ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২, ১৩ মে ২০২৫, ১৫ জিলকদ ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

মালয়েশিয়ায় ১বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্দি এইচআরসি’র জাহাজ

আহ্সান কবীর, কান্ট্রি এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৪২, জুন ১১, ২০১১
মালয়েশিয়ায় ১বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্দি এইচআরসি’র জাহাজ

ঢাকা: ২০১০ সালের ৪ মে থেকে তারা ১৫ জন মালয়েশিয়ার নর্থপোর্টে আটক বাংলাদেশি জাহাজ বঙ্গ বিরাজের ডেকে রাত কাটিয়েছেন। চট্টগ্রাম বন্দরে রেজিস্ট্রি করা বাংলাদেশের এইচআরসি শিপিংয়ের মালিকানাধীন প্রায় ১২হাজার টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এই জাহাজের ১৫ ক্রুর ১৩ জনই বাংলাদেশি।

বাকি ২জন ইন্দোনেশীয়।

জেলখানায় বন্দিদেরও ৩ বেলা খাবারসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানোর ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু বাংলা বিরাজ নামের আটক সমুদ্রগামী  ওই জাহাজের নাবিকদের জীবন ধারণের কোনো ব্যবস্থা দেশের অন্যতম নামী ব্যবসায়ী গ্রুপ এইচআরসি করেনি।   উপরন্তু মাসের পর মাস ধরে তাদের প্রাপ্য বেতনও আটকে রাখা হয়েছে।      

জাহাজের ডেকে তাদের  মানবেতর জীবন যাপনের দৃশ্য প্রথমে মালয়েশিয়ার নর্থপোর্ট এলাকার দেশ-বিদেশের লাখ লাখ লোকের নজর কেড়েছে, পরে মিডিয়ার কল্যানণ তা সমগ্র মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশের মানুষ দেখেছে।

গত ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে জাহাজের উন্মুক্ত ডেকে ঘুমিয়েছেন ওই ১৫ নাবিক। খেয়েছেন শুধু ভাত-ডাল আর সব্জি। নাবিকদের অবস্থার ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে জাহাজের ক্যাপ্টেন একেএম আলমগীর (৬০) জানান, নর্থপোর্টের গভীর সমুদ্রে নোঙর করে রাখা বঙ্গ বিরাজে দীর্ঘ এক বছর ধরে বন্দির চেয়েও খারাপ অবস্থায় জীবন কাটানো নাবিকদের একজন কয়েকদিন আগে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান।

ক্যাপ্টেন আলমগীর আরও জানান, অপর একজন নাবিকের স্ত্রী  দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির কারণে স্বামীকে তালাক দেবেন বলে জানিয়েছেন।     

সমুদ্রে চলাচলের প্রায় অনুপযোগী মালবাহী জাহাজ ‌`বঙ্গ বিরাজ`-এ বন্দি জীবন কাটানো- থাকা, খাওয়া ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের বিন্দুমাত্র সুবিধাবঞ্চিত ওই ১৫ নাবিকের দুর্দশায় শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক দি স্টার-এর পক্ষ থেকে মে মাসের ২৬ তারিখে টিনজাত খাবারসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য ত্রাণ হিসেবে পাঠানো হয়।

জানা গেছে,‌`বঙ্গ বিরাজ` জাহাজটি মালয়েশিয়ায় এসেছিল ২৩জন নাবিক নিয়ে। এরই মধ্যে গত ১ বছরে নিজস্ব উদ্যোগে ১০ জন যার যার পথে চলে গেছেন অমানবিক যন্ত্রণার এ ভাসমান কারাগার থেকে।   নাবিকরা জানান, গত ৮ মাস ধরে এইচআরসি কর্তৃপক্ষ তাদের বেতন-ভাতাদি দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে।

ক্যাপ্টেন আলমগীর জানান, এ সময়কালে ক্ষুধা নিবারণের জন্য আটক নাবিকদের কয়েকজন সমুদ্র থেকে মাছ ধরেছেন। তবে শুধু সেই মাছ খেয়ে জীবন কাটানো কতটা কষ্টকর তা ভুক্তভোগীই শুধু জানে। সবাই তা খেতেও পারে না। সঙ্গীদের কেউ কেউ তো উম্মাদ হওয়ার মতো পর্যায়ে চলে গেছে। তারা সবাই প্রচুর ওজন হারিয়েছেন।

এর মধ্যে ‌বঙ্গ বিরাজের সমুদ্রে চলাচলের অনুমোদনপত্রের মেয়াদও অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে।

লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অ্যাম্বেসির এক কর্মী এ বিষয়ে বলেন, ‘ভাই, লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। দেশের মানুষ ও একটি বড় প্রতিষ্ঠানের এই দুর্দশা হাজার হাজার লাখ লাখ বিদেশির সামনে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছে। আর আমরা শুধু বসে দেখেছি। ’

নাবিকরা জানান, বকেয়া বেতন-ভাতা দিয়ে তাদেরকে শিগগির দেশে পাঠনো হচ্ছে-এইচআরসি কর্তৃপক্ষের এ ধরনের ভুয়া আশ্বাস শুনতে শুনতে তাদের অরুচি ধরে গেছে।

কয়েকদিন আগে নাবিক কপিলউদ্দিন মুন্সী (৩৪) সাংবাদিকদের জানান, তিনি এখন আত্মহত্যা করতে চান কারণ এই বিভীষিকাময় জীবন আর ভাল্লাগছে না তার। তিনি কোনওমতেই মানাতে পারছেন না এই পরিস্থিতির সঙ্গে।

গত ২৩ মে মালয়েশিয়ার ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টারের সাংবাদিকরা জাহাজে তাদের অবস্থা সরেজমিন দেখতে গেলে দুই সন্তানের জনক কপিল তাদের মিনতি করে বলেন, ‌`দয়া করে আমাকে অন্তত আপনাদের সঙ্গে নিয়ে যান। আমি এখানে আর এক দণ্ডও থাকতে পারছি না। `

  বঙ্গ বিরাজ পরিদর্শনকারী সাংবাদিকরা জানান, `বায়ু চলাচলহীন গুমোট আর স্যাঁতসেতে কেবিনগুলো ছিল চরম উষ্ণ। সেগুলোতে এয়ার কন্ডিশনারও বন্ধ। কোনও মানুষ সর্বোচ্চ ২০ মিনিটের বেশি তাতে অবস্থান করতে পারবে না।

জাহাজ থেকে অভিবাসী আশ্রয় কেন্দ্রে

শেষ পর্যন্ত এ অমানবিক অবস্থা থেকে তাদের উদ্ধারে তারা মালয়েশীয় সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশীয় সরকারের উদ্যোগে গত ৩ জুন তাদের বঙ্গ বিরাজের জিন্দানখানা থেকে উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় পুলিশ (Bukit Aman Anti-Trafficking In Persons Unit), জনসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন শ্রম বিভাগ ও মানবাধিকার কমিশন (Suhakam) এর যৌথ অভিযানে ওই নাবিকদের (১৩ বাংলাদেশি ও ২ ইন্দোনেশিয়) উদ্ধার করে মালাক্কায় অবস্থিত অভিবাসী আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। মালয়েশিয়ার জনসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখানে তাদেরকে ২ সপ্তাহের জন্য আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে পুলিশ ও শ্রম বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করবেন।

বর্তমানে মালয়েশিয়ান মানবাধিকার কমিশন (সুহাকাম) ওই ১৫ নাবিকের ভিডিও সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে রাখার কাজ করছে যাতে করে পরবর্তী আইনি কার্যক্রমে তাদের বক্তব্যগুলো সাক্ষ্য হসেবে ব্যবহার করা যায়। এর উদ্দেশ্য, আদালতের বিচারাধীন মামলায় এইচআরসির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে যাতে তাদেরকে অহেতুক মালয়েশিয়ায় অবস্থান করতে না হয় এবং দ্রুত তারা দেশে ফিরে আসতে পারেন।   আশা করা যাচ্ছে, আর দিন দশেকের মধ্যে তারা দেশে ফিরবেন।

যে কারণে আটক বঙ্গ বিরাজ
মালয়েশিয় হাইকোর্ট থেকে একটি নির্দেশ পেয়ে গত বছরের ৪ মে বঙ্গ বিরাজকে নর্থপোর্ট বন্দরে আটক করে কর্তৃপক্ষ। কারণ, ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে নর্থপোর্ট ত্যাগ করার সময়ে বন্দরের জেটির ২টি ক্রেনকে আঘাত করে ধ্বংস করে দেয় বঙ্গ বিরাজ।

এ ঘটনার ধারাবাহিকতায় এইচআরসি শিপিং কোম্পানি এখন এক জটিল আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছে মালয়েশিয়ায়।

ক্যাপ্টেন একেএম আলমগীর জানান, কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র জাহাজটিকে বন্দি করেছে- এর নাবিকদেরকে নয়। কিন্তু যেহেতু আমরা নাবিকরা ওই জাহাজের লোক- তাই আমাদের সঙ্গেও বন্দিদের মতই আচরণ করা হয়। এটা একই সঙ্গে মানবাধিকার এবং নাবিকদের অধিকারের লংঘন।

তিনি বিষয়টি সবিস্তারে জানিয়ে এইচআরসি কর্তৃপক্ষকে জরুরি পত্র দেন। কিন্তু তাদেরই কর্মীদের এ মানবিক আবেদনে কোনও গুরুত্বই দেননি এইচআরসি কর্তারা।

এটা গুরুতর বিষয়
এ ব্যাপারে  নর্থপোর্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অবাক করা তথ্য। তারা জানায়, বঙ্গ বিরাজের বন্দিত্বের পেছনে তাদের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। কারণ, তারা বীমা কোম্পানি তাকাফুল ইনসান থেকে বন্দরের জেটি ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি নষ্ট করার জরিমানা বাবদ মালয়েশীয় মুদ্রায় সাড়ে ৫ লাখ রিংগিত অনেক আগেই পেয়ে গেছেন।  

এ ব্যাপারে মালয়েশিয়ার সেন্ট্রাল রিজিওন মেরিন ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ক্যাপ্টেন জয়লানি জালাল চরম বিস্ময় প্রকাশ করেন। এখনও বন্দরে বন্দী অবস্থায় আছে বঙ্গ বিরাজ- ব্যাপারটা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না তিনি।  

তিনি বলেন, ‘এটা একটি গুরুতর বিষয়। আমি জাহাজ মালিকের স্থানীয় প্রতিনিধিকে ডাকবো। কারণ, নবিকদের ভালমন্দ দেখার দায়িত্ব তার। ’

জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় এইচআরসি’র স্থানীয় এজেন্ট কাজী নূরুল আলম বন্দি থাকা অবস্থায় ওই নাবিকদের প্রতি সপ্তায় মাত্র ৬০ রিংগিত করে খরচা দিয়ে আসতেন। যা তাদের বেঁচে থাকার রসদ যোগানোর পক্ষে নগণ্য।

মালয়েশিয়ান সিফেয়ারার্স ইউনিয়নের প্রতিনিধি রফিক রামু জানান, বঙ্গ বিরাজের ঘটনা ও ক্রুদের সঙ্গে অন্যায় আচরনণর বিষয়টি তারা অবগত।

তিনি জানান, লন্ডনে ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনে (আইটিএফ) এ বিষয়ে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।

বঙ্গ বিরাজের অতীত
এদিকে বঙ্গ বিরাজ জাহাজের অতীত রেকর্ড ঘেঁটে পাওয়া গেছে আশ্চর্যরকম কিছু তথ্য। দেখা গেছে, ৩০ বছরের পুরনো এ জাহাজকে ঘিরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ছড়াছড়ি।

যেমন, ২০০৩ সালের ৯ জুলাই ৭জনের একটি জলদস্যু দল এ জাহাজে হানা দিয়ে নাবিকদের জিম্মি করে সব মূল্যবান জিনিসপত্র লুণ্ঠন করে নিয়ে যায়।

এরপর একই বছরের অক্টোবরে এমভি ঈগল স্ট্রেন্থ নামে একটি জাহাজের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটায় বঙ্গ বিরাজ। চট্টগ্রাম বন্দরের এ ঘটনায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় দু’টি জাহাজই।


উই ডিড আওয়ার লেভেল বেস্ট!
এ ব্যাপারে জানতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের বাণিজ্যসচিব ড. সিদ্দিকীর সঙ্গে সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

‘কিন্তু আপনি তো আমাদের অ্যাম্বেসির কমার্স সেক্রেটারি। এ ব্যাপারে আপনারই তো বলার কথা’ মনে করিয়ে দিলে তিনি  বাংলানিউজকে বলেন, ‘বঙ্গ বিরাজ নিয়ে সমস্যা সমাধানে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত একেএম আতিকুর রহমান ও আমি মালয়েশিয়ার মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স, মিনিস্ট্রি অব ট্রান্সপোর্টে গিয়েছি। মন্ত্রীদের অনুরোধ করেছি বিষয়টি আউট অব দ্য কোর্ট সমাধান করার জন্য। ’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে তারা বিষয়টি বিবেচনা করবে জানালেও পরে চিঠিতে জানায় এটি আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত। পরে আবারও দেন দরবার করায় তারা চিঠি দিয়ে জানায়, নর্থপোর্ট আর বাংলাদেশের এইচআরসি দু’টোই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই বিষয়টি তাদেরকেই সমাধান করতে হবে। এখানে মন্ত্রণালয়ের করার কিছুই নেই। ’

ড. সিদ্দিকী বলেন, ‘বিষয়টি আমরা আউট অব দ্য কোর্ট ফয়সালা করতে চেয়েছি। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের ধরেছি। কিন্তু কোথাও কোনও ফল হয়নি। ’

এটা কী ধরনের আইন যেখানে বিদেশি একটি জাহাজকে আটকে রাখা হয়েছে যথাযোগ্য পরিচর্যা ছাড়া যার ফলে দিন দিন জাহাজটি নষ্ট হয়ে চলন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে! একই সঙ্গে এর নাবিকদেরও প্রায় বন্দি অবস্থায় অমানবিক জীবন কাটাতে হলো একটি বছরেরও বেশি সময় ধরে!

এ বিষয়ে ড. সিদ্দিকী কোনও মন্তব্য করেননি।

এতদিন ধরে এ ধরনের একটি বিষয় ঝুলে থাকা বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল দেশের ভাবমূর্তির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশেষ করে মালয়েশিয়ার মিডিয়ায় যেভাবে বিষয়টি এসেছে (জাহাজের ডেকে বাংলাদেশি ও ইন্দোনেশীয় নাবিকদের মানবেতর জীবন-যাপন এবং তা দেখে দয়াপরবশ হয়ে এক হোটেল মালকিনের খাবার নিয়ে এসে তাদের খাওয়ানো, মালয়েশিয়ার স্টার পত্রিকার সাংবাদিকরাও তাদের জন্য খাবার ও অন্যান্য দরকারি ত্রাণ নিয়ে গিয়েছিলেন) তা সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মী এবং পুরো বাংলাদেশের জন্য খুবই নেতিবাচক।

অথচ এ দায়িত্ব সবার আগে পালন করতে পারতো আমাদের দূতাবাস। তারা সেখানে আছেনই তো এ ধরনের বিষয়াদি তদারকি করার জন্য।

‘আপনারা বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এ ব্যাপারে মিডিয়ায় কোনও ব্যখ্যা উপস্থাপন করেননি কেন?’ বাংলানিউজের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি বঙ্গ বিরাজের মালিক এইচআরসির দায়িত্ব ছিল। তারা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারতো। উই ডিড আওয়ার লেভেল বেস্ট। এইচআরসি বঙ্গ বিরাজের ক্রুদের রিপ্লেস করে দিতে পারতো। ’

এখন জাহাজটির কী অবস্থা?

জবাবে সিদ্দিকী বলেন, ‘বিষয়টি এইচআরসির স্থানীয় প্রতিনিধির দেখার কথা। আর যতটুকু শুনেছি- এইচআরসি এরই মধ্যে আউট অব দ্য কোর্ট এর একটা সমাধান করে ফেলেছে। ’

‘কিন্তু গত ০৩ জুন মালয়েশীয় পুলিশ জাহাজে অভিযান চালিয়ে এর ১৫ ক্রুকে উদ্ধার করে মালাক্কার শেল্টার সেন্টারে নিয়ে গেছে। সেখানে তাদের ভিডিও স্টেটমেন্ট রেখে ১৫ দিনের মধ্যে দেশে পাঠাবে...’

‘আমি বিষয়টি আপনাকে বলতে যাচ্ছিলাম। ’

এখনকার কি অবস্থা বঙ্গ বিরাজের নাবিকদের?

‘ওই যে আপনি যেটুকু জানেন- আমরাও তাই জানি। ’

কিন্তু জাহাজটিকে তো ছাড়ছে না মালয়েশিয়া!

আমরা চেষ্টা করেছি।

দিস ইজ নট ট্রু!
বঙ্গ বিরাজ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা বিষয়ে ঢাকায় এইচআরসি শিপিংয়ের জেনারেল ম্যানেজার ক্যাপ্টেন শাহজাহান সিরাজের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘গত ৩ জুন মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ জাহাজ থেকে আমাদের নাবিকদের নামিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ পর্যন্ত করতে পারছি না। তারা কোথায় আছে, কি অবস্থায় তাও জানি না। ’

তাদেরকে তো দূরবস্থা থেকে উদ্ধার করেছে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। তাদের খাওয়া-দাওয়া ও থাকার উপযুক্ত ব্যবস্থা ছিল না। জাহাজের ক্যাপ্টেন আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, ৮মাস ধরে বঙ্গ বিরাজের ক্রুদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না?

জবাবে ক্যাপ্টেন শাহজাহান বলেন, ‘দিস ইজ নট ট্রু। বেতন ভাতা নিয়ে তো কোনও সমস্যা হয়নি। ’

কিন্তু তারা এ অভিযোগ শুধু শুধু কেন আনবে?   

এ পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘কারও কারও ২/৩ মাসের বেতন পাওনা থাকতে পারে। আর এ বিষয়টি এইচআরসি শিপিংয়ের মালয়েশিয়া প্রতিনিধি কাজী নূরুল আলমের দেখার কথা। ’

বাংলানিউজের প্রশ্নের জবাবে ক্যাপ্টেন শাহজাহান সিরাজ আরও বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয়ার মিডিয়া বাড়াবাড়ি করেছে। তারা ক্রুদের ইউজ করছে আমাদের বিরুদ্ধে, আমাদের লস করিয়ে দিতে। ’

তার মতে- স্থানীয় ক্লাং লোটাস রেস্টুরেন্টের মালিক দাতুক ড. রাহমাথু বাহিয়া বেগম মোহামেদ আরিফ ও সাংবাদিকরা এগুলো আসলে লোক দেখানো কাজ করেছে। হোটেল মালিক পাবলিসিটি চেয়েছে। আসলে ওখানকার একটি পক্ষ চাচ্ছে জাহাজটি বাতিল হিসেবে দেখিয়ে হজম করতে।

তারা এরকম চাইলে জাহাজের ক্রুদের উদ্ধার করবে কেন?

এর জবাবে তিনি উল্টো অভিযোগ করে বলেন, ‘তারা আমাদের লোকজনকে ধরে  কোথায় নিয়ে গেছে জানি না। আগে তো ক্রুরা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতো- এখন যোগাযোগও করে না। আমরা জানি না তারা কোথায় কিভাবে আছে। ’

মালাক্কার ইমিগ্রান্ট সেন্টারে তাদেরকে বর্তমানে রাখা হয়েছে। সেখানে তারা দু’সপ্তাহের জন্য থাকবে। এসময়ে ২০০৭ সালের অভিবাসী আইনের ভিত্তিতে মালয়েশিয় পুলিশ ও লেবার অফিসাররা তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করবেন ও অন্যান্য তদন্ত সারবেন। আপনাদের তো এসব জানার কথা! আর বিষয়টি দেশের ভাবমূর্তির সঙ্গে জড়িত। হতে পারি আমরা গরীব- কিন্তু আমাদের দেশের একটি জাহাজকে এবং এর ক্রুদের এ অবস্থা তো মেনে নেওয়া যায় না।  

তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো কো অপারেশন পাইনি। ’

আমাদের অ্যাম্বেসি বা সরকার পর্যায়ে চেষ্টা চালিয়েছেন?

সব ধরনের চেষ্টা চালানো হয়েছে। আমাদের চেয়ারম্যান যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন।    

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, ১১ জুন, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।