ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

‘এরশাদ কান্দিলে ভোট আছে কিসু’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৭ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
‘এরশাদ কান্দিলে ভোট আছে কিসু’ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ (ফাইল ছবি)

কাউনিয়া ও পীরগাছা (রংপুর) থেকে: জাতীয় রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি (জাপা) বরাবরই ‘বিগ ফ্যাক্টর’, এ কথা খোদ পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের।
 

তবে এই ফ্যাক্টর দিন দিন কমছে। নানা কারণেই এরশাদের মতো যৌবন নেই তার দলেরও!
 
কিছু কিছু মানুষ অবশ্য এখনও সাবেক এই রাষ্ট্রপতিকে চান।

তাদের ভাষ্য, ‘চাচার’ জন্য মন থেকে কিছু ভোট তো আছেই।
 
কাউনিয়া ও পীরগাছা ‍উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৪ আসনের ভোটারদের কাছ থেকে জানা যায়, একটা সময় এই অঞ্চলটা এরশাদেরই ছিল। ঘরে ঘরে জাপার ভক্ত ছিলেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় মানুষ আস্থা হারাতে বাধ্য হয়েছেন।

যার কারণ হিসেবে অনেকেই বলছেন, মনোনয়ন বাণিজ্য। কোটি টাকা না হলে নাকি দলটির টিকিটই পাওয়া যায় না। এ আসনের ইতোপূর্বের কাণ্ডারী করিম উদ্দিন ভরসা বহু টাকা ঢেলেছেন এরশাদের পেছনে।  
 
নির্বাচন এলে তো কথাই নেই, কথিত আছে, দলের নির্বাচনী ব্যয়ের অধিকাংশই যায় তার পকেট থেকে।
 
কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌরসভার সামনে মুজিব চত্বর, হক বাজার। সেখানে ফোন রিচার্জ ও মোবাইল মেরামতের দোকানের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম ও মাহফুজ আহমেদ।
কাউনিয়ায় জাতীয় পার্টির অফিস, ছবি: বাংলানিউজ
 
স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে তুমুল আলোচনা জমে সে দোকানে। জড়ো হন আরও অন্তত জনা দশেক লোক। তাদের মন্তব্য ছিল এমন, এরশাদের জোয়ার না থাকলেও আঞ্চলিক টান থেকে কিছু ভোট ব্যালটে পড়বে। কিন্তু সে ভোট জেতার জন্য কতটুকু যথেষ্ট তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ভালোই জানেন। ভোটের আগে প্রার্থীর পক্ষে এরশাদ এসে কান্না করে দিলে মানুষের মন নরম হবে, ভোট পাবেন কিছু।
 
এ কথা নিয়ে উপস্থিত জনতাকে রীতিমতো রসিকতার সুরে আঞ্চলিক ভাষায় বলতে শোনা যায়, ‘এরশাদ কান্দিলে ভোট আছে কিসু’!
 
হারাগাছে একটি বড় অংশ বিড়ি শ্রমিক। জানা যায়, তাদের ভোট অন্তত হাজার ৪০ তো হবেই। শ্রমিক নেতাদের মত, এসব নিম্ন আয়ের মানুষের ভোট আওয়ামী লীগের দিকে দিনে দিনে ধাবিত হয়েছে। তারা জাতীয় পার্টিকে সেভাবে এখন আর মূল্যায়ন করেন না। এর কারণও আছে। দলটির প্রার্থীদের ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তেমন কোনো অবদান নেই। ব্যবসা করেন তারা ঢাকাসহ অন্য জেলায়। বিড়ি শ্রমিকদের প্রত্যাশা তারা শ্রম দেবেন, তবে বিড়ি শিল্পে আর নয়। শ্রমিক ভোটারদের জন্য যদি কিছু করা যেতো তবে তাদের ভোট জাতীয় পার্টিতে থাকতো। আওয়ামী লীগও যে খুব একটা পদক্ষেপ নিয়েছে তা নয়। তবে সামগ্রিকভাবে রাস্তাঘাট ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছেলেমেয়েদের বিনা বেতনে পড়াশোনা, চিকিৎসায় সহজলভ্যতা চাহিদা খানিক হলেও পুষিয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
 
কাউনিয়ার মীরবাগ বাসস্ট্যান্ডের (মেম্বার মার্কেট) কাজল হোটেলের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার মোফাজ্জল বাংলানিউজকে বলেন, এরশাদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। তবে বিশ্বাস এখন আর নেই। সুতরাং নির্দিষ্ট ভোটই পাবে তার দল; যা প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য যথেষ্ট হবে না বলে মনে করি। কিন্তু ‘মহাজোট’ আকারে এগিয়ে গেলে হিসেবটা অন্যই হবে।
 
স্থানীয় ভোটার মশিউর রহমান (৫০) দাবি করেন, সুষ্ঠু ভোট হলে জাতীয় পার্টির জয় হবে। জিততে পারে- এখানে একটা তবে/কিন্তু আছে। আর তা হলো জাপার সেভাবে কর্মীই নেই। যারা এখন জাপা করেন, তারা মনের টানে। এই টান দিয়ে আর যাই হোক নির্বাচন জেতা যায় না, সাংগঠনিক শক্তি, ভিত্তি ও কার্যক্রম লাগে।  
 
অরেক উপজেলা পীরগাছা বাজারের সামনে আড্ডা দেওয়া একদল কৃষক বলেন, জাতীয় পার্টির প্রতি মানুষের আবেগ ১৯৯৬ সালের পর থেকে কমতে কমতে এখন এমন হয়েছে যে, কিছুই করার নেই। এর একক দায় এরশাদকেই নিতে হবে, তিনি দলীয় দুর্নীতি ছাড়াও সকাল ও বিকেলের কথার সত্যতা রাখেননি।
পীরগাছা বাজারের সামনে আড্ডা দেওয়া একদল কৃষক, ছবি: বাংলানিউজ
গত ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের নিষেধাজ্ঞার পরও জাপা থেকে ভোটে অংশ নেন করিম উদ্দিন ভরসা। হেরে যান এক লাখ ০৭ হাজার ৯৬ ভোটের ব্যবধানে। আওয়ামী লীগের টিপু মুন্সি পান এক লাখ ১৩ হাজার ০৮২, আর করিমের ছিল মাত্র পাঁচ হাজার ৯৮৬ ভোট।
 
রংপুর-৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) নৌকার টিপু মুন্সি। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিনিধি তিনি। এ আসনে জাপার মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন অন্তত দুইজন। তারা হলেন যুবলীগ থেকে সদ্য জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়া বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল, আর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ মাহবুবুর রহমান। স্বল্পসময়েই এরশাদের কাছের লোক হয়ে গেছেন বেঙ্গল। বাড়ি কাউনিয়াতে। পদে এখন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। শুরু করেছেন পৃষ্ঠপোষকতাও। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেঙ্গলই হতে যাচ্ছেন এ আসন থেকে জাপার মূল প্রতিনিধি।
এরশাদ ও সেলিম বেঙ্গল
বিএনপি থেকেও এখানে প্রার্থী থাকবে। জেলা নাগরিক ঐক্যের সদস্য রফিকুল ইসলামও মনোনয়ন জমা দিয়ে স্বতন্ত্র লড়বেন বলে সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়।

চলবে...

আরও পড়ুন:
‘লাইসেন্স দেন-ট্যাক্সও বাড়ান, মারেন শুধু বিড়ি শ্রমিকরে’
মিঠাপুকুর আ’লীগে গ্রুপিং, বিভক্ত ভোটাররা!
‘সুষ্ঠু ভোট হলে এমপি জাপার’
বিএনপির অফিস এখন আম-কলার আড়ৎ!
হাইওয়েতেও ইফতারির পূর্ণ আনন্দ!
বাংলাদেশ জিতবে আশা গ্রামবাসীর! 

 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
আইএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।