ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

মিঠাপুকুর আ’লীগে গ্রুপিং, বিভক্ত ভোটাররা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৫ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৭
মিঠাপুকুর আ’লীগে গ্রুপিং, বিভক্ত ভোটাররা! ছবিতে বাঁ থেকে: এমপি আশিকুর, এমপি পুত্র রাশেক ও আ’লীগ নেতা জাকির

মিঠাপুকুর (রংপুর) থেকে: তুমুল জনপ্রিয়তার পরও জাতীয় পার্টির (এরশাদ) অগোছালো সাংগঠনিক কার্যক্রম আর এলোমেলো সিদ্ধান্তে লাভের গুড়টুকু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পেলেও গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব ও টেন্ডারবাজিতে উন্নয়ন থমকে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে মিঠাপুকুরে (রংপুর-৫)।

এখানকার এমপি এইচ এন আশিকুর রহমানের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের। একই দলের হয়েও পাল্টাপাল্টি অভিযোগে লিপ্ত উভয় পক্ষ।


 
১০ নং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মমতাজ বলেন, ৬৫ বছর বয়স আমার। পারিবারিকভাবেই করি আওয়ামী লীগ। গোটা এলাকা চিনি। কিন্তু বর্তমান এমপি বলতে পারবেন না এ আসনের আনাচ-কানাচের নাম। আমাদের নেতা জাকির ভাই, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন সরকার ( ৫৪)। আমরা আওয়ামী লীগকে চিনি, আর এখানে জাকির ভাইকে চিনি। এছাড়া আর কিচ্ছু বুঝি না।
 
এইচ এন আশিকুর রহমান এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ। এ আসনের চারবারের এমপি। ১৯৯৬ সালে ছিলেন বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী। এমন একজন প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নামে কেনইবা অভিযোগ করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মমতাজ বলেন, কারণ তিনি নিজেরটাই ভালো বোঝেন।
 
পাশ থেকে এলেকজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, তার ছেলেকে প্রতিষ্ঠা করতে চান তিনি। এ জন্যই অন্যদের কোনঠাসা করে রাখাটা তার রাজনৈতিক কৌশল।
 
এমপি পুত্র রাশেক রহমান (৪০) আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক। টেলিভিশনের পরিচিতমুখ। বিভিন্ন টক শোতে তার উপস্থাপনা সারা বাংলায় নজর কাড়লেও এলাকার মানুষ তাকে বাবার আসনে উত্তরসূরী হিসেবেই জানেন।
 
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আশিকুর এমপি তার ছেলে রাশেককেই প্রতিষ্ঠা করতে চান বলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন সরকারকে তিনি মূল্যায়ন করেন না। উল্টো ধর্ষণ মামলা দায়ের করে জেল খাটাতে চেয়েছিলেন।  
 
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জাকির হোসেন সরকার বলেন, জনগণ চাইলে নির্বাচন করবো। আমি জনগণের জন্য প্রস্তত; এছাড়া এখানকার ৮০-৯০ শতাংশ মানুষই তো আমার সমর্থনে। বিগত ভোটগুলোতে আশিকুর সাহেবের পক্ষে কাজ করাতেই তার বিজয় সুনিশ্চিত হয়; সেই অভিজ্ঞতাও কাজে দেবে।
 মিঠাপুকুরে ভোটারদের আড্ডা।  ছবি: সৈয়দ ইফতেখার আলম
তিনি বলেন, নিঃস্বার্থ রাজনীতি করলাম। এখন আপনারাই (উপস্থিত জনতা) বলেন, আমি কী ধরনের প্রতিহিংসার শিকার…।
 
জায়গী স্কুল ও কলেজের শিক্ষক উজ্জ্বল চন্দ্র বর্মণ বাংলানিউজকে বলেন, জাকির ভাইকে যখন-তখন পাওয়া যায়। রাত ২/৩টা সময়ও। জনগণের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা এমপি সাহেবের পছন্দ নয়। তাই তাকে স্থানীয় রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার অপচেষ্টা হচ্ছে।
 
জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়েও এখানে জটিলতা রয়েছে। সভাপতি মোজাম্মেল হক মিন্টু মিয়া- এমপি পক্ষের। আর সাধারণ সম্পাদক জাকিরকে সাইড করে রাখা হয়েছে, তাকে ডাকা হয় না স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোনো অনুষ্ঠান-আয়োজনেও। এ তালিকায় রয়েছেন যুবলীগ সভাপতি কামরুজ্জামানও। জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোতাহার হোসেন মওলাও একই পথের।
 
জনগণ চাইলে ব্যবসায়ী মওলাও এমপি পদে লড়তে রাজি বলে জানা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিঠাপুকুর গোসাই বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, নির্বাচনের এখনও বছর খানেক বাকি। দল গুছিয়ে উঠতে না পারলে আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ হয়ে জাতীয় পার্টি বা জামায়াতের দিকে চলে যাবে। সুতরাং সিট বাঁচাতে আওয়ামী লীগকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।
 
শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরত্ব। সে অনুযায়ী মিঠাপুকুরের উন্নয়নটা আরও বলিষ্ঠ হতে পারতো। প্রায় ২০ বছর এমপি থেকেও আশিকুর দূর করতে পারেননি বেকার সমস্যা, চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মানুষের মধ্যে হতাশা, ১০ টাকার চাল কিনতে ডিলারকে ৩০০ টাকা অতিরিক্ত দেওয়ার তরিকা, স্থানীয় ঐতিহ্যবাসী দুই কলেজ (মিঠাপুকুর মহাবিদ্যালয় ও শঠিবাড়ি কলেজ) জাতীয়করণ না করে অন্য একটিকে করা, কলকারখানা এবং স্থানীয় কর্মসংস্থান তৈরি করতে না পারার মতো ব্যর্থতাকে এখন অভিযোগ হিসেবেই সামনে আনছেন সাধারণ ভোটাররা।  
 
মিঠাপুকুর বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন আদিবাসী পাড়ার ভোট নৌকার। তবে স্থানীয়ভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তারাও হতাশ, জানালেন গৃহিণী বিষু মনি।

পায়রাবন্দের এক অটো চালকের অভিমত, ১৯৯৬ সালে তিনি যে উন্নয়ন চালু করছিলেন, তারপর আর কোনো নতুনত্ব আসেনি। এখানে নৌকার নির্দিষ্ট কিছু ভোট আছে, সুতরাং হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে; আর জাতীয় পার্টিতে মতের মিল না হলে- মুনাফাটা লীগের পক্ষেই যাবে।

এসব বিষয়ে আশিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, কোনো বিভক্তি নেই, সাধারণ লোকজনই এটা ভালো জানেন। যদি বিভক্তি থাকতো তবে এখানকার ১৭ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে প্রত্যেকটি ব্যক্তি পাস করলেন কীভাবে? যারা অভিযোগ করেন তারা কথায় না বলে কাজে করে দেখাক। সারের সঙ্গে মাটি মিশিয়ে ব্যবসা করে ফাঁসা জাকিরকে আমিই বিভিন্ন সময় বাঁচিয়েছি, তার এমন বিরোধিতা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
 
আপনি না ছেলে রাশেক, আগামীতে কে? এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, রাশেক যথেষ্ট জনপ্রিয়, আর আমিও যথেষ্ট স্বাস্থ্যবান।
 
এ বিষয়ে রাশেক রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনের সবরকম প্রস্তুতি নেওয়া আছে আমার, তবে স্যার (বাবা) যতদিন আছেন তিনিই নির্বাচন করবেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৭
আইএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।