পরীক্ষিত নেতা মো. শাহাব উদ্দিন। অপরদিকে উদীয়মান দুই নেতার পাশে বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী এখনও সমান জনপ্রিয়। এমপি শাহাব উদ্দিনের বাড়ি পাখিয়ালী রোড ধরে কিলোমিটার পাঁচেক এগোলেই ডিমাই। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য মো. সিরাজ উদ্দিনের রাজনৈতিক কার্যালয় ডিমাই বাজারে।
মো. শাহাব উদ্দিন
চা বাগান, কমলা বাগান, টিলা, জঙ্গল ঘেরা ডিমাই পুরো বড়লেখার মতো সকাল ৯টায়ও ঠিক-ঠাক জাগেনি। এই ফাঁকে ঝরনা-কমলা বাগান দেখে ফেরা। ততক্ষণে মেম্বরের কার্যালয়ও জমজমাট। পরিচয় দিয়ে ঢুকতেই দুজন হাসিমুখে স্বাগত জানালেন। আলাপ জমতেই জানা গেলো একজন ইউপি সদস্য সিরাজ উদ্দিন। তার কার্যালয় এটি। পাশের জন কাঁচাপাকা চুলদাড়ির মো. ফখরুল আলম। ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি। আবার সিরাজ উদ্দিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।

সবশেষ নির্বাচনে ফখরুলকে হারিয়েই টানা চতুর্থবারের মতো ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সিরাজ। সদরের ইউপি চেয়ারম্যান আবার এমপির ভাগনে। কিছুক্ষণ দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বির মধ্যে হয়ে গেলো বাহাস। দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ দুজনই। কেউ কারও ছেড়ে কথা বললেন না, আবার কেউ দুই দলের দুর্বলতা স্বীকার করতেও লজ্জাবোধ করলেন না।
মো. ফখরুল আলম
ফখরুল বলেন, এ আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবাদুর রহমানই হবেন। এছাড়া নাসির উদ্দিন মিঠুও চেষ্টা করছে। তবে কেন্দ্র যাকে দেবে তাকেই সমর্থন করবো আমরা। বিএনপিকে মাঠে থাকতে দিচ্ছে না বলে জানালেন তিনি।

কথা কেড়ে নিয়ে সিরাজ উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে হুইপ শাহাব উদ্দিন ছাড়া নির্বাচন করার কেউ নেই। তার জনপ্রিয়তা বেশ। বিএনপির ভোট আছে এখানে। কর্মী নেই। তবে বিএনপি যদি এবাদুর রহমানকে মনোনয়ন দেয় তাহলে প্রদিদ্বন্দ্বিতা হবে, অন্য কেউ হলে নিশ্চিন্তে পাস করবেন শাহাব।
 
ফখরুল হবেন, কোনো কর্মী মাঠে নেমে কাজ করতে পারছে না। বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায়। তবে আমাদের এখানে সমস্যা নেই। আমি বিএনপি করলেও এই অফিসে বসেও সমালোচনা করতে পারি। এই মুহূর্তে তৃণমূলে থেকে সবাই বলতে পারবে না। আমাদের দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সবসময় ভালো সম্পর্ক। কোনো হানাহানি নেই।
 
পাশে বসা বিএনপি সমর্থক আব্দুল মতিন সায় দিলেন তার কথায়।
 
তিনি বলেন, দেশ যেভাবে চলছে তাকে আমরা ভালোই বলবো। এতে কোনো দুঃখ নেই। কিন্তু কোথাও গিয়ে মানুষ ইনসাফ পাচ্ছে না। এটাই সমস্যা।
আব্দুল মতিন
পাশ থেকে সিরাজ উদ্দিন বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা যদি কোথাও হয় সেটা এখানে। কেউ যদি কোনো দাবি নিয়ে আমাদের কাছে আসে তাহলে আমরা দল দেখি না। সমস্যায় পড়লেও সেটি সব নেতা মিলে বসে ঠিক করি। বিচার সালিশে সবাই সবাইকে ডাকে।
 
এসময় এবার নির্বাচনে হেরে গেলেও বিজয়ী প্রার্থী সিরাজ উদ্দিনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পান এবং সেখানে গিয়ে গঠনমূলক কথা বলেন বলে জানান ফখরুল।
 
এটা শুধু এই দুই নেতা নয়, চেয়ারম্যান, এমপির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য বলে জানান তারা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৩০০ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।