পাবনা ঘুরে এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পাবনায় জামায়াতের একটি নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক আছে। অন্যান্য জেলার তুলনায় এ জেলায় তাদের সংগঠনও কিছু শক্তিশালী।
বিশেষ করে মতিউর রহমান নিজামীর এলাকা সাঁথিয়া ও বেড়াকে নিয়ে গঠিত পাবনা-১ ও জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা মওলানা আব্দুস সুবহানের এলাকা পাবনা সদরে রয়েছে জামায়াতের ভালো অবস্থান।

তবে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে সারা দেশেই জামায়াতের অবস্থা এখন বেশ নাজুক। এর প্রভাব পড়েছে পাবনাতেও। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হয়েছে নিজামীর। সাজা হয়েছে সুবহানের। নির্বাচন কমিশনে বাতিল হয়েছে তাদের দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লাও। জেলার শীর্ষ নেতারা রয়েছেন আত্মগোপনে।
এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনে পাবনায় জামায়াতের অবস্থান কি তা জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করলাম দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে।
পাবনায় আত্মগোপনে রয়েছেন জেলার প্রায় শীর্ষ সব নেতাই। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও বেশ বেগ পেতে হলো। কয়েক দফা, কয়েক জনের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের পর দলের তরফে জানানো হলো, আমার সঙ্গে কথা বলবেন জেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি ও পাবনা শহর জামায়াতের সেক্রেটারি একরামুল হক।
কয়েক দফা পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর একরামুল হক আমাকে ডাকলেন পাবনা শহরের অনন্ত এলাকায় এক মসজিদে। ইফতারের আগ দিয়ে পৌঁছুলাম সেখানে। মসজিদটির পাশেই রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে কথা হলো শিবির থেকে উঠে আসা জামায়াতের তরুণ এই নেতার সঙ্গে।
তার বক্তব্যেই জেলা জামায়াতের অবস্থান প্রতিফলিত হবে কি না তা নিশ্চিত হতে জিজ্ঞেস করলাম, জেলার রাজনীতির নীতি নির্ধারণে আপনার কথার গুরুত্ব কতখানি? তিনি জানালেন, তার কথাকেই জেলায় দলের বক্তব্য বলে ধরে নিতে পারি আমি। জেলার শীর্ষ নেতাদের নির্দেশেই তিনি দেখা করেছেন আমার সঙ্গে। পাবনায় জামায়াতের রাজনীতি এবং বিএনপির সঙ্গে তাদের জোটগত অবস্থান ইত্যাদি নিয়ে অনেক কথা হলো তার সঙ্গে।
তিনি জানালেন, বিএনপির সঙ্গে জোটগত নির্বাচন হলে পাবনা-১ (সদর) এবং পাবনা-৫ (বেড়া ও সাঁথিয়া) আসনের পাশাপাশি পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনেও এবার জোটের তরফে মনোনয়ন চাইবে জামায়াত। বিশেষ করে বেড়া-সাঁথিয়া এবং পাবনা সদর আসনের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাবনা সদর আসনে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার ১৫৮ জন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী গোলাম ফারুক প্রিন্স ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৮২ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতে ইসলামীর মওলানা আব্দুস সুবহান পেয়েছিলেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৩৯৭ ভোট।
আর ওই নির্বাচনে পাবনা-১ (বেড়া-সাঁথিয়া) আসনে মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৫৭ জন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯৯৪ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামী পেয়েছিলেন ১ লাখ ২৩ হাজার ভোট।
তবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে নিজামীসহ শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি এবং উচ্চ আদালত থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে এই দুই আসনে কিছুটা ব্যাকফুটে জামায়াত। এ সুযোগটাই নিতে চাচ্ছে বিএনপি।
বিশেষ করে পাবনা সদর আসনে এবার জোটের পক্ষে জামায়াতের বদলে বিএনপির শিমুল বিশ্বাসের মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানালেন, পাবনায় শিমুল সমর্থিত জেলা বিএনপির এক নেতা।
এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে, স্মিত হেসে একরামুল হক জানালেন, সারা দেশের অবস্থা কি হবে তা জানি না। তবে পাবনা সদর এবং বেড়া-সাঁথিয়া এই দুই আসনে জোটের প্রার্থিতা জামায়াতকেই দিতে হবে। এই দুই আসনে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি দুই দলের বিরুদ্ধেই এককভাবে নির্বাচন করে জয়লাভের সক্ষমতা রাখে জামায়াত। সেক্ষেত্রে জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে আসন দুটি চাইবে জামায়াত। কোনো ছাড় দেবে না বিএনপিকে।
এছাড়া পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনেও মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির কোন্দল রয়েছে উল্লেখ করে সেখানেও জোটে জামায়াতের মনোনয়ন চাওয়া হবে বলে জানালেন তিনি। সেক্ষেত্রে দলের জেলা আমীর অধ্যক্ষ আবু তালেব মন্ডলের ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত অনেকটা চূড়ান্ত।
তবে পাবনা সদরে যুদ্ধাপরাধের মামলায় দণ্ডিত হয়ে আব্দুস সুবহান নির্বাচন করতে না পারলে জামায়াতের প্রার্থী হতে পারেন জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ ইকবাল কিংবা জেলার সাবেক আমীর আব্দুর রহিম।
এছাড়া বেড়া-সাঁথিয়াতে নিজামীর পরিবারের কেউ জামায়াতের মনোনয়ন পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে নিজামীর পুত্র ব্যারিস্টার নাজিব মোমেনই তাদের প্রথম পছন্দ বলে জানালেন একরামুল হক।
জামায়াতের এই নেতার কথায় বোঝা গেল, সুযোগ পেলে প্রয়োজনে এককভাবে নির্বাচন করবে জামায়াত, তবুও পাবনা সদর ও বেড়া-সাঁথিয়া আসনে তারা কোনো ছাড়া দেবেন না বিএনপিকে। এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান স্পষ্ট।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৭
জেডএম/
**মিন্টু-শিমুল দ্বন্দ্বে এবারও অনিশ্চিত ধানের শীষ
** রাজনীতি জটিল পাবনায়
** পাবনায় ইমেজ ভালো প্রিন্সের, কোন্দল নেই মনোনয়নে
** সিংড়ায় লড়াই আ'লীগের উন্নয়ন বনাম ধানের শীষের জনপ্রিয়তার
** মার্কা পেতে কোন্দল নেই সিংড়া বিএনপিতে
** সিংড়ায় পলকই নৌকার মাঝি, কোন্দল নেই মনোনয়নে
** সিংড়ায় পলককে ঘিরে রাখে জনতা
** ‘সব ঠিক থাকলে’ নাটোরে ধানের শীর্ষ নৌকা তুমুল লড়াই
** পরিবারতন্ত্রেই অটল নাটোর বিএনপির একনায়ক দুলু
** নাটোর সদরে নৌকা ডুবতে পারে গ্রুপিং-কোন্দলে
** নাটোর সদরে নৌকা পেতে টক্কর সেয়ানে সেয়ানে
** ছোট শহরের বড় পলিটিকস নাটোরে
** সহিংস রাজনীতির পুনরাবৃত্তি চায় না বনলতা সেনের নাটোর
** চামড়া কিনছে না ট্যানারি, হাহাকার নাটোরের চামড়ার হাটে
** নাটোরে লিচুর রাজা চায়না থ্রি, কম যায় না মোজাফফরও
** আহ বৃষ্টি!, কি যে স্বস্তি!
** মায়ের কোলে ফিরলো হারিয়ে যাওয়া শিশু