ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

কে হবেন বন্দর আসনের কাণ্ডারি, আগ্রহ থাকে ব্যবসায়ীদের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৭
কে হবেন বন্দর আসনের কাণ্ডারি, আগ্রহ থাকে ব্যবসায়ীদের চট্টগ্রাম বন্দর।

চট্টগ্রাম: দেশের অর্থনীতির সিংহভাগ রাজস্ব আয়ের যোগানদাতা চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান এখানে। আছে নৌঘাঁটি, বিমানবাহিনীর ঘাঁটি আর তেল স্থাপনা,  আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর ও দুটি ইপিজেড।  চট্টগ্রাম-১১ অর্থাৎ বন্দর আসনের গুরুত্ব তাই বেশীই তো হবে। সারাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হওয়ায়  স্বাভাবিকভাবেই এ আসনের জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে আগ্রহ আর কৌতূহল থাকে ব্যবসায়ীদের।

১৯৯০ সালের পর সংসদীয় গণতন্ত্রে উত্তরণের সময় থেকে এই সংসদীয় আসনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরাই।   ১৯৯১ সাল থেকে তিন দফা জিতে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

  পরবর্তীতে দুই দফায় নির্বাচিত হয়ে এখন পর্যন্ত প্রতিনিধিত্ব করছেন এম এ লতিফ।   দুজনই নেতৃত্ব দিয়েছেন চট্টগ্রামের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন চেম্বার অব কমার্সের।

আরেকটি সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে।   স্বাভাবিকভাবে তাই চট্টগ্রামের তথা দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, বন্দর ব্যবহারকারীদের আগ্রহ আর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছে এই আসন।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আমিরুল হকের সঙ্গে। সজ্জন, রাজনীতিবিমুখ হিসেবে এই ব্যবসায়ীর পরিচিতি আছে। কিন্তু বন্দর আসনের প্রশ্নে রাজনৈতিক ভাবনার উর্দ্ধে নন তিনি।  

আমিরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, পাকিস্তান আমল থেকে বন্দর আসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।   স্বাধীনতার পর এর গুরুত্ব আরো বেড়েছে।   দেশের অধিকাংশ কী-পয়েন্ট ইনস্টলেশনের (কেপিআই) অবস্থান এই আসনে।   সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমাদের অর্থনীতির লাইফলাইন বন্দর আছে এখানে।   সুতরাং সারাদেশের ব্যবসায়ীদের নজর থাকে এই আসনের দিকে।

এ সময় আলাপে কিছু অপ্রাপ্তি আর বঞ্চনার কথাও তুলে ধরেন আমিরুল হক।

‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়েও আমার মনে হয় এই আসনটি সবচেয়ে অবহেলিত।   এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।   স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত একটি নতুন রিফাইনারি হয়নি।   ৬-৭টা জেটি হয়েছিল।   পরে এনসিটি হল।   এগুলো তো পর্যাপ্ত নয়।   অবকাঠামোগত দিক থেকেও তো পিছিয়ে আছে।   যানজটের কথা আর কী বলব !’ বলেন আমিরুল হক

এক কথায় চট্টগ্রাম-১১ আসনের জনপ্রতিনিধির গুরুত্ব বোঝালেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম।    বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা এ আসনে এমন একজন প্রতিনিধি চান যার পলিসির সঙ্গে ব্যবসায়ীদের পলিসি মিলে।   যিনি থাকলে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ থাকবে।   ‍অর্থনীতির অগ্রগতির জন্যও দরকার এমন জনপ্রতিনিধি।

সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি আকতার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এই আসনে এমন একজন জনপ্রতিনিধি দরকার, যিনি চট্টগ্রাম বন্দরকে রাজনীতির উর্দ্ধে রাখবেন।   বন্দর নিয়ে কারো রাজনীতি করা ঠিক না।   কারণ এটা দেশ ও জাতির বন্দর।   এই বন্দরকে ২৪ ঘণ্টা সচল রাখতে হবে।

বিজিএমই’র প্রথম সহ-সভাপতি মো. মঈনউদ্দিন মিন্টুর মতামতও প্রায় একই।   তিনি  বলেন, একজন সংসদ সদস্যকে অবশ্যই বন্দরের প্রতি কমিটেড হতে হবে।   কারণ এই বন্দর দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র।   সংসদ সদস্য যদি বন্দরের সঙ্গে যুক্ত থাকেন এবং কমিটেড থাকেন, তাহলে বন্দরও সচল থাকে আর অর্থনীতির অগ্রগতিও ঠিক থাকে।

তবে চট্টগ্রাম বন্দর সচল রাখা কিংবা ব্যবসাবান্ধব নীতি ঠিক রাখার জন্য যে ব্যবসায়ীদেরকেই নির্বাচিত করে সংসদে পাঠাতে হবে এমন চিন্তার সঙ্গে একমত নন বলে জানান অনেক ব্যবসায়ী।   তাদের মতে, অনেক রাজনীতিক আছেন যাদের চিন্তায়, মননে আর ভাবনায় আছে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি।   বন্দর সচল রেখে অবকাঠামোগত আরও উন্নয়ন যেন কেন্দ্র থেকে আদায় করে আনতে পারে, এমন পোড়খাওয়া রাজনীতিকেরও দরকার আছে।

চট্টগ্রাম বন্দরসহ স্পর্শকাতর স্থাপনার বাইরে আগ্রাবাদ-হালিশহর, বন্দর-পতেঙ্গা মিলিয়ে বসবাস করেন কয়েক লাখ সাধারণ মানুষ।   আছে বিশাল শ্রমিকশ্রেণি।   এদের ভোটেই নির্বাচিত হন জনপ্রতিনিধি।  

সিইপিজেডের এক কারখানায় চাকরি করেন বন্দর আসনের গোসাইলডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির।    বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সন্ধ্যা ৬টায় ইপিজেডের মোড় থেকে গাড়িতে উঠলে মাত্র ১০ কিলোমিটারের পথ পার হতে সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা।   কখনো কখনো তার চেয়েও বেশি। সকাল ৭টা থেকে রাত ১২টা,  সবসময়ই যানজট পরিস্থিতি একই।

বন্দর এলাকার বাসিন্দা খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বন্দর আসনের বিভিন্ন এলাকায় এখন যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে সেটা ভয়াবহ।   সামান্য বৃষ্টি হলে এবং জোয়ারের পানিতে আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহর হাঁটু থেকে কোমর পানিতে ডুবে যায়।   এই পরিস্থিতি গত কয়েক বছরে সৃষ্টি হয়েছে।   যদিও সিটি করপোরেশনের কাজ, কিন্তু নিয়মিত খাল খনন, নালা পরিষ্কার করার বিষয়ে জনপ্রতিনিধির নজর থাকতে হবে।

দক্ষিণ-মধ্য হালিশহরের এক নম্বর সাইটের বাসিন্দা রাজীব দত্ত বাংলানিউজকে বলেন, মহেশখালে বাঁধ দেয়ার পর থেকে আমরা জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছি।   আন্দোলনের মুখে মহেশখালের বাঁধ কাটা হয়েছে।   কিন্তু সেটি পরিষ্কার করা হয়নি।   এজন্য জোয়ার এবং বৃষ্টির সময় আমরা পানিবন্দি হয়ে থাকছি।   একজন জনপ্রতিনিধি ব্যবসাবান্ধব যেমন হবেন, তেমনি তার এলাকার নাগরিক সমস্যার দিকেও দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৭
আরডিজি/টিসি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।