ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

রাজশাহী-১ এ প্রার্থী মানেই চৌধুরী-ব্যারিস্টার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
রাজশাহী-১ এ প্রার্থী মানেই চৌধুরী-ব্যারিস্টার ওমর ফারুক চৌধুরী ও ব্যারিস্টার আমিনুল হক

রাজশাহী-১ আসন এলাকা ঘুরে: ২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে টানা দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী। তবে তার আগে টানা তিনবার ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ আসনে ‘আধিপত্য’ ধরে রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আমিনুল হক।

যার মাধ্যমে ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৫টি জাতীয় নির্বাচনে রাজশাহী-১ আসনের ভোটাররা এ দুই প্রার্থীতেই ঘুরপাক খেয়েছেন।
 
তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোদাগাড়ী-তানোর আসনে আওয়ামী লীগ থেকে ওমর ফারুক চৌধুরী এবং বিএনপি থেকে ব্যারিস্টার আমিনুল হকের মনোনয়ন পাওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় ২০০৮ সালে আমিনুল হকের পরিবর্তে তার ভাই এনামুল হককে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। ওই নির্বাচনে সাবেক পুলিশ প্রধান এনামুল হক পরাজিত হন।
 
আর এ আসনের দুই উপজেলার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে যে চিত্র পাওয়া গেলো তাতে আগামী নির্বাচনে ওমর ফারুক চৌধুরীকে এগিয়ে রাখছেন তারা। কারণ হিসেবে চৌধুরীর জনসম্পৃক্ততার কথা ঘুরেফিরে উঠে আসে। যা থেকে সবশেষ দুইবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে পিছিয়ে রয়েছেন ব্যারিস্টার আমিনুল হক।
 
জঙ্গি মদদদাতা, দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া, নেতাকর্মীদের মতামত অগ্রাহ্য করে আত্মীয়-স্বজনদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা আমিনুল হকের বিরুদ্ধে।
চায়ের দোকানে ভোটারদের প্রতিক্রিয়া এছাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইসহাক, গোদাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন, চড় আষাড়িয়াদহ চেয়ারম্যান মো. সানাউল্লাহর পদত্যাগ দলটিকে সাংগঠনিকভাবে আরো দুর্বল করেছে।
 
তালিকায় আরো রয়েছেন- নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া এক সময়ে ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ঘনিষ্টজন ও ডান হাত হিসেবে পরিচিত কাকনহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল মজিদ মাস্টার, যুবদল নেতা রবিউল আলম বর্তমানে গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, জিয়া পরিষদের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা বিএনপির সংগঠনিক সম্পাদক এবিএকম কামারুজ্জামান বকুলও বর্তমানে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করছেন, গোদাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক ও সাবেক বিএনপি নেতা সারওয়ার জাহান ডাবলু, পাকড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গোলাম রাব্বানী, জিয়াপরিষদ উপজেলা সহসভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল গাফফার এবং জিয়া পরিষদের নেতা লুৎফর রহমান মেম্বারসহ শতশত নেতাকর্মী বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। যা বিএনপিকে আরো কোণঠাসা করেছে।
 
তবে ক্ষমতায় থাকার সময় রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়নের কারণে এখনও গোদাগাড়ী-তানোরবাসী তার কথা স্মরণ করেন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে পথ চলতে গিয়ে যখন বিপত্তিতে পড়তে হয়। যেখানে ওমর ফারুক চৌধুরীর কাজ করার রয়েছে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা।
 
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলানিউজের ‘মাঠে ঘাটে-ভোটের কথা’র আয়োজনের অংশ হিসেবে শনিবার (১২ আগস্ট) দুই মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া যায়।  
 
গোদাগাড়ী চত্বরে থানা রোড ধরে পদ্মাপাড়ের দিকে এগিয়ে যেতে হাতের বাম পাশে চায়ের দোকানে সময় কাটাচ্ছিলেন চারজন। বৃষ্টির মধ্যে দোকানের বেঞ্চে বসে বিড়ি ফুঁকছিলেন দু’জন। আগন্তুকের হেতু বুঝতে পেরে হোটেল ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম (৩৫) বলেছিলেন, এ আসনে আগামী নির্বাচনেও ওমর ফারুক নির্বাচিত হবেন।
 
কারণ হিসেবে বলেন, জনগণের সঙ্গে সবসময় কথা বলেন, সদাচারণ করেন। কেউ কোনো সাহায্য চাইলে কাউকে ফিরিয়ে দেন না, সে যে দলেরই হউক। স্কুল-কলেজের উন্নতি করেছেন, গোদাগাড়ি ঈদগাহ মাঠের উন্নতির জন্য অনুদান দিয়েছেন।
 
তার কথার সঙ্গে অন্য দু’জন মাথা নেড়ে সায় দিলেও চুপচাপ ছিলেন দিনমজুর সিরাজুল ইসলাম (৭৫)। কারণ বৃষ্টিতে কাজ না থাকায় তার আকাশটাও বেজার। আলাপ জমতেই আবুল কালাম আজাদ (৬০) নামে আরেক দিনমজুরও বর্তমান সংসদ সদস্যকে এগিয়ে রাখলেন।

তানোর থানার সামনে কথা হয় অটোরিকশা চালক রহিমের সঙ্গে। রাস্তাঘাটের কোনো উন্নয়ন হয়নি মন্তব্য করে ১৯৮৫ সাল থেকে ‘রাস্তায়’ থাকা এ চালক বলেন, মন্ত্রীর নিজের বাড়ির রাস্তাইতো ভালো নয়!
 
গোদাগাড়ী কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবিএম কামারুজ্জামান বকুল বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অনেক সুসংগঠিত। তৃণমূলে জনসম্পৃক্ততা তাকে আগামী নির্বাচনে এগিয়ে রাখছে। গোদাগাড়ী কলেজে অনার্স চালুসহ জাতীয়করণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন চৌধুরী।
তানোর থানার সামনে অটোচালকের প্রতিক্রিয়া 
তবে টানা তিনবারের এমপি ব্যারিস্টার আমিনুল হক বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেলে এ আসনে ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে দাঁড়াতে পারেন। কারণ সে আমলে রাস্তাঘাটের যে উন্নয়ন তার উপর ভর করেই ‍এখন পথ চলছেন গোদাগাড়ী-তানোরবাসী।
 
আর তানোর ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে কোন্দল থাকলেও ‘ব্যারিস্টার’ ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করার কথা বলেছেন তানোর ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল মালেক। যদিও তানোর পৌর মেয়র, উপজেলা যুবদলের সভাপতি ও বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান কোন্দলের বিষয়টি অস্বীকার করে বিরোধীদের অপপ্রচার বলে মন্তব্য করেছেন।
 
ওমর ফারুক চৌধুরী ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান, তানোর উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুণ্ডুমালা পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানীর লড়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
 
আর বিএনপির পক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাশী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব জহুরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাবেক যুববিষয়ক সম্পাদক কেএম সাজেদুর রহমান খান মারকনি এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন শাহিন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
জেডএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।