ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

কুড়িগ্রাম-২: জাতীয় পার্টির দুর্গ আ’লীগের দখলে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩১ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৭
কুড়িগ্রাম-২: জাতীয় পার্টির দুর্গ আ’লীগের দখলে রাজারহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নূর। ছবি: শামীম হোসেন

কুড়িগ্রাম থেকে:  বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সর্বশেষ জেলা কুড়িগ্রাম। ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এ জেলার মোট ৯টি উপজেলা নিয়ে ৪টি সংসদীয় আসন।

এর মধ্যে সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ী উপজেলা নিয়ে কুডিগ্রাম-২ আসন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বিরোধীদলীয় (জাতীয় পার্টি) চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

তিনি এ আসন থেকে উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

একসময় গোটা কুড়িগ্রাম জাতীয় পার্টির (এ) দখলে ছিল। সময়ের পরিক্রমায় এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। বলতে গেলে অনেকটা উল্টে গেছে! এ আসন এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাতে। সাংগঠনিক দিক বিবেচনায় আওয়ামী লীগের পরেই এখানে জাতীয় পার্টির অবস্থান। যদিও এ ব্যবধান অনেক বেশি। আর বিএনপির অবস্থা এখানে একবারেই নাজুক। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলই তাদের সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে।
 
জাতীয় পার্টির দুর্গ কি করে আওয়ামী লীগের দখলে? কেন উল্টে গেলো ভোটের পাশা? উত্তর খুঁজতে কথা হয় সদর ও রাজারহাট উপজেলার সাধারণ ভোটার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে।

তারা জানান, এক দশকের কাছাকাছি কোনো ধরনের কমিটি না থাকায় সাংগঠনিকভাবে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টি। দলের হতাশাগ্রস্ত নেতাকর্মীরা যোগ দিয়েছে অন্যদলে। সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে নেতৃত্বের সঙ্কট। বিপরীতে জাতীয় পার্টির এমন বিপর্যস্ত দশার সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেছে আওয়ামী লীগ।

এ সংসদীয় আসনে জাতীয় পার্টির কাউন্সিল বা নতুন কমিটি না ঘোষণার পেছনে এমপি তাজুল ইসলামের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতাকর্মীদের। তাদের মতে, নিজের আধিপত্য ধরে রাখতেই কমিটি হতে দিচ্ছেন না তিনি। এজন্য হতাশ হয়ে অনেক নেতাকর্মী অন্য দলে যোগ দিচ্ছেন।

জাতীয় পার্টির মতো বিএনপির অবস্থানও এ আসনে নাজুক। দলের কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বললেই চলে। জাতীয় এবং দলীয় কর্মসূচিগুলোতে থাকে না কোনো তৎপরতা। আর যেসব কর্মসূচি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয় সেগুলোও নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণে ঠিকঠাক পালন হয় না। এ জন্য সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই দুষছেন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বাড়িও এ আসনে। তবে এখানকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই তার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদর উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, উনি তো বিএনপির ‘দফতরের নেতা’, তৃণমূলের খোঁজ জানবেন বা রাখবেন কি করে। তাকে এখানকার কেউ তেমন একটা চেনেও না। কুড়িগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।  ছবি: শামীম হোসেন

যদিও দলের সাংগঠনিক অবস্থা ভালো না, তার মধ্যেও দু’টি গ্রুপে বিভক্ত এখানকার বিএনপি। তবে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু ও যুগ্ম-সম্পাদক সোহেল হোসেন কায়কোবাদ।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সবার আগে উঠে আসে বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক ও সাবেক এমপি জাফর আলীর নাম। নেতাকর্মীদের কাছে তিনি দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ। রাজনীতির শুরুতে সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন থেকে বেশ কয়েকবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
 
নির্বাচনী হালচাল ও সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজারহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আবু নূর বলেন, যদিও কুড়িগ্রামের চারটি আসনের একটাও আমাদের না, জোটের স্বার্থেই অন্যদের ছেড়ে দিতে হয়েছে। তবুও আমরা ভাগ্যবান। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে সব কিছু না চাইতেই পাচ্ছি।

কুড়িগ্রাম-২ আসনের নির্বাচনে জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান জাফর আলী অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। এটা তিনি গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রমাণ করে দিয়েছেন। এমনকি তার সমকক্ষ রাজনীতিবিদ অন্য দলেও নেই। সেজন্য এ আসনে তার কোনো বিকল্প নেই।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরও তিনি প্রতিটা উপজেলায় সপ্তাহে দু’একবার করে যান। তিনি বসে থাকার মতো লোক না। প্রতিটা নেতাকর্মীর খোঁজ-খবর রাখেন। তবে তিনি সম্প্রতি ব্রেন স্টোকে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

আর আমাদের নিজ দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকনসহ আরও বেশ কয়েকজন রয়েছেন।

সব ঠিক থাকলে তিনি নিজেও এবার নির্বাচন করতে পারেন বলে আশা প্রকাশ করেন আবু নূর মো. আক্তারুজ্জামান।

এ আসনের বর্তমান এমপি তাজুল ইসলাম প্রসঙ্গে এ আওয়ামী লীগ নেতা জানান, তার সঙ্গে দেখা করতে হলে ঢাকা যেতে হয়, তিনি তো এলাকায় আসেনই না।

দলে কিছুটা কোন্দল রয়েছে স্বীকার করে আবু নূর জানান, বড় দলে একটু আধটু কোন্দল থাকবে, এটা স্বাভাবিক। তবে দলের স্বার্থে আমরা সবাই এক।

এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৪১৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ২১ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৮ জন।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩০ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৭
এসএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।