ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

‘অ্যালা মানুষ দেখি ভোট দেমো! আর মার্কা দেইকপার নই’

শামীম হোসেন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৭
‘অ্যালা মানুষ দেখি ভোট দেমো! আর মার্কা দেইকপার নই’ ‘অ্যালা মানুষ দেখি ভোট দেমো! আর মার্কা দেইকপার নই’

ভূরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম থেকে: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখনও তৃণমূল পর্যায়ে আসতে শুরু করেননি মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা। তবে এখন থেকেই ভোটের নানা আলাপ-আলোচনায় মেতেছেন সাধারণ মানুষ ও ভোটাররা।

ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরে থাকা নেতাদের আচরণ, বিগত সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভূমিকা উঠে আসছে চায়ের দোকানে, বাজারে, হাটে। নানা অপ্রাপ্তি-অসন্তুষ্টি সাপেক্ষে এখন থেকেই অনেকেই সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছেন, কার বাক্সে ফেলবেন কুড়িগ্রাম-১ (ভূরুঙ্গামারী-নাগেশ্বরী) আসনের সোনালি টিকিট।

ভোটারদের অভিযোগ, পরপর চারবারের নির্বাচিত এ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাককে তারা কাছে পান না বহুদিন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিনিধিকে তারা বুকে টেনে নিয়েছেন বার বার, করেছেন জনপ্রতিনিধি। কিন্তু ঈদ ছাড়া এলাকায় তার চেহারাও দেখা যায় না!
‘অ্যালা মানুষ দেখি ভোট দেমো! আর মার্কা দেইকপার নই’
শনিবার (১৭ জুন) ভূরুঙ্গামারী হাটে গেলে বেশ কয়েকজন ক্রেতা-বিক্রেতা বলেন, ‘তার কথা আর কি বলবো! আমাদের প্রতিনিধি, আমাদেরই খোঁজ নেন না!’

ভূরুঙ্গামারী উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা রাশেদুন নবী লালুও বিষয়টি স্বীকার করে নেন, ‘রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পাল্টাচ্ছে। সংসদ সদস্য মোস্তাক নিজে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। কিন্তু এছাড়া সাংগঠনিক কার‌্যক্রম নেই। এক দশকের বেশি সময় কাউন্সিল হয়নি। ফলে দলীয় কার‌্যক্রম হয়ে পড়েছে ব্যক্তি নির্ভর। অন্যদিকে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে তার এলাকায় আসা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না মানুষ! এ অবস্থায় ভোট অন্য বাক্সে চলে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়’।
‘অ্যালা মানুষ দেখি ভোট দেমো! আর মার্কা দেইকপার নই’
জোটের বাইরে গিয়ে আওয়ামী লীগ এবং একই সঙ্গে বিএনপির প্রার্থী যদি নির্বাচন করেন, তবে এবার জাপার দুর্গ ভেঙে পড়বে এমন মন্তব্যও ছিল হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের মুখে!

সাধারণের এমন মন্তব্যে মুহূর্তে আষাঢ়ের মেঘ জমা হয় তৃণমূলের ত্যাগী এই নেতার মুখে। নিজেকে সামলে নিয়ে লালু বলেন, ‘এখনও সময় আছে। ওপরের নেতারা আছেন, তারাই সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন’।

বাজারের বাইরেও এ আলোচনা এখন মুখরোচক। গ্রামের বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও একই ধরনের মন্তব্যেই তাদের কথা জানান। আর ক্ষোভের কথা জানান উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিতরা।
 
হাটের একপাশের জমিতে পাটখড়ি ঘেরা একটা ঘর তুলে বাস করছেন আজিবুন নেছা। চায়ের দোকানে থালা-বাসন মেজে দিন চলতো তার। গত বর্ষায় পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে যাওয়ার পর থেকে অভাবের শেষ নেই। নিঃসন্তান এই বৃদ্ধা সরকারি কোনো ভাতা পান না। ইউপি মেম্বারের দরজায় ঘুরে ঘুরে ছেঁড়া শাড়ির আঁচলে কেবল জমা করেছেন ঠুনকো আশ্বাস!
‘অ্যালা মানুষ দেখি ভোট দেমো! আর মার্কা দেইকপার নই’
প্রবীণেরাও তাই বলেন, ‘হামরা আগোত মানুষ চিনি নাই। লাঙ্গল দেখিয়া দ্যাশের ছাওয়ালের মার্কাত ভোট দিছি। অ্যালা ওমরা হামাক দেখে না, খোঁজ-খবরও নেয় না। হামরা অ্যালা মানুষ দেখি ভোট দেমো! আর মার্কা দেইকপার নই’।

কামার রোকনুজ্জামান বলেন, ‘অনেক দেখলাম। এবার যে প্রার্থীর জেতার সম্ভাবনা কম, তাকেই ভোট দেবো। প্রতিশ্রুতিতে আর চিড়া ভিজবে না’।

আঙুল উঁচিয়ে তার সহকর্মীকে দেখিয়ে রোকন আরও বলেন, ‘চেংড়াকালে বউ মইরচে, অ্যালাও বিয়া করে নাই। নিজের প্যাটত ভাত দিবার পায় না, বিয়া করি বউওক খাওয়াইবে কি! হামরা কাঁইও বেকার নোয়াই। সুযোগ-সুবিধার অভাবে হাতে কর্ম না থাকায় হামারগুলার দিন ফিরব্যার লাইগছে না। ভোটের আগোত বড় বড় কতা কয়, অমুক কইরবে, তমুক কইরবে। ভোট ফুরাইলে কাঁইও খোঁজ রাখে না’।

বাংলাদেশ সময়: ০৬২১ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৭
এসএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।