ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

‘ভোটের দিন সবাই নৌকায় ভোট মারে!’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৪ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
‘ভোটের দিন সবাই নৌকায় ভোট মারে!’ চা শ্রমিক। ছবি: বাংলানিউজ

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে: তপ্ত রোদ, মাথার ওপরে সূর্য। গাছের ছায়ায় দুপুরের খাবার আয়োজনে ব্যস্ত চা শ্রমিকেরা। রুটির সঙ্গে রয়েছে চা পাতার ভর্তা। হাতের তালুতে চা পাতা কচলে পেঁয়াজ-মরিচ ও চানাচুর মিশিয়ে ভর্তা করে চলছে ক্ষুধা নিবারণ।   

সেখানে বসা নুরজাহান চা বাগানের সুপারভাইজার চৈতন ব্যানার্জি বললেন, ‘চাউলের দাম কমাইবো কইয়া কমাইলো না, মানসে (মানুষ) সারাদিনে ৮৫ টাকা পায়। ৫০ টাকা চালের কেজি।

এই টাকা লইয়া চাল, ডাল না তেল কিনবো? এই দিয়ে কি সংসার চলে?’।

‘হের (এর) জন্য ইবার কেউ কেউ কয়, নৌকা থুইয়া ধানে ভোট দিমু। কিন্তু ভোটের দিন মাথায় কি যেন ডুকি যাইবো-সবাই নৌকায় ভোট মারবো’- বলেন চৈতন।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার পুরোটা ও কমলগঞ্জের আংশিক নিয়ে মৌলভীবাজার-৪ আসন। সংসদীয় এ আসনে নির্বাচিত হওয়া-না হওয়া নির্ভর করে চা বাগানের শ্রমিকদের ভোটে। যারা প্রখর রোদে আগুনসম উত্তাপেও নিভৃতে করে যান চা বাগানের যত্ম। যাদের হাতের পরশে উঁচু-নিচু টিলা আচ্ছাদিত সবুজের সমারোহে।  

চা বাগানের সবুজের গালিচা প্রকৃতিতে দিয়েছে অনন্য রূপ। এ রূপের কারিগর বাগানের চা শ্রমিকরাই মৌলভীবাজার-৪ আসনের ভোটের প্রাণ।  

ভোটের আগে উন্নয়নের আশ্বাস দেন প্রার্থীরা। শ্রমিকরা তাদের বিশ্বাস করে ভোট দেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতির ব্যত্যয় ঘটে ভোটের পরই। নির্বাচিত হয়েই প্রার্থী ভুলে যান শ্রমিকদের। চা শ্রমিক।  ছবি: বাংলানিউজতবে উন্নয়ন বঞ্চিত হলেও প্রিয় প্রতীক জাতির জনকের নৌকায় ভোট দিতে ভোলেন না হতদরিদ্র এই শ্রমিকেরা।

পঞ্চান্ন বছরের নারী শ্রমিক অঞ্জলী রাজবংশী বলেন, ‘নৌকায় ভোট দিই, কিছুতো পাই নারে বাপু। নৌকার লোক ভালো মনে করে ভোট দেই। হেরপর কাছেই তো আহে না।   খারাপ হলেও ভোট দেওয়া লাগবে। কিন্তু ভোটের সময় ছাড়া আয় নাই’।

তবে আওয়ামী লীগের এমপি আব্দুস শহীদ বাগানে তিনটি কালভার্ট বানিয়ে দিয়েছেন বলে জানান শ্রমিক শ্রীনন্দ। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এমপির চেয়ে ভালো কোনো প্রার্থী নেই। তাই শহীদের ফিল্ড ভালো’।

শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের উত্তরসূর এলাকার ফিনলে চা বাগানের  শ্রীনন্দ সরকার ও শ্যামল দত্ত বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময়ে উন্নয়ন হয়েছে। আর কেউতো উন্নয়ন নিয়ে এসে সামনে দাঁড়াতে পারবেন না। যিনি উন্নয়ন দেখাতে পারবেন, তাকেই ভোট দেবো’। চা শ্রমিক।  ছবি: বাংলানিউজপার্শ্ববর্তী জেরিন চাগানে পাতা উত্তোলনে ব্যস্ত লক্ষ্মী স্বর্ণকার বলেন, ‘ভোট এখনো আসে নাই। তবে ভোটের জন্য অনেকেই আসেন। দু’পক্ষেরই লোক আসেন’।  

‘ভোট আইলে নৌকায় দিমু। বাপ-দাদারাও নৌকায় দিছেন, আমিও দিমু’।

জেরিন চা বাগানের সিনিয়র ম্যানেজার মোহা. সেলিম রেজা বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভালো প্রার্থী কাজ করলে তাকে ভোট দেওয়া উচিত। তবে এখানকার বেলায় উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদই যোগ্য। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আর কাউকে দেখি না। যে কারণে মানুষজন বার বার তাকে ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য বানিয়েছেন। এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও তার অবদান অনস্বীকার্য’।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
এনইউ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।