ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

কলকাতার উৎসবে রঙ লাগবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে?

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কলকাতা থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২৩
কলকাতার উৎসবে রঙ লাগবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে?

কলকাতা এখনও উৎসবের নগরী। চারদিকে আলো জ্বলমলে।

প্রায় প্রতি মুহূর্তেই কানে আসছে ঢাক-ঢোলের শব্দ। পূজা শেষ হয়েছে দুদিন হতে চললো। তবু এখনও নানা উৎসবের আলো জ্বলছে শহরজুড়ে। শুক্রবারই যেমন দুর্গা পূজা কার্নিভাল ছিল কলকাতার রেড রোডে।  

ইডেনের পাশের এই রাস্তায় দুই ধারে সারি সারি চেয়ার রাখা। মাঝে একটা ছোটখাটো মঞ্চ, যেখানে আসবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। এই উৎসব ঘিরে নিরাপত্তায় এমনই কড়াকড়ি, ইডেনে বিশ্বকাপ ম্যাচের আগের দিনের নানা কার্যক্রমই বদলে ফেলতে হয়েছে।  

পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরই মূলত এই উদ্যোগ। প্রায় একশ পূজো মণ্ডপের প্রতিমা নিয়ে হাজির হন ওখানকার লোকজন। দুর্গার মূর্তি নিয়ে তারা আসেন ঢাকঢোল বাজিয়ে ট্রাকে করে। রেড রোডের মঞ্চে তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে দুই মিনিট। এরপর পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় সেরাদেরকে।  

এই উৎসবের পাশেই ইডেনে বিষণ্ন বাংলাদেশ দল। হেরে বিপর্যস্ত দলের অনেক কিছুই এখন এলোমেলো। তার মধ্যেই সবচেয়ে বড় পরীক্ষা এসে সামনে হাজির; এমনিতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ বড় হওয়ার কথা ছিল না এতটা।  

কিন্তু তাদের বিপক্ষে হেরে গেলে যে ভরাডুবির পথে যাওয়া বিশ্বকাপের মানরক্ষাটুকুও হবে না, সে কি আর অজানা। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে আসা তাসকিন আহমেদের জন্যও তাই প্রশ্নটা থাকলো, ডাচদের বিপক্ষে ম্যাচটা কি একটু বেশি ‘ট্রিকি’?

কথা ভালো বলতে পারা এই পেসারের উত্তর, ‘ম্যাচ হেরে গেলে আসলে সবই ট্রিকি লাগে। এরকম ম্যাচে আরও চাপ থাকে কারণ এখানে প্রত্যাশা বেশি থাকে সবার। জিততে চাই সব ম্যাচই। বলে-কয়ে হয়তোবা জিততে পারব না। প্রক্রিয়া মেনে আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারলে জিতবো। ’

এমনিতে সব মিলিয়ে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বাংলাদেশ ওয়ানডেই খেলেছে দুটি। এর মধ্যেই আছে হারের বিষাদও। ২০১০ সালে ডাচদের বিপক্ষে গ্লাসগোতে হেরেছিল বাংলাদেশ। বছরখানেক পর বিশ্বকাপের মঞ্চে আবার তাদের হারিয়ে প্রতিশোধও নেওয়া হয়েছিল।  

এবারের বিশ্বকাপে দুই দলের যাত্রাও প্রায় একই রকম। পাঁচ ম্যাচে জয় একটি করে, নেট রান রেটে পিছিয়ে নেদারল্যান্ডস আছে সবার শেষে। তবে তাদের আছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর সুখস্মৃতি, বাংলাদেশের জয়টা এসেছিল সেই প্রথম ম্যাচে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে।  

কিনারা খুঁজতে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য মাঝে অস্বস্তি হয়ে এসেছিল সাকিব আল হাসানের বাড়ি ফেরা। এ নিয়ে ছিল নানা প্রশ্ন। সেসব উড়িয়ে ‘দলের জন্য ভালো কিছু করতে চাওয়া’ অধিনায়ককে বাহবাই দিতে বললেন সতীর্থ তাসকিন আহমেদ। তার অভিমান ‘খারাপ করলে সব চাপ আমাদের ১৫ জনের ওপর এসে পড়ে’ এমনও।  

এদিক থেকে অবশ্য চিন্তা নেই নেদারল্যান্ডসের। বিশ্বকাপে আসাটাই তাদের জন্য একটা স্বপ্নের মতো। এরপর একটা বর্ণিল জয়ও জুটে গেছে কপালে। এখন তাদের মনোযোগ গর্ব করার মতো নিজেদের ‘ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট’টা খেলার।  

বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ম্যাচ দিয়েই ইডেনে পর্দা উঠছে বিশ্বকাপের। এখনও তাই স্টেডিয়ামজুড়ে রং লাগছে, নতুন করে সাজানো ইতিহাস আরেকটু জ্বলজ্বলে করার চেষ্টাটাও হচ্ছে বেশ জোরেশোরে। বাড়ির সবচেয়ে কাছের এই মাঠে বাংলাদেশ কি না ওয়ানডে খেলছে ৩৩ বছর বাদে!

১৯৯০ সালে এখানে বাংলাদেশ মাঠে নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ওই ম্যাচ ৭১ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ, তবুও ভালোভাবেই মনে থাকার কথা এখনকার ধারাভাষ্যকার আতহার আলি খানের। ৯৫ বলে ৭৮ রানের ইনিংসে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন তিনি।  

পরে অবশ্য বাংলাদেশ একটি করে টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট খেলেছে। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি ছিল বিশ্বকাপের, আর ২০১৯ সালে প্রথম গোলাপি বলের টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ।

এবারের লড়াই, মঞ্চ, প্রেক্ষাপট সবই আলাদা বাংলাদেশের জন্য। গাণিতিক সমীকরণ থাকলেও সেমিফাইনাল খেলার কার্যকর সম্ভাবনা খুব একটা নেই। তবুও বাংলাদেশ দলের আশা নিশ্চয়ই থাকবে- কলকাতার দুর্গোৎসবের ছোঁয়াটা এসে লাগুক তাদের গায়ে। নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সেটা হলেও বিশেষ তো ক্ষতি নেই!

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২৩
এমএইচবি/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।