ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

তিন দলেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব লালমনিরহাট সদরে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১২ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৭
তিন দলেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব লালমনিরহাট সদরে লালমনিরহাট

লালমনিরহাট থেকে: লালমনিরহাট সদর সংসদীয় আসনে দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিতে রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল।  এখানে আওয়ামী লীগের মধ্যে তিনটি গ্রুপ সক্রিয়।

এ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি আবু সালেহ মো. সাঈদ দুলাল দলীয় কর্মকাণ্ডে তেমন একটা সক্রিয় নন। অধিকাংশ সময় তিনি ঢাকায় অবস্থান করেন।

মাঝে মধ্যে এলাকায় এলেও দলের গুটি কয়েক নেতাকর্মী নিয়ে চলাফেরা করেন।   জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ পরিচালিত হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সিরাজুল হকের নেতৃত্বে আরেকটি গ্রুপ সক্রিয়। তবে দলের মধ্যে এই গ্রুপগুলো সক্রিয় থাকলেও প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব নেই বলে জানা গেছে।

দলের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমানের হাতে। মূলত দলের স্থানীয় সকল কর্মকাণ্ডে তিনিই নেতৃত্ব দেন এবং সার্বক্ষণিক তৎপর থাকেন। দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মীই রয়েছেন তার সঙ্গে। এমপির চেয়ে দলের মধ্যে তার প্রভাবই বেশি বলে জানা গেছে।    

জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন সহ-সভাপতি সিরাজুল হক। দল তাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। পরবর্তীতে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এ নিয়ে তার মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তবে গ্রুপিং দ্বন্দ্ব থাকলেও দলের কর্মসূচিতে সবাই অংশগ্রহণ করেন বলে জানা গেছে।

আগামী নির্বাচনে বর্তমান এমপি আবারো প্রার্থী হতে চান। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমানও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। ইতিমধ্যে তিনি প্রচারেও নেমেছেন বলে জানা গেছে। জাপা প্রার্থীর পোস্টার

এদিকে লালমনিরহাট সদর আসনে বিএনপি প্রার্থী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবীব দুলু। এলাকায় তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। এর আগে ২০০১ সালে তিনি এই আসনের এমপি ছিলেন। এলাকার মানুষের সঙ্গে তিনি মিশতে পারেন, যোগাযোগ রাখেন। এখানে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ও দলের প্রভাব আছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মানুষ যাতে ভোট দিতে যেতে না পারে সেজন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে অবস্থান নেয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের ভয়ে ১৯টি ভোট কেন্দ্রে কোন ভোটার যেতে পারেনি। ওই কেন্দ্রগুলোতে কোন ভোট পড়েনি বলেও জানা গেছে।   তবে এখানে বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলও রয়েছে।

অভিযোগ আছে, এখানে বিএনপিতে চলে দুলুর একনায়কতন্ত্র। তিনি যা বলেন, যা করেন সেভাবেই বিএনপি চলে। তার উপর দিয়ে দলের কেউ কথা বলতে পারেন না। তিনি যখন যাকে খুশি নেতা বানান আবার বাদ দিতে পারেন। এ ব্যাপ‍ারে কারও কিছু বলার থাকে না। দুলুর এই আচরণে দলের মধ্যে অনেকেই তার উপর ক্ষুব্ধ। বর্তমানে জাতীয় পার্টির নেতা একেএম মাহবুবুল আলম মিঠু এক সময় বিএনপি করতেন। দুলুর কারণেই তিনি বিএনপি ছেড়েছেন বলে জানা গেছে।

আগামী নির্বাচনে এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হতে পারেন দলটির কো-চেয়ারম্যান ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদের। ২০০৯ সালে তিনি এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। আবারও তিনি এ আসনে নির্বাচন করতে চান। এখানে জাতীয় পার্টি থেকে মাহবুবুল আলম মিঠুও মনোনয়ন চাইবেন।

জাতীয় পার্টির এই দুই নেতার মধ্যে ইতোমধ্যে বিরাট দ্বন্দ্বও তৈরি হয়েছে। ফলে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় জাতীয় পার্টি। দুই নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, দলের কোন কর্মসূচিতে জিএম কাদের উপস্থিত থাকলে মাহবুবুল আলম মিঠু যান না। আবার মাহবুবুল আলম মিঠু কোন কর্মসূচিতে থাকলে সেখানে জিএম কাদের যান না।

লালমনিরহাট সদরে আগামী নির্বাচনে কোন দলের অবস্থা ভালো জানতে চাওয়া হলে স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, তাদের অবস্থা ভালো। কিন্তু এমপি এলাকায় খুব একটা আসেন না। দলের মধ্যে গ্রুপিং এর কথা শোনা যায়। বিএনপির কার্যক্রম খুব একটা নেই। কিন্তু বিএনপি নেতা আসাদুল হাবীব দুলুর  জনপ্রিয়তা আছে। তিনি এবার নির্বাচন করতে পারেন। জাতীয় পার্টি থেকে জিএম কাদেরের কথা শোনা যাচ্ছে।

বাজারের চায়ের দোকানে এ বিষয়ে কথা হয় পৌর এলাকার বাসিন্দা রহমান মিয়ার সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের অবস্থাই ভাল। নির্বাচনে এই দলের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।    

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।