ঢাকা: বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একটি অংশের উদ্যোগে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর রোজ গার্ডেন প্যালেসে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রথম সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ বহু গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে দলটির নেতাকর্মীরা চরম দুর্নীতি, দমন-পীড়ন ও লুটপাটে জড়িত হয়ে পড়ে।
১৫ বছরের শাসনে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-নেতারা দেশের ব্যাংক, শেয়ারবাজার, আর্থিক খাতসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করে অর্থনীতিকে পঙ্গু করে তোলে। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে তিনটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে, যার মধ্যে ২০১৮ সালের ‘দিনের ভোট রাতে’ এবং ২০২৪ সালের একতরফা ‘ডামি’ নির্বাচন বিশেষভাবে সমালোচিত হয়।
গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয় আর্থিক খাতে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাবদ ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। অন্তর্বর্তী সরকারের শ্বেতপত্র অনুযায়ী, এর মধ্যে প্রায় ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ অর্থ চাঁদাবাজি, ঘুষ ও বাড়তি খরচ দেখিয়ে লুটপাট হয়েছে। এই অপচয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার কোটি থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসামরিক, শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের হাজার কোটি টাকা লোপাট এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া করোনা টিকা কেনার নামে ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধেও রয়েছে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও দুবাইয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তুলেছেন তিনি। হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে পলক সরকারের আইসিটি বিভাগে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের আওতায় ‘এসপায়ার টু ইনোভেট (এ-টু-আই)’, ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’, ‘হাইটেক পার্ক’, ‘আইটি পার্ক’ এবং ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’সহ বিভিন্ন প্রকল্পে তার কর্তৃত্ব ছিল। এসব প্রকল্প থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং সাবেক এমপি আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধেও রয়েছে দেশি-বিদেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় তিনি ৯টি ফ্ল্যাট ও বাড়ি কিনেছেন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩২ কোটি টাকা। দেশে ও বিদেশে তার অর্জিত স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩২ কোটি ৩৪ লাখ ২৭ হাজার ৯৬০ টাকা এবং অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭ টাকা। পারিবারিক ব্যয়সহ সর্বমোট ৬৯ কোটি ৭৬ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৪ টাকার সম্পদের হিসাব পাওয়া গেছে, যা আইনবহির্ভূতভাবে অর্জিত বলে অভিযোগ রয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের সময় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে দাবি করে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা। অনুসন্ধান অনুযায়ী, তার নামে এবং তার স্ত্রীর নামে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় রয়েছে বহু বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাজ্যে তার ৩৬০টি বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্টের তথ্য মেলে। যার মূল্য প্রায় ২৫ কোটি ডলার বা ৩ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও নিউজার্সিতে ৯টি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট; দুবাইয়ে ৫৪টি সম্পদ, ব্যবসা ও রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট; মোট বিদেশি সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা ৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
দুবাই ও অন্যান্য দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার ছিল জাভেদের মূল প্রক্রিয়া। তা ছাড়া ব্যাংক ঋণ ও ব্যবসার মুনাফা দেখিয়ে সম্পদ বৈধ করার চেষ্টা; ছোট অংশে অর্থ বিনিয়োগ করে বিদেশি সরকারের নজর এড়িয়ে সম্পদ অর্জন; হুন্ডি, ফাইন্যান্সার ও বিদেশি এজেন্টের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর করে এমন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন তিনি। বার্ষিক আয়কর রিটার্ন বা নির্বাচনকালীন হলফনামায় এসব সম্পদের কোনো উল্লেখ করেননি তিনি।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, শেখ হাসিনাও এসব বিষয়ে অবগত ছিলেন এবং তার ছায়াতেই এসব কাজ করেছেন তিনি। যুক্তরাজ্যে বসে আল জাজিরার সাংবাদিককে তিনি বলেছিলেন, আমার নিউইয়র্ক, ম্যানহ্যাটন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় বাড়ি আছে। প্রধানমন্ত্রী জানতেন আমি এসব ব্যবসা করি। তিনি আরও বলেছেন, আমার বাবা প্রধানমন্ত্রীর (হাসিনা) খুব কাছের মানুষ ছিলেন। সত্যি বলতে আমিও। তিনি (হাসিনা) আমার বস।
একইভাবে আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকর্মী তাদের আপার শাসনামলে নিজেদের আখের গুছিয়েছিলেন। তাদের দুর্নীতি এতটাই বেড়েছিল, যা ধারণার বাইরে।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একদলীয় শাসনব্যবস্থা ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। অন্যদিকে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কার্যত একটি একদলীয়, কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে বিরোধী মতের অস্তিত্ব থাকলেও তা কার্যত দমন করা হয়।
পঁচাত্তরের ২৫ জানুয়ারি সংবিধান সংশোধন করে একদলীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়। সব পত্রিকা বন্ধ করে মাত্র চারটি রাষ্ট্রীয় পত্রিকা রেখে বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়। রাজনৈতিক বিরোধিতার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। শেখ হাসিনার শাসনামলে ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চালু করা হয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একতরফা ও প্রহসনমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গুম, খুন, কারাবরণ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহারে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়। নির্বাচন কমিশন, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসন দলীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কার্যত একদলীয় শাসনের কাঠামো গড়ে তোলা হয়।
বাকশাল আমলে দেশের ৪টি বাদে সব পত্রিকা বন্ধ করা হয়। সেন্সরশিপের মাধ্যমে সাংবাদিকতা নিয়ন্ত্রিত হতো। অন্যদিকে হাসিনার আমলে শতাধিক মিডিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সাংবাদিক গ্রেপ্তার, হয়রানি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ হয়। সেলফ-সেন্সরশিপ একটি বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়।
বাকশালি আমলে নির্বাচন প্রক্রিয়া বাতিল করে একদলীয় মনোনয়ন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। আর ২০০৯–২০২৪ সালে নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বিরোধী দলকে মাঠে নামতেই দেওয়া হয়নি। ২০২৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ মুজিবের শাসনামলে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ, রাজনৈতিক বন্দিত্ব, গণতন্ত্রহীনতা থেকে বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ড দেখা গেছে। ২০০৯–২০২৪ সাল পর্যন্ত গুম-খুনের ব্যাপক অভিযোগ (হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সূত্রে); রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে বিরোধী নেতাকর্মীদের নিপীড়ন ও নির্যাতন ও ডিজিটাল আইন ব্যবহার করে মতপ্রকাশ নিয়ন্ত্রণের ঘটনা ঘটে।
মুজিবের সময় ছাত্রলীগকে মূল হাতিয়ার বানানো হয়। বিরোধী ছাত্রসংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়। হাসিনা ছাত্রলীগের দাপট, বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস, হত্যাকাণ্ড ও হল দখলকে পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছিলেন। তার আমলে ব্যাপক আকারে শিক্ষাব্যবস্থায় দলীয় প্রভাব, বিতর্কিত পাঠ্যক্রম ও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। ১৯৭৫ সালে মুজিবের বাকশাল ছিল একটি ঘোষিত একদলীয় শাসন। অন্যদিকে শেখ হাসিনার ২০০৯–২০২৪ সালের শাসন ছিল গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা, যেখানে নির্বাচন, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, গণমাধ্যম সবকিছু সরকারদলীয় নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। দুই সময়েই গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মুক্তচিন্তার অবসান ঘটেছে; পার্থক্য হলো, শেখ হাসিনার সময় তা হয়েছে আধুনিক কৌশলে ও প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকতায়।
গত বছর ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলে আওয়ামী লীগের প্রায় ৩০০ জন এমপি-মন্ত্রী, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা একযোগে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বই নয়—প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মচারী পর্যন্ত বহুজন গোপনে দেশ ত্যাগ করেন। যারা শেখ হাসিনার একনায়কতান্ত্রিক শাসনকে টিকিয়ে রাখার প্রশাসনিক ভরসা ছিলেন, তাদের এই গণপলায়ন প্রমাণ করে যে, সরকারের ভিত নড়বড়ে ছিল এবং নৈতিক ভিত্তি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিল।
সরকারের নীতির ফলে কিছু ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক নেতারা অলিগার্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তাদের হাতে প্রচুর অর্থ এবং ক্ষমতা চলে যায়। ফলে দেশের রাজনৈতিক শৃঙ্খলা ও অর্থনৈতিক সমতা নষ্ট হয়। অলিগার্কদের প্রভাবশালী অবস্থান দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। তারা দেশের অর্থনীতি তাদের নিজের প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন, ফলে অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। কিছু গোষ্ঠী যে পরিমাণ সুযোগ সুবিধা পেয়েছে, তা সাধারণ জনগণের মধ্যে থেকে আয়ের বৈষম্য বাড়ায়। অনেক সময় সরকারি প্রকল্প এবং উন্নয়ন কাজে দুর্নীতি বৃদ্ধি পায় অলিগার্কদের মাধ্যমে। সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়া এবং চুক্তি এসব ব্যক্তিদের কাছে চলে যাওয়ায় দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে। এসব লোকেদের প্রভাবশালী অবস্থান রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। ফলে নৈতিক অবক্ষয় ঘটতে থাকে ও জনগণের মধ্যে আস্থা কমে যায়।
শেখ হাসিনা জনতুষ্টির মাধ্যমে দেশে উন্নয়নের নামে দুর্নীতি সৃষ্টি করেছেন। গণতন্ত্রের আদর্শকে অবজ্ঞা করে এবং একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করে, উন্নয়নের স্লোগান তুলে ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন। এর ফলে রাজনৈতিক স্বাধীনতা সংকুচিত হয় এবং জনগণের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়, যা দেশের জনগণের জন্য ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়েছে।
বিশ্লেষকরা শেখ হাসিনার সরকারের শাসনকাল সম্পর্কে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মন্তব্য করেছেন, বিশেষ করে গুম, খুন, রাজনৈতিক মামলা এবং রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহারের বিষয়গুলো নিয়ে। তারা বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম ও খুনের ঘটনা বেড়ে যায়, যা সরকারের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা সৃষ্টি করে। আইনশৃঙ্খলার অবক্ষয় এবং বিচার ব্যবস্থার অকার্যকর হওয়ার ফলস্বরূপ ঘটনাগুলো তার আমলে ঘটতেই থাকে।
অনেক বিশ্লেষক শেখ হাসিনার শাসনামলে রাজনৈতিক মামলা ও দমন-পীড়নের অভিযোগ তোলেন। তারা বলেন, সরকার বিরোধী মতের দমন ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার কৌশল হিসেবে হাসিনার লোকজন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হামলা, এবং গ্রেপ্তার চালায়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেখ হাসিনার সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র—বিশেষ করে পুলিশ, র্যাব, এবং বিচার ব্যবস্থা—ব্যবহার করে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রেখেছিল। সরকারের পক্ষ থেকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনকে ক্ষুণ্ণ করে বিরোধী দল ও সমাজের বিভিন্ন অংশের ওপর রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শেখ হাসিনা।
অনেক বিশ্লেষক এও বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে গণতন্ত্রের অস্তিত্ব সংকুচিত হয়েছিল। বিরোধী দলের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হ্রাস করে দিয়েছিলেন তিনি। জনগণের রাজনৈতিক অধিকারের প্রতি তার সরকারের উদাসীনতা প্রবল হয়ে উঠেছিল। জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে শাসনমূলক শক্তি দ্বারা স্তব্ধ করা হয়েছিল।
২০২৪ সালের জুনে শিক্ষার্থীদের কোটা বৈষম্য ও দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে পুলিশ-সেনা-দলীয় ক্যাডারের গুলিতে শতাধিক শিক্ষার্থী নিহত হলে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। অবশেষে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।
বর্তমানে দেশে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার বিদ্যমান। গঠিত কমিশন আওয়ামী লীগের শাসনামলের দুর্নীতি, খুন-গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত করছে। ইতিমধ্যে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ এবং পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
এসব বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিলম্বে হলেও অন্তর্বর্তী সরকার ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে এবং বিচারকার্য নির্বিঘ্ন রাখতে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গুম, খুন, নিপীড়ন ও জনগণের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের দমন-পীড়নের কারণে এই সিদ্ধান্তকে সঠিক বলেই আমরা মনে করি।
এসকে/এমজে