ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

এমপি হলে পুরো বেতন অসচ্ছল নেতাকর্মীদের দেব

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
এমপি হলে পুরো বেতন অসচ্ছল নেতাকর্মীদের দেব রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার

রাজশাহী থেকে: রাজশাহী-২ আসনটি বর্তমানে মহাজোটের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির দখলে। সংসদ সদস্য (এমপি) ফজলে হোসেন বাদশা। জোট হলে এবারও শরিক দলের জন্য আসনটি ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। তবে ছাড়ুক বা না ছাড়ুক এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের রয়েছেন একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী।

এমনই একজন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার। তরুণ এ নেতা কোনো জনপ্রতিনিধি নির্বাচন এখনও পর্যন্ত করেননি।

তবে এবার দল মনোনয়ন দিলে লড়তে চান। ইঙ্গিত দিলেন শরিক দলকে আসন ছেড়ে দিলে যে কেউ বিদ্রোহীও হতে পারেন।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) রাতে দলীয় কার্যালয়ে ‘ভোটের মাঠের নতুন মুখ’ হিসেবে তিনি কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে।
 
কেন প্রার্থী হতে চান প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মহানগর আওয়ামী লীগের মূল চালিকাশক্তি। সভাপতি মেয়র লিটন নির্বাচন করছেন। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যেহেতু আমাকে চাচ্ছে, ইয়াং জেনারেশনের সঙ্গে আমি যেহেতু মিলে কাজ করছি, তারাও যেহেতু আমাকে চাচ্ছে তাই এ ভাবনা। দলের যে অবস্থা ছিলো তা থেকে এখন শতগুণে ভালো। এ অবস্থায় লিটন ভাই যদি মেয়র হন এবং আমি যদি মনোনয়ন পেয়ে এমপি হই তাহলে প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারির সমন্বিত উন্নয়ন রাজশাহীবাসীকে আনন্দিত করবে। এ কারণে প্রার্থী হতে চাই।
 
‘‘আমার বয়স এখন ৪৫ বছর। এর মধ্যে দীর্ঘ ২৯ বছর আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে আজ সেক্রেটারি পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি না হলেও নেতৃত্বের জায়গা থেকে রাজশাহীর মানুষের তো অনেক সেবা করেছি। এজন্য আমাকে ভোট দেবে তারা। নেতাকর্মীদের সুখ-দুঃখে তাদের পাশে থেকেছি। ব্যক্তিগত কাজ আছে বলে এড়িয়ে যাইনি। এজন্য নেতাকর্মীরা আমার প্রতি সন্তুষ্ট। ’’
 
রাজশাহীতে গ্যাসের আন্দোলনে সবার সামনে ছিলেন দাবি করে লিটন মেয়র থাকাকালীন অনেক কাজ করেছেন বলেও জানান তিনি।
 
নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক পরিচয় জরুরি কিনা জানতে চাইলে বলেন, জরুরি। রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলে জয়ী হওয়া যায় না।
 
মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে প্রথম কাজ হিসেবে রাজশাহীকে রাজাকারের প্রেতাত্মা মুক্ত করতে চান এই নেতা। বলেন, চিরতরে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরুর চেষ্টা করবো। এছাড়া জেলায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, আরও স্কুল সরকারিকরণ, পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণ (যে কারণে টেস্ট ভেন্যু হচ্ছে না), সেশনজট মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা, রাজনৈতিক সহিংসতা যেন না থাকে সেসব বিষয় নিয়ে কাজ করবো। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার
 
নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা একেকটি ক্ষুদ্র মানুষ। বঙ্গবন্ধু এ দেশ পাওয়ার জন্য ১৪ বছর জেলে কাটিয়েছেন। সে চেতনা লালন করে তো আমরা দল করি। সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বাস করার সাম্য চাই।
 
তবে মাঠে বিরোধীদল থাকা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। বলেন, আমি মনে করি বিরোধীদল থাকা দরকার। তারা থাকলে নিজেদের ভুল শুধরে নিতে পারি। অপজিশন হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। গ্রেনেড মেরে মানুষ হত্যা করবে না এমন অপজিশনকে স্বাগত জানাবো।


গণতন্ত্রের চর্চা বিষয়ে তার বক্তব্য, আমাদের দলে তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্র চর্চা রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচিত কমিটি তার প্রমাণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। দেশের মানুষকে গণতন্ত্রের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চেয়েছেন। তার হাতেই গণতন্ত্র সুরক্ষিত।
 
নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেন, আমাদের নেতাকর্মী তো আছেই। জনগণও যেন আমাদের সঙ্গে থাকে সে চেষ্টা করতে হবে। আমরা পাজেরো গাড়ি থেকে নেমে জনসংযোগ করছি না। কখনও মোটরসাইকেলে একেবারে তৃণমূলে,কখনও হেঁটে এবং নামাজ শেষে জনসংযোগ করছি। নৌকা প্রতীক পেলে নির্বাচন করার অর্থ এমনিতেই চলে আসবে।
 
কেন নিজেকে যোগ্য মনে করেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লিটন ভাইয়ের পরে কেউ এমপি হওয়ার চিন্তা করেননি। দীর্ঘদিন রাজনীতি করছি। মহানগর ছাত্রলীগের ভোলানাথ স্কুলের স্কুল বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম। সেখান থেকে আজ এ অবস্থানে। মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি হিসেবে আমি নেতাকর্মীদের পাশে থেকে কাজ করেছি। নিজের পকেট খালি করে তাদের জন্য লড়েছি। যতটুকু পেরেছি বিপদে পড়লে তাদের পাশে থেকে কাজ করেছি। এজন্য মানুষ আমাকে ভোট দেবে।
 
তিনি জানান, দল থেকে মনোনয়ন না দিলে নৌকা প্রতীক যাকে দেবে তার জন্য কাজ করবেন। তবে তিনি যেন অবশ্যই আওয়ামী লীগের লোক হন।
 
‘‘নমিনেশন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে এমপি হিসেবে যে বেতন পাবো তার পুরোটাই দলের অসচ্ছল নেতাকর্মীদের দিয়ে দেব। দ্বিতীয়ত আমার স্থাবর-অস্থাবর কী সম্পত্তি আছে তা সবাইকে জানাবো। মানুষের ক্ষতি করে কিছু করবো না। ’’
 
জিতলে আর কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমপি হলে তো অনেক কিছু হতে চাই। মানুষের চাহিদার তো শেষ নেই। আমি কোনো বড় রাজনৈতিক নেতার ছেলেও নই। একেবারে তৃণমূল থেকে উঠে এসেছি। কর্মীদের পালস খুব ভালো বুঝি। বিনয়ী, ভদ্র থাকবো। আত্মঅহংকারী হবো না।
 
তরুণ সমাজের জন্য তার মেসেজ, মাদকের ব্যাপারে একেবারে জিরো টলারেন্স থাকবে। এখনও এটা করছি। বিক্রেতা এবং সেবনকারী কাউকে ছাড় নয়। যুব সমাজকে ধ্বংস করছে মাদক। এজন্য নিরাময় কেন্দ্রও করবো। বঙ্গবন্ধু সিলকন সিটি যেটা হচ্ছে তাতে ১০-১২ হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান হবে। এতে তরুণরাই কাজ করবে। রাজশাহী শহরে তরুণদের বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রটি শক্ত করবো।
 
আর এলাকার এক নম্বর সমস্যা হিসেবে তিনি ইয়াবা সেবনকে চিহ্নিত করেন।

সবশেষে নেতাকর্মীরা কী পাবে জানতে চাইলে বলেন, ভালোবাসা পাবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। বিপদে পাশে পাবে। জামায়াত-বিএনপি রগ কাটলে তারা রাজশাহীতে বসবাস করতে পারবে না। নিজের বাড়ির দুয়ার সবসময় খোলা থাকবে। এমনকি বেডরুম পর্যন্ত।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
এএ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।