ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

পঞ্চগড় -১

‘ভোটে হামার ভাগ্যের উন্নতি নাই’

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৬ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৭
‘ভোটে হামার ভাগ্যের উন্নতি নাই’ পঞ্চগড়ের নির্বাচনে এসব পাথর শ্রমিকদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে

পঞ্চগড়(তেতুলিয়া): ‘ভোট আসলে ভোট দেমো। ভোটে হামার কোনো উন্নিত নাই। সারাজীবন কিস্তির টাকা শোধ করতে পাথর ভাঙার কাম ছাড়া হামার কোনো গতি নাই। দুই টাকা কাহোই সাহায্য কইরবে না বাহে!’
 
 

পঞ্চগড়-তেতুলিয়া হাইওয়ে সড়কের দুই পাশে পাথর ভাঙার মেশিনের ঘড়ঘড় আওয়াজ। নারী-পুরুষ মিলে হাজার হাজার শ্রমিক পাথর ভাঙার কাজে নিয়োজিত।

বৈরী পরিবেশে ঘেমে-নেয়ে অবিচল কাছ করে যাচ্ছেন।
 
অসহায় ভঙ্গিতে ভোট নিয়ে কথাগুলো বলেন তেতুলিয়া ভজনপুর ইউনিয়নের পাথর শ্রমিক ফেলানি খাতুন। তিন কূলে কেউ না থাকা পঞ্চাশোর্ধ্ব ফেলানি খাতুনের জীবন চলে পাথর ভাঙার কাজ করে উপার্জিত পারিশ্রমিক দিয়ে।
 
ফেলানির মতো অর্ধ লক্ষাধিক পাথর শ্রমিক পঞ্চগড়ের বিভিন্ন নদী ও সমতল ভূমি থেকে পাথর উত্তোলন, বাছাই, মেশিনে ভাঙার কাজ করেন। সূর্যোদয়ের সঙ্গে ঘর থেকে বের হওয়া এসব শ্রমিকরা ঘরে ফেরেন সূর্য ডোবার পর। স্বল্প মজুরিতে জীবন চালাতে ব্যর্থ হয়ে নিতে হয় এনজিও থেকে ঋণ। আর এ ঋণের বোঝা টানতে দিনভর হারভাঙা পরিশ্রম করতে হয় এসব পাথর শ্রমিকদের।
 
অথচ মানবেতর জীবন যাপন করা এসব শ্রমিকের ভোট পঞ্চগড়ের জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। পঞ্চগড়-১ আসনের ফলাফল নির্ধারণে পাথর শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক ভোট বলে জানান স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
 
সারাবছর উদয়স্ত পরিশ্রম করা এসব শ্রমিকের কেউ খোঁজ না নিলেও ভোটের আগে তাদের আঙিনায় নেতাকর্মীদের যোগাযোগ বাড়ে। যদিও ফলাফল পরবর্তী চিত্র আগের মতো থাকে।
 
সকিনা নামে এক পাথর শ্রমিক বলেন, ভোট-টোট নিয়ে মাথা ঘামাই না। ভোট শেষ হইলে হামার খোঁজ কাহোই নেয় না। কম বয়সত পাথরের কাম ধরছি, সারাজীবন করে যাবার নাগবে। ভোটে হামার কোনো কামত আইসে না।
 
সারাদিনে ১০ সিএফটি করে পাথর ভাঙতে হয় সকিনাদের। সাহায্যের আশা করেন একমাত্র এনজিওগুলোর কাজ থেকে। তাই তো শহরের কারো পদচিহ্ন পড়লে মনে করে এনজিও থেকে এসেছেন। হয়তো কোনো সাহায্য বা নতুন ঋণ দেওয়ার প্রস্তাবে।
 
অশিক্ষিত ও দরিদ্র এসব পাথর শ্রমিকদের প্রতিনিয়ত মালিকপক্ষ থেকে ঠকতে হয়। দৈনিক ১০ ঘণ্টা কাজ করার পর তাদের পারিশ্রমিক ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
 
ভজনপুর ইউনিয়নের বদরডাঙা গ্রামের পাথর শ্রমিক ওবায়দুল বলেন, পাথরের কাম করতে গিয়ে অনেক মারা যায়। কিন্তু অল্প সাহায্য দিয়ে শ্যাষ করে। কিস্তি দিতে দিতে হামরা শ্যাষ। কিস্তির টাকা না নিলেও চলে না। ভোটের সময় ছাড়া হামার গোরত আর কাহো আইসে না। এবার মুই ভোটে দিবার যাইম না।
 
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সম্রাট বাংলানিউজকে বলেন, পাথর শ্রমিকরা এ আসনে বড় ভোটার। তাদের ভোটে ফলাফল পরিবর্তন হতে পারে। অথচ তাদের জীবন-যাপন মানবেতর। নির্বাচনে অংশ নিলে এসব শ্রমিকদের ভাগ্যোন্নয়নের রোডম্যাপ নিয়ে কাজ করার আশ্বাস দেন তিনি।
 
তৃণমূলে অগ্রহণযোগ্য ছেলেকেই চান জমির উদ্দিন সরকার

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৪ ঘণ্টা, জুন ০৯,২০১৭
এমসি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।