ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

অলআউট করার দিনে সুযোগ ছাড়ার আফসোস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, স্পোর্টস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২২
অলআউট করার দিনে সুযোগ ছাড়ার আফসোস ছবি : শোয়েব মিথুন

পৌষের সকালে কুয়াশার ভিড়। তাইজুল ইসলাম আলো ছড়ালেন তাতে।

একে একে তুলে নিলেন ভারতের তিন উইকেট। তাসকিন আহমেদ ফেরালেন বিরাট কোহলিকেও। কিন্তু ভারতের সেই চাপ হাতছাড়া হলো একের পর এক সুযোগ মিসে। শ্রেয়াস আয়ার ও ঋষভ পন্থ মারমুখী হলেন এরপর।  

সকালের সুবিধা বাংলাদেশ নিয়েছিল ঠিকঠাক, চাপেও পড়েছিলেন ভারতের ব্যাটাররা। তারা হাত খুলতেই বাংলাদেশ হয়ে গেলো এলোমেলো। এরপর আবার অল্প সময়ে তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচে ফিরলো বাংলাদেশ। ফেললো উল্টো চাপে। ভারতকে অলআউট করার দিনে আফসোস হয়ে থাকলো কেবল সুযোগ ছাড়া।  

মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয়টিতে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত। টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ২২৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩১৪ রানে অলআউট হয়েছে ভারতও। পরে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় দিনশেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৭ রান করেছে বাংলাদেশ।  

প্রথম দিনই নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেছিল ভারত। দ্বিতীয় দিনের ষষ্ঠ ওভারে এসে স্বাগতিকদের সাফল্য এনে দেন তাইজুল ইসলাম। তার বলে পা বাড়িয়ে ডিফেন্ড করতে গেলে প্যাডে লাগে রাহুলের। কিন্তু আম্পায়ার আউট দেননি। পরে রিভিউ নিলে সাজঘরে ফিরতে হয় রাহুলকে। ১ চারে ৪৫ বল খেলে ১০ রান করে সাজঘরে ফেরত যান তিনি।  

নিজের পরের ওভারেই আরেক উদ্বোধনী ব্যাটার শুভমন গিলকে আউট করেন তাইজুল। সুইপ করতে গেলে তার প্যাডে লাগে। এবার সরাসরি আউটই দেন আম্পায়ার। ১ চার ও ছক্কায় ৩৯ বলে ২০ রান করে আউট হন গিল।  

এরপর ভয় ধরাচ্ছিলেন বিরাট কোহলি ও চেতেশ্বর পূজারা। দুজন মিলে খেলে ফেলেছিলেন ১০০ বল, তারা টিকে গেল বিপদ আনতে পারেন সেটা জানা এমনিতেই। তবে ঠিক ১০১তম বলে এসেই ক্যাচ দেন পূজারা। শর্ট লেগে দাঁড়িয়ে সেটি ধরেনও মুমিনুল। এর আগে জাকির দাঁড়িয়ে ছিলেন এই জায়গায়, তার আশেপাশে কয়েকটি বলও এসেছিল কিন্তু মুঠোয় জমাতে পারেননি।  

মুমিনুল ক্যাচ ধরলেও কিছুটা দ্বিধা ছিল। থার্ড আম্পায়ারের শরনাপন্নও হতে হয়। কয়েকটি অ্যাঙ্গেল ও জুম করে দেখে তিনি নিশ্চিত হন, ক্যাচ ধরার সময় তাইজুলের আঙুল ছিল নিচে। কোহলির সঙ্গে ৩৪ রানের জুটি ভাঙে পূজারার। তিনি ২ চারে ৫৫ বলে ২৪ রান করে ফেরেন সাজঘরে।  

প্রথম সেশনের বাকি সময়টুকু পার করেছেন ঋষভ পন্থ ও বিরাট কোহলি। কিন্তু বিরতি থেকে ফেরার পর কোহলি টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। তাসকিনের লেন্থ বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। ৭৩ বলে ২৪ রান করেন কোহলি। তাকে ফেরানোর পর সবটুকু চাপ ছিল ভারতের ওপর।  

কিন্তু উল্টো শ্রেয়াস আয়ার ও ঋষভ পন্থ রান তুলছেন ঝড়ো গতিতে। যদিও তাদের ১৮২ বলের ঝড়ো ১৩২ রানের জুটিতে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের অবদান বেশি। প্রথমে পন্থ ১১ রানে থাকতে স্লিপে তার ক্যাচ ছাড়েন লিটন দাস। এরপর দুই রানের ব্যবধানে দুবার জীবন পান শ্রেয়াস আয়ার।  

গালিতে দাঁড়িয়ে মিরাজ ক্যাচটি প্রায় ধরেই ফেলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুঠোয় জমাতে পারেননি। এরপর সহজ স্টাম্পিং মিস করেন নুরুল হাসান সোহান। শেষ অবধি দুজনের ১৫৯ রানের জুটি ভাঙেন মিরাজ। তার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পন্থ। ১০৪ বলে ৯৩ রান করে আউট হন তিনি। ক্যারিয়ারে পাঁচ সেঞ্চুরি পাওয়া পন্থ এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো আউট হয়ে যান ৯০ এর ঘরে।  

সেঞ্চুরির আগে ফেরানো যায় শ্রেয়াস আয়ারকেও। বেশ কয়েকবার জীবন পাওয়া এই ব্যাটারকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন সাকিব। ১০ চার ও ২ ছক্কায় ১০৫ বলে ৮৭ রান করেন আয়ার। তাকে দলীয় ২৭১ রানে ফেরানোর পর দ্রুতই ভারতকে অলআউট করার কথা ছিল।  

কিন্তু বাংলাদেশ সেটি পারেনি। শেষ তিন উইকেটে ২৮ রান যোগ করে ভারত। জয়দেব উনাদকাট ও উমেশ যাদব ১৪ ও রবীচন্দ্রন অশ্বিন করেন ১২ রান। বাংলাদেশের পক্ষে ১৯ ওভার ৩ বল হাত ঘুরিয়ে ৭৯ রান দিয়ে চার উইকেট নেন সাকিব। ২৫ ওভারে ৭৪ রান দিয়ে তিন উইকেট নেন তাইজুল ইসলামও।  

শেষ বিকেলে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ৬ ওভার ব্যাট করে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ, করেছে ৭ রান। ২৫ বলে ৫ রান করে নাজমুল হোসেন শান্ত ও ১১ বলে ২ রান করে অপরাজিত আছেন জাকির হাসান।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

দ্বিতীয় দিনশেষে

বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস ২২৭/১০ (মুমিনুল হক ১৫৭ বলে ৮৪, নাজমুল হোসেন শান্ত ৫৭ বলে ২৪, জাকির হাসান ৩৪ বলে ১৫, সাকিব আল হাসান ৩৯ বলে ১৬, মুশফিকুর রহিম ৪৬ বলে ২৬, লিটন দাস ২৫ বলে ২৫, মেহেদী হাসান মিরাজ ৫১ বলে ১৫, নুরুল হাসান সোহান ১৩ বলে ৬, তাসকিন আহমেদ ১৬ বলে ১, তাইজুল ইসলাম ৪ বলে ২, খালেদ আহমেদ ২ বলে ০; মোহাম্মদ সিরাজ ৯-১-৩৯-০, উমেশ যাদব ১৫-৪-২৫-৪, জয়দেব উনাদকাট ১৬-২-৫০-২, রবীচন্দ্রন অশ্বিন ২১.৫-৩-৭১-৪, অক্ষর প্যাটেল ১২-৩-৩২-০)

ভারত : প্রথম ইনিংস ৩১৩/১০ (লোকেশ রাহুল ৪৫ বলে ১০, শুভমন গিল ৩৯ বলে ২০, চেতেশ্বর পূজারা ৫৫ বলে ২৪, বিরাট কোহলি ৭৩ বলে ২৪, ঋষভ পন্থ ১০৪ বলে ৯৩, শ্রেয়াস আয়ার ১০৫ বলে ৮৭, অক্ষর প্যাটেল ১১ বলে ৪, রবীচন্দ্রন অশ্বিন ৩০ বলে ১২, জয়দেব উনাদকাট ৩২ বলে ১৪*, উমেশ যাদব ১৩ বলে ১৪, মোহাম্মদ সিরাজ ১৫ বলে ৭; তাসকিন আহমেদ ১৫-২-৫৮-১, সাকিব আল হাসান ১৯.৩-৩-৭৯-৪, খালেদ আহমেদ ১০-১-৪১-০, তাইজুল ইসলাম ২৫-৩-৭৪-৪, মেহেদী হাসান মিরাজ ১৭-২-৬১-১) 

বাংলাদেশ : দ্বিতীয় ইনিংস ৭/০ (নাজমুল হোসেন শান্ত ২৫ বলে ৫, জাকির হাসান ১১ বলে ২; উমেশ যাদব ২-১-৪-০, রবীচন্দ্রন অশ্বিন ৩-১-৩-০, জয়দেব উনাদকাট ১-১-০-০)

বাংলাদেশ সময় : ১৭০৩ ঘণ্টা, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২
এমএইচবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।