ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

ভরসন্ধ্যায় নির্বাচনী উত্তাপ রাজশাহী মহানগর আ’লীগ অফিসে

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৭
ভরসন্ধ্যায় নির্বাচনী উত্তাপ রাজশাহী মহানগর আ’লীগ অফিসে ভরসন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসে নেতাকর্মীদের ভিড়। ছবি: আসিফ আজিজ

রাজশাহী থেকে: সিটি করপোরেশন নির্বাচন সন্নিকটে। প্রার্থীও মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। শুরু হয়েছে গণসংযোগ। দল গোছানোয় ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলো। এর ওপর আবার শুরু হয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তোড়জোড়। প্রত্যেক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী কে হবে তা নিয়ে চলছে জোর হিসাব-নিকাশ। মাঠে-ঘাটে আলোচনাও তুঙ্গে। চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে নেতাদের বিগতদিনের কর্মকাণ্ডের। নির্বাচন নিয়ে অজানা শঙ্কাও রয়েছে কারও কারও। 

রাজনৈতিকভাবে এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রাজশাহী মহানগরের পার্টি অফিসগুলোর হালচাল কী? সদরে ক্ষমতায় মহাজোটের শরিকদল ওয়ার্কার্স পার্টি। মেয়র আবার বিএনপির।

জাতীয় পার্টি রয়েছে অনেকটা না থাকার মতো।  

সরেজমিনে দেখতে ঢুঁ মারা মহানগর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসে।  
 
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসে নেতাকর্মীরা।  ছবি: আসিফ আজিজ
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ হাজির বিভাগীয় শহর রাজশাহীর প্রাণকেন্দ্র কুমারপাড়ায়। সাহেববাজার থেকে যেতে সড়কের ডানপাশে জানালাহীন সুরক্ষিত এক ভবন। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত দোতলা এ ভবনটিই মহানগর আওয়ামী লীগের অফিস। নিচতলায়ই মূলত জমে নেতাকর্মীদের আড্ডা-আলোচনা। কিছু কর্মী তখন ভেতরে তখন চা চক্রে মগ্ন। বড় নেতারা কেউ আসেননি। পার্টি অফিসের মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা রাহুল জানালেন, ৮টা বাজলেই মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ডাবলু চলে আসবেন। সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন আসবেন কিনা তা জানা নেই।
 
বাইরে দেয়ালের গা জুড়ে আবার রয়েছে টাইলস লাগানো বেঞ্চ। অফিসে প্রবেশের দরজায় নিরাপত্তাও কড়া। অচেনা মানুষ অফিসে ঢুকতেই একজন এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার ভেতরে কেন, কোথা থেকে এসেছি ইত্যাদি। জানালাহীন বিশাল দেয়াল তুলে রাখার রহস্য কিছুটা স্পষ্ট হলো। সব রুমে এসি লাগানো। জামায়াত-শিবিরের ঘাঁটি রাজশাহীতে বহুবার এ অফিসে ও অফিস টার্গেট করে হামলা হয়েছে। প্রাথমিক হামলার হাত থেকে বাঁচতে তাই এ ব্যবস্থা। অফিসের দুপাশে বড় করে স্পিডব্রেকারও দেওয়া।
 
কথা বলছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার।  ছবি: আসিফ আজিজসামনে দুদণ্ড বসতেই চলে এলেন মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার। মুহূর্তে সরগরম হয়ে উঠলো অফিস। অন্য তিন পার্টি অফিসে একই অভিপ্রায়ে অবস্থান করা তিন সহকর্মী জানালেন নেতাকর্মী আছেন, তবে কী অবস্থা, সেটা দেখা হলেই বলা যাবে।
 
ক্ষমতাসীন দলের অফিস রমরমা হবে এটাই স্বাভাবিক। পার্টি অফিসে অবস্থানরত নেতাকর্মীরা জানালেন সামনে শোক দিবস। তাই এখন সব আলোচনা শোক দিবসের কর্মসূচি সফল করা নিয়ে। আর সম্ভাব্য ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠেয় সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে করণীয়। মহানগরের ছোট ছোট যে কমিটিগুলো এখনও পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতে বাকি রয়েছে, সেগুলো গোছানো নিয়ে কাজ চলছে।   

সিটি নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন-- জানতে চাইলে বলেন, প্রার্থী হিসেবে খায়রুজ্জামান লিটন মোটামুটি চূড়ান্ত। এরমধ্যে জুমা নামাজের পর জনসংযোগ শুরু করেছেন তিনি। দলের নেতাকর্মীরাও একেবারে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে তার জন্য। গতবার দলের কিছু ভুলের কারণেই অনেক কাজ করেও উনি হেরেছিলেন। দলের ত্যাগী নেতারা অনেককিছু থেকে বঞ্চিত ছিলো। এবার আমরা আশাবাদী। তবে বিরোধীপক্ষকে মোটেই দুর্বল ভাবছি না।  
নেতাকর্মীদের সঙ্গে ডাবলু সরকার।  ছবি: আসিফ আজিজএসময় বিরোধীদলের মেয়র হওয়ায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ থমকে আছে বলে জানান তিনি। একইসঙ্গে দীর্ঘদিন বরখাস্ত থাকা মেয়র বুলবুলের পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করা ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজামুল আজিম ট্যাক্স বাড়িয়ে দলের জন্য ক্ষতি করেছেন বলেও মন্তব্য করেন ডাবলু।
 
সংসদ নির্বাচন নিয়েও মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। মহানগরীতে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা এবং এতে গ্যাস সংযোগ দেওয়াকে বড় চ্যালেঞ্জ মানছেন। আর মাদকমুক্ত শহর গড়া অন্যতম লক্ষ্য বলে জানান।
 
নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরির আভাস মিললো এ নেতার কণ্ঠে। তিনি বলেন, আমি আশা করি এবার এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেবে কেন্দ্র। জোট হলে ফের যদি ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ থেকে যে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারে। সেটা দল থেকে কাউকে বহিষ্কার করলেও।
 
মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসে নেতাকর্মীরা।  ছবি: আসিফ আজিজ
দলের এক নেতার মৃত্যুতে জানাজা পড়তে যাবেন বলে উঠে গেলেন দ্রুত।  
 
কিছু নেতাকর্মী বেরিয়ে গেলেন তার সঙ্গে। দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করা সমর হালদার, সাইফুল ইসলাম তজু, আজহার আলীসহ এতোক্ষণ যারা সায় দিলেন, তাদের ইঙ্গিতও একইরকম। নিজেরা কিছু জীবনে পেলেন না বলে আক্ষেপও রয়েছে তাদের। নিচতলার বিশালকায় আরেকটি রুমে তখনও বৈঠক করছেন দলের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
 
এই মজলিস টানা সাড়ে ১০টা-১১টা পর্যন্ত চলবে এবং প্রতিদিন চলে বলেই জানালেন নেতাকর্মীরা। কথা শেষে বাইরে বেরিয়ে দেখা গেলো রাস্তার অর্ধেকজুড়েই নেতাকর্মীদের আড্ডা। ভোটের লড়াই যে খুব শিগগিরই আরও ঘনীভূত হচ্ছে তার আভাস ক্ষমতাসীন দলের এ অফিসে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৭
এএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।