ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

‘হামার ছাওয়াল ছাড়া কাউরে দেখিবার চাও না’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৬ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৭
‘হামার ছাওয়াল ছাড়া কাউরে দেখিবার চাও না’ সজীব ওয়াজেদ জয় (ফাইল ফটো)

পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে:  সজীব ওয়াজেদ জয় ছাড়া কিছুই বোঝেন না রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনের মানুষ। এ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে জয়কে ছাড়া আর কাউকে দেখতে চান না তারা।

দল-মত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের সকলেই চান, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে জয়ই হবেন এ আসনের একমাত্র প্রার্থী।

সরেজমিনে গেলে ড. ওয়াজেদ মিয়ার পীরগঞ্জের বাড়ি ‘জয় সদন’- এর সামনে দাঁড়ানো লুৎফর রহমান, আশরাফুল ইসলাম ও রফিক মিয়া সাফ কথা জানিয়ে দেন, ‘হামার ছাওয়াল ছাড়া কাউরে দেখিবার চাও না এ সিটে’।

এ আসনের সংসদ সদস্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ২০১৪ সালের ২৮ জানুয়ারি উপ-নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক  আওয়ামী লীগের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘শিরীন শারমিনের বাড়ি নোয়াখালী জেলার চাটখিলে। তাই তিনি পীরগঞ্জের এমপি হবেন, এ অঞ্চলের মানুষের সেটি কোনোভাবেই  হজম হয় না’।

তিনি বলেন, ‘পীরগঞ্জে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। সকলেই জানেন, এ সবই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর জন্য, জয়ের জন্য’।

অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বিএনপির অবস্থা শোচনীয়। রংপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পীরগঞ্জ উপজেলা সভাপতি সাইফুল ইসলামের সঙ্গে সাবেক এমপি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা  নূর মোহাম্মদ মণ্ডলের দ্বন্দ্ব চরমে।

একটি সভাকে কেন্দ্র করে দলের এক কর্মী খুন হওয়ার পর নূর মোহাম্মদ এখন ওই হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি। এলাকার অনেকের অভিযোগ, যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেগুলোও পূরণ করতে পারেননি তিনি।

২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে এই নূর মোহাম্মদ মণ্ডলই আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের পরের নির্বাচনে এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি ভোটে শেখ হাসিনার কাছে পরাজিত হন তিনি। তবে তিনি দলবদল করে সেবার নির্বাচন করেছিলেন বিএনপি থেকে।    

এক সময়কার জাতীয় পার্টির ঘাঁটি বলে পরিচিত এ আসনে এখন আর দলটি তেমন শক্তিশালী নয়।   জাপার প্রার্থী হিসেবে মাঠে দৌঁড়ে বেড়াচ্ছেন উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম যাদু মিয়া। স্বল্প শিক্ষিত হওয়ায় তার প্রতি সমাজের এলিট শ্রেণীর সমর্থন নেই। নারীঘটিত ও স্থানীয়ভাবে ত্রাস সৃষ্টিরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যে কারণে জাপার সামান্য সম্ভাবনাটুকুও প্রার্থী সংকটে সুদূরপরাহত বলে ধারণা ভোটারদের।

অন্যদিকে পীরগঞ্জে জামায়াতের কোনো অবস্থান নেই। দলটির নেতা মওলানা নূরুল আমিন বছরের ৯/১০ মাস পলাতক থাকেন। অন্য নেতা অ্যাডভোকেট আবদুস সালামেরও কোনো কার্যক্রম নেই।

অনেকে জানান, এ আসনে বরাবরই আওয়ামী লীগের বিশাল একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। হিন্দু ভোটারের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ হাজারের মতো। স্বাধীনতার পরের সবগুলো নির্বাচনেই সম্মানজনক ভোট পেয়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল। কখনও বিজয়ী হয়েছে, আবার কখনও অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছে।

নব্বইয়ে এরশাদের পতনের পর আবেগতাড়িত হয়ে জাতীয় পার্টির প্রতি ঝুঁকে পড়েন এলাকার লোকজন। জেলে থেকেও পীরগঞ্জসহ রংপুরের ৫টি আসনে বিজয়ী হন এরশাদ। পরে তিনি ছেড়ে দিলে উপ-নির্বাচনে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন এমপি হন জাপার টিকিটে। এরপর টানা কয়েকবার জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাই বিজয়ী হন।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচিত হয়ে এ আসন ছেড়ে দিলে উপ-নির্বাচনে জয়ী হন আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পপতি আবুল কালাম আজাদ।

আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, শেখ হাসিনা বা সজীব ওয়াজেদ জয় যদি এ আসনে প্রার্থী না হন, তবে সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদের সম্ভাবনা রয়েছে। ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার পরিবারের একাধিক সদস্যের নামও আলোচিত হচ্ছে।

ড. ওয়াজেদ মিয়ার পীরগঞ্জের বাড়ি ‘জয় সদন’।  ছবি: বাংলানিউজআবুল কালাম আজাদ এমপি থাকাকালে পীরগঞ্জের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। রংপুর বিভাগ ঘোষণা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেওয়া এবং উত্তরবঙ্গ থেকে মঙ্গা বিতাড়িত হয়।

আর বর্তমান এমপি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সময়ে পীরগঞ্জে মেরিন একাডেমি স্থাপন, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, পীরগঞ্জ পৌরসভা ঘোষণা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ এবং উপজেলার দুই প্রান্তে ১০ শয্যার দু’টি হাসপাতাল নির্মাণসহ উন্নয়নের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে।  

এলাকাবাসীর মতে, এসব উন্নয়ন কার্যক্রমে জাতীয় পার্টির প্রতি মোহ কাটতে শুরু করেছে তাদের। অতীতের যেকোনো সময়ের ‍তুলনায় পীরগঞ্জে আওয়ামী লীগের অবস্থান আরও ভালো হয়েছে।

তবে ফেনসিডিল ও ইয়াবাসহ মাদকের বিস্তার নিয়ে আতঙ্কিত এলাকাবাসী। এর সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ক্ষেত্রবিশেষে মূলদলের কিছু নেতার পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগও রয়েছে। এ কারণে দলের সুনাম কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৭
কেজেড/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।