ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

অতিবৃষ্টিতে হুমকিতে ‘চায়ের সুদিন’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
অতিবৃষ্টিতে হুমকিতে ‘চায়ের সুদিন’ অন্ধকার করে বৃষ্টি নামছে চা বাগানে। ছবি: পার্থ সারথি দাস

মৌলভীবাজার: চায়ের সবুজ সম্ভাবনাও ধূসর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে অতিবৃষ্টিতে। কৃষিজাত অন্য পণ্যের মতোই চায়ের জন্য ক্ষতিকর সংকেত অতি বৃষ্টিপাত। ধারাবাহিক সুনির্দিষ্ট বৃষ্টিপাতের বিপরীতে অতিবর্ষণ চা-শিল্পের জন্য সবসময় বয়ে আনে অমঙ্গলবার্তা। ব্যাহত হয় চায়ের সামগ্রিক উৎপাদন।

সম্প্রতি দেশব্যাপী বিরামহীন বর্ষণে চায়েরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন চা-শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

রোববার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানের দু’টি সেকশন ঘুরে দেখা যায়, বিরতিহীন বৃষ্টির ফলে মাটি ভিজে একাকার হয়ে পানির শোষণক্ষমতা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।

প্রতিদিন গড়ে নূন্যতম ৫ ঘণ্টার প্রয়োজনীয় সূর্যালোকের বিপরীতে কয়েকদিন ধরে সূর্যের দেখাই নেই।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিলো চায়ের শহরে।      

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এর পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি দুই-ই চায়ের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। প্রতিদিন যদি আমরা অল্প অল্প বৃষ্টি পাই সেটি আমাদের চায়ের জন্য দারুণ উপকারী। গত ২১ এপ্রিলেই ১৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর।

এ অঞ্চলের জন্য দৈনিক বৃষ্টিপাতের সঠিক পরিমাপ হলো প্রায় ২০ মিলিমিটার বলে জানান ড. মোহাম্মদ আলী।     

সিলেট বিভাগের প্রবীণ টি-প্লান্টার এবং চা-গবেষক শাহজাহান আখন্দ বাংলানিউজকে বলেন, এটাকে চায়ের ভাষায় ওয়াটার ট্রেস (Water Trace) বলে। খরা ও অতিবৃষ্টিতে ওয়াটার ট্রেস হয়। দুই-ই চায়ের জন্য ক্ষতিকর। এখন আর মাটি বৃষ্টির পানিকে শোষণ করতে পারছে না। ফলে মাটির বন্ডিংস লুজ হয়ে যাবে এবং শেকড়ও প্রয়োজনীয় পানিটুকু টানবে না।

তিনি আরও বলেন, মাটির কণার ভেতরে যে বাতাস থাকে ওই বাতাসের জায়গাটা বন্ধ হয়ে যাবে পানিতে। পাশাপাশি যেহেতু প্রয়োজনীয় সূর্যের আলো নেই এবং তাপমাত্রাও কমে যাওয়ায় গাছের গতিবৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাবে। এ সবই চা গাছের জন্য মারাত্মক শঙ্কার।

শাহজাহান আখন্দ আরও বলেন, এই মুহূর্তে যেটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো বৃষ্টির ফলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে পারছি না। ফলে চা গাছ কীটপতঙ্গের আক্রমণের শিকার হবে। সামগ্রিকভাবে ব্যাহত হবে চা উৎপাদন।

শ্রীমঙ্গলের একটি চা বাগান, ছবি: পার্থ সারথি দাস এদিকে, শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র চলতি মাসে (এপ্রিল) ৫৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের তথ্য সংগ্রহ করেছে। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে ১৬ দিনে মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৩০৩ মিলিমিটার।  

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র অবজারভার মো. হারুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ১ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টা পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলে ৫৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা কয়েক বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত।  

তিনি আরও বলেন, ২১ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৩ মিনিট থেকে পরদিন ২২ এপ্রিল, শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৯ ঘণ্টায় ১৯৪ মিলিমিটার ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে শ্রীমঙ্গলে।   

বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।