ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

হাওরের কালো খলিসা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২১
হাওরের কালো খলিসা

মৌলভীবাজার: সকাল গড়িয়ে বেড়েছে রৌদ্রতাপ। দুপুর হতে বাকি নেই ঢের।

বাইক্কা বিলের পথ তখন উত্তপ্ত। দু-একটি যন্ত্রচালিত যান গ্রামীণ নিস্তব্ধতাকে মুছে দিতে ব্যস্ত। চারপাশে জলাশয়। তবে সেই প্রাকৃতিক জলাশয় নেই। সব কৃত্রিম মাছের খামারে রূপান্তরিত।
 
ওই পথ ধরেই হাঁটছিলেন বৃদ্ধ মাছ বিক্রেতা মো. গণি মিয়া। মাছের ভারটি নিচে নামাতেই দেখা গেলো কালো কালো কুচকুচে খলিসা। নড়ছে তখনও। ‘হাওরের খাঁটি খলিসা’ বলে এ মাছগুলো প্রচারে ব্যস্ত তিনি। কেজিপ্রতি একদাম দুশ টাকা হাঁকিয়ে যাচ্ছেন বারবার।
 
তার দাবি- কষ্ট করে শহরে গেলেই এই জিতা মাছগুলো (জীবন্ত) কেজিপ্রতি আড়াইশ/তিনশ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন।
 
সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্ট্যাডিজ (সিএনআরএস), বাইক্কা বিলের সাইড অফিসার মো. মুনিরুজ্জামান বলেন, আমি কখনো কালো খলিসা দেখিনি। তবে শুনেছি। পরিবেশগত কারণে কিছু প্রজাতির মাছ কালো হয়।
 
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, কালো খলিসা মানে হলো- মাছগুলো জলজ উদ্ভিদে বসবাস করে তারা প্রাকৃতিকগতভাবে কালো হয়ে যায়। হাওরের বা হাওরের পাশের বিভিন্ন ডোবা বা খাল দেখবেন এক্কেবারে কচুরিপানায় পূর্ণ থাকে। যেখানে সেসব মাছ প্রাকৃতিকভাবে থাকে ওগুলো কালো রঙের হয়।
 
বাংলায় খলিসা মাছটিকে খইলসা নামেও উল্লেখ করা হয়। এই মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Colish labiosus। আমাদের দেশে চার প্রজাতির খলিসা মাছ পাওয়া যায়। সেগুলো হলো- লালখলিসা, চুনাখলিসা বৈচাখলিসা এবং ঠোঁটমোটা খলিসা।
 তিনি আরো বলেন, কালোর বিষয়টা প্রধানত হয় পরিবেশের কারণে। যেমন ধরেন- রুই মাছ। হাওরে এক ধরনের কালার। নদীতে এক ধরনের কালার। পুকুরে আরেক কালার। এটা নির্ভর করে মাছটি কী ধরনের পরিবেশে বসবাস করছে তার উপর। সে কেমন পরিবেশ ছিল তার উপর ভিত্তি করে তার বডিকালারটা (শরীরিক রং) চলে আসে।
 
স্বাদ ও আকৃতি প্রসঙ্গে এ মৎস্যকর্মকর্তা বলেন, মাছটি খেতে সুস্বাদু। তবে কাঁটা বেশি। যারা কাঁটাওয়াল মাছ পছন্দ করেন না তাদের জন্য এ মাছটি একেবারেই আকর্ষণীয় নয়। এই খলিসার সাইজটা কিন্তু বড় হয় অন্য তিন জাতের খলিসা প্রজাতির চেয়ে। এই প্রজাতির মাছগুলো অনেকটা প্রায় ছোট আকারের কৈ মাছের সাইজের মতো হয়।
 
এর প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, এর বর্তমান অবস্থা প্রাচুর্যপূর্ণ। প্রাপ্তবয়স্ক মাছটির সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৯ সেন্টিমিটার। বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটের হাওরাঞ্চল, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ অঞ্চলে মাছটি বেশি পাওয়া যায়।    
 
ছোট মাছগুলো বেশি পুষ্টিবর্ধক। কারণ ছোট মাছে মাইক্রোনিউটন (অণুপুষ্টি) বেশি পরিমাণে থাকে। সেজন্য আমাদের বড় মাছের তুলনায় ছোটমাছ বেশি খাওয়া উচিত বলে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এমদাদুল।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২১
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।