ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২, ১৩ মে ২০২৫, ১৫ জিলকদ ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

ড্যাপের ঝুঁকিতে আড়াই কোটি মানুষ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৪২, জুন ২২, ২০১১
ড্যাপের ঝুঁকিতে আড়াই কোটি মানুষ

ঢাকা: ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান(ড্যাপ) নিয়ে নগরবাসীর আতংক কাটছে না। কারণ, ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে ২ হাজার ১১টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ৯ হাজার বাড়িঘর ভাঙতে হবে।

ঝুঁকিতে পড়বে ৭০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। বন্ধ হয়ে যাবে আড়াই কোটি মানুষের রুটিরুজির পথ। তাই নগরবাসী সর্বনাশা ড্যাপের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছেন।  

আবাসন ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, বিদেশি সাহায্যপুষ্ট কতিপয় এনজিও এবং একটি স্বার্থান্বেষী মহল আবাসন খাত ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

তাদের অভিযোগ, নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতেই এনজিওগুলো আইনি জটিলতায় ফেলছে আবাসন খাতকে। ভুল তথ্য দিয়ে তারা আবাসন প্রকল্পগুলোর উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে।

রিহ্যাবের সভাপতি নসরুল হামিদ বিপু এমপি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ড্যাপ কার্যকর করতে গেলে লাখ লাখ মানুষ বেকার ও গৃহহীন হয়ে পড়বে। তাই ড্যাপ পুনর্বিবেচনা ছাড়া কোনো উপায় নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিষয়টি বুঝতে পেরে কমিটি করে দিয়েছেন। ’

এদিকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে, ‘একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে আবাসন খাত ধ্বংসের মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলছে’ বলে উল্লেখ করেছে।

প্রতিবেদরেন আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান কাঠামোতে ড্যাপ কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট সবার প্রতিনিধিত্বশীল নয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাদ দিয়ে কেবল স্থপতি, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং পরিবেশবাদীদের অন্তর্ভূক্তিতে গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হয়েছে। ঐ কমিটিতে হাইড্রোগ্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার, ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনার, জিওলজিস্ট, পানি বিশেষজ্ঞ, নগর পরিকল্পনাবিদ এবং জন প্রতিনিধিদের অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি। এতে জলাশয়কে বসত ভিটা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে আর  বসত ভিটাকে বন্যাপ্রবাহ এলাকা (ফ্লাড ফ্লো জোন) হিসেবে দেখানো হয়েছে। ফলে এটি হয়ে উঠেছে একতরফা, ত্রুটিপূর্ণ, প্রতিনিধিত্বহীন এবং ঝুঁকিপূর্ণ ও বাস্তবতাবর্জিত।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিভিন্ন মহলের প্রবল বিরোধিতা উপেক্ষা করে ড্যাপ বাস্তবায়ন কমিটি এরই মধ্যে ৬টি সরকারি ও ১০টি বেসরকারি প্রকল্প এবং ২৭২৪টি শিল্প কারখানাকে নন-কনফার্মিং হিসেবে চিহ্নিত করে সরিয়ে ফেলার সুপারিশ করেছে।

অথচ কেবল সরকারি প্রকল্পগুলোতেই ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এগুলোর প্রায় ৫০ ভাগেরও বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ঢাকা এবং ঢাকার চারপাশে যেসব প্রকল্পে উন্নয়ন কাজ চলছে। ফলে এগুলো বাতিল হলে লাখ লাখ প্লট ও ফ্লাট ক্রেতা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, ড্যাপ-আওতাধীন এলাকায় ( বসুন্ধরা ও পূর্বাচল সংলগ্ন) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের জন্য আর্মি হাউজিং সোসাইটির আওতায় জমি বরাদ্দ দেওয়াসহ ভূমি রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু হয়েছে। এ হাউজিংয়ের জন্য জমি কেনা ও উন্নয়নের কাজ চলছে। এখানে ৫ হাজার সেনা কর্মকর্তার জন্য টাকার বিনিময়ে প্লট বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে এ প্রকল্পটিও দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে সেনাবাহিনীর ৫ হাজার প্লট ধ্বংস হবে।

প্রতিবেদনটিতে একতরফা নয়, বরং সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী জনপ্রতিনিধি সরকারি মহল ও সব পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি বাস্তবানুগ পরিকল্পনা  প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে।  

এতে বলা হয়, ২০৫০ সালের পর কী হবে সেকথা মাথায় রেখে একটি যুক্তিযুক্ত ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা সম্বলিত ড্যাপ প্রণয়ণ করতে হবে। এক্ষত্রে স্থপতি, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, পরিবেশবিদ, ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনার, জিওলজিস্ট, পানি বিশেষজ্ঞ, নগরপরিকল্পনাবিদ, জনপ্রতিনিধি, আবাসন শিল্প উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভূক্ত করা জরুরি।  

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অপরিকল্পিত ও অননুমোদিত হলেও ঢাকাকে কেন্দ্র করে এর চারপাশে পরিচালিত নানা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এখন এক অপরিহার্য অর্থনৈতিক বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। এর সঙ্গে বিপুল জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকা জড়িত। এর ফলে তা এখন জাতীয় অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েছে।

ফলে বর্তমান কাঠামো মেনে ড্যাপ বাস্তবায়িত হলে জয়দেবপুর, গাজীপুর, টঙ্গী, সাভার, আশুলিয়া, কালিয়াকৈর, সিঙ্গাইর, কেরানীগঞ্জ, রূপগঞ্জ, বেলাবো, নারায়ণগঞ্জ সদর, বন্দর এবং ঢাকা মহানগর এলাকার হাজার হাজার শিল্প কারখানা ও ৫ লাখেরও বেশি স্থাপনা ভাঙতে হবে। আর এমনটা করা হলে জাতীয় অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। রাতারাতি নিঃস্ব, কর্মহীন ও উপায়হীন হয়ে পড়বে বিপুলসংখ্যক মানুষ।
 
গোয়েন্দা সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জাতীয় অর্থনীতিতে আবাসন খাতের অবদান প্রায় ২১ শতাংশ। এখাতে ৫০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান ও  আড়াই কোটি মানুষের রুটিরুজি  জড়িত। রাজউকের দায়িত্বহীনতার কারণে বেড়ে ওঠা এ সেক্টর ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। এতে জাতীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শেষ সম্বল টুকু হারিয়ে পথে বসবে লাখ লাখ মানুষ ।

ঢাকা ও আশেপাশের জেলাগুলোর আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদরা এরইমধ্যে ড্যাপ বিরোধী অবস্তান নিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আগামী সংসদ ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলেও মনে করছেন সাংসদরা।

এছাড়া ড্যাপ বাস্তবায়ন করা হলে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গণবিক্ষোভ বিস্ফোরণে রূপ নিতে পারে- সাংসদদের এমন আশঙ্কার কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ড্যাপের বিরুদ্ধে গত বছর গাজীপুরে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ওই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। তাই সরকার ড্যাপ কার্যকরের উদ্যোগ নিলে সেই বিক্ষোভ আবারো ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছেন সচেতন নগরবাসী। তাই তারা ড্যাপ বাস্তবায়ন না করার পরামর্শ দিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, ২২ জুন, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।