ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

পবা-মোহনপুরে এগিয়ে আয়েন, ‘ফ্যাক্টর’ মোল্লা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৭
পবা-মোহনপুরে এগিয়ে আয়েন, ‘ফ্যাক্টর’ মোল্লা! পবা-মোহনপুরে এগিয়ে আয়েন, ‘ফ্যাক্টর’ মোল্লা!

পবা-মোহনপুর ঘুরে: ‘বহিরাগত’দের আসন হিসেবে এমনিতেই বদনাম রয়েছে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের। তার ওপর ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতির ‘বিদ্রোহী’ নির্বাচন এ আসনে দলের ভাবমূর্তি খানিকটা হলেও খাটো করেছে। কারণ হঠাৎ করেই আলোচনায় উঠে আসা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের কাছে বিপুল ভোটে পরাজয় (প্রায় ৫৫ হাজার ভোট)।

পবা-মোহনপুর আসনটি তৈরি হয় ২০০৮ সালে। সে সময় ওই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা।

কিন্তু বিভিন্ন বির্তকিত কর্মকাণ্ডের কারণে ২০১৪ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। আর আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনের টিকেট পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন। ক্ষোভ সামলাতে না পেরে এ আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী হন মেরাজ মোল্লা। তবে ‘নতুনের জোয়ারে’ প্রথমবারই নির্বাচনী বৈতরণী উতরে একেবারে ‘ঘরের ছেলে’ বনে যান আয়েন উদ্দিন।
 
গতবারের বিপুল ভোটের জয় এবারও পালে হাওয়া যোগাচ্ছে তার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সভানেত্রী শেখ হাসিনা তার হাতেই নৌকার বৈঠা তুলে দেবেন, এমনটাই প্রত্যাশা পবা-মোহনপুরবাসীর। রাজশাহী-৩ আসন ঘুরে অধিকাংশ মানুষের মুখে এমন বক্তব্যই পাওয়া গেলো। তবে বিদ্রোহ প্রার্থী হয়ে ‘ভুল’ করার আক্ষেপ এবার হয়তো ঘোচানোর চেষ্টা করছেন মেরাজ মোল্লা। ভেতরে ভেতরে তার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
 
আর দলীয় মনোনয়ন না পেলে মেরাজ মোল্লা এবার অন্তত বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন না বলে মনে করেন পবা-মোহনপুরবাসী। ভুল শুধরে ভেতরে ভেতরে কার্যক্রমও চালাচ্ছেন বলে মন্তব্য অনেকের। এছাড়া প্রবীণ রাজনীতিবিদ হিসেবে ‘শেষবারের মতো’ সুযোগ দেওয়ার বিষয়টিও তিনি কাজে লাগাতে পারেন। যা আয়েন উদ্দিনের জন্য ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবেই ভাবা হচ্ছে।   
 
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলানিউজের ‘মাঠে ঘাটে-ভোটের কথা’ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শুক্রবার (১১ আগস্ট) সকালে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক ধরে প্রথমে পবা উপজেলায় প্রবেশ। ছুটির দিন ও বৃষ্টির কারণে মানুষের আনাগোনা কিছুটা কম। চায়ের দোকানে দু’চারজনের আনাগোনা দেখে ভোটের বিষয়ে আলাপচারিতায় বোঝা গেলো, এখনও এ উপজেলায় নির্বাচনের হাওয়া লাগেনি। তবে পবার সন্তান সাবেক সংসদ সদস্য মেরাজ মোল্লার দুর্নীতি কম-বেশি সবার জানা তা বোঝা গেলো। আর নিজের আখের গোছানো এ সংসদ সদস্যের করা কোনো উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা শোনা গেলো না কারো মুখে। পুরো এলাকায় পাওয়া গেলো না প্রবীণ এ রাজনীতিবিদের কোনো পোস্টার বা ফেস্টুন।
 
পবার নওহাটা ব্রিজ পেরিয়ে হাতের বা পাশের বিশাল সাইনবোর্ডটা জানান দিলো বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিনের উপস্থিতি। পাশেই সিনজেনটা বীজের দোকানে বৃষ্টিতে আটকা পড়ে অলস সময় পার করছিলেন কয়েকজন। তাদের পারিবারিক আলোচনায় নাক গলিয়ে ভোটের মাঠের প্রসঙ্গ তুলতেই মাইনুল ইসলাম বললেন, আয়েন উদ্দিন ভালো মানুষ। তবে আমাদের এলাকায় তেমন কোনো উন্নয়ন করেননি। এজন্য তিনি এলাকার এমপির (মেরাজ মোল্লা) নির্বাচনের কথা বলেন। তার কথায় একমত পোষণ করেন পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই মো. মিলন ও রফিকুল ইসলাম।
 
তবে দুপুর নাগাদ এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কোনো কার্যালয় খোলা পাওয়া যায়নি। আর এগুলো কখন খোলা পাওয়া যায় সে বিষয়েও কারো কাছ থেকে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পবা-মোহনপুরে এগিয়ে আয়েন, ‘ফ্যাক্টর’ মোল্লা!  
পবার ভোটের চিত্রের সঙ্গে আসনের অপর উপজেলা মোহনপুরের চিত্র মেলাতে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক ধরে এগোতেই সাইবোর্ডের অভ্যর্থনাই জানান দিলো এটিই আয়েন উদ্দিনের নির্বাচনী এলাকা। বাজারে ছাত্রলীগ-যুবলীগের যৌথ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেলো বেশ বড়সর ও পরিপাটি কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা নিয়মিতই আসা যাওয়া করেন।
 
সংবাদকর্মীর আগমন শুনে কার্যালয়ে হাজির হন বাকশিমইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, শুক্রবার হওয়ায় লোকজন কম। নিয়মিতই নেতাকর্মীরা আসা-যাওয়া করেন। তাদের পদচারণায় মুখর থাকে কার্যালয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার সত্যতাও পাওয়া গেলো।

এমপির কার্যক্রমের বিষয়ে তিনি বলেন, এলাকায় বেশ কয়েকটি স্কুল-কলেজের ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। উন্নয়ন কাজ চলছে আটটি সড়কের। তবে পবাবাসীর অভিযোগের বিষয়টি সামনে আনলে তিনি বলেন, বিরোধী লোকজন এমন কথা বলবেই!
 
কার্যালয় থেকে বেরিয়ে কয়েক গজ দূরে চা দোকানে আসা রতন বলেন, স্কুল-কলেজের কিছুটা কাজ হয়েছে। তবে চোখে পড়ার মতো কোনো উন্নয়ন রাস্তাঘাটের হয়নি। কথা টেনে দোকানদার বলেন, প্রার্থী যেই হউক, ভোটটা আওয়ামী লীগেই পড়বে।
 
আয়েন উদ্দিন, মেরাজ মোল্লা ছাড়াও এবার এ আসনে মনোনয়ন চান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মানজাল ও সাংগঠনিক সম্পাদক আলফোর রহমান। আসাদ এরই মধ্যে পবা ও মোহনপুরের বিভিন্ন গ্রামে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন।
 
আর বিএনপি থেকে একাধিক নেতা দলের মনোনয়ন চান। তবে ২০০৮ সালে এখানে নির্বাচন করা কবীর হোসেন বয়সের ভারে শারীরিক সমস্যায় নাও দাঁড়াতে পারেন। এছাড়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কামরুল মনির, রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুও মনোনয়ন প্রত্যাশী। সবার মধ্যে শফিকুল হক মিলন গণসংযোগে এগিয়ে আছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৪১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
জেডএস/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।