ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এবারও নাটোরের আড়তে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের ৩৬ জেলার চামড়া আমদানির সম্ভাবনা

মো. মামুনুর রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৪
এবারও নাটোরের আড়তে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের ৩৬ জেলার চামড়া আমদানির সম্ভাবনা

নাটোর: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নাটোরের চকবৈদ্যনাথ চামড়া আড়তে এবারও উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩৬টি জেলার চামড়া আমদানি হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ী নেতারা।  

এছাড়া দেশের মোট চাহিদার ৫০ ভাগ চামড়া এবারও চকবৈদ্যনাথ আড়ত থেকে ঢাকার ট্যানারিগুলোতে পাঠানো হবে।

গত দুবছর ধরে নগদ টাকায় চামড়া বিক্রি হওয়ায় গত ঈদুল আজহায় নাটোর আড়তে প্রায় ৪ লাখ পিস গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছিল। তবে এবার ৫ টাকা দাম বৃদ্ধি করে ৫০-৫৫ টাকায় চামড়া কেনার ঘোষণায় চামড়ার সরবরাহ আরও বাড়বে। পাশাপাশি গত বছরের মতোই নগদ টাকায় চামড়া বেচাকেনা হবে বলে প্রত্যাশা ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের। এবার ৫ লাখ পিস চামড়া বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।  

রোববার (১৬ জুন) বিকেলে জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি মঞ্জুরুল আলম হিরু এমনই ইঙ্গিত দিয়ে বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানান।  

তিনি বলেন, নাটোরের চকবৈদ্যনাথে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দুই শতাধিক আড়ত রয়েছে। এসব আড়তের ব্যবসায়ীরা সোমবার (১৭ জুন) কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ধোয়া মোছা, রঙ করা থেকে শুরু করে সব কাজ সম্পন্ন করে আড়তগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ী, ঢাকার ট্যানারি মালিকরাও যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গ্রামাঞ্চল থেকে চামড়া সংগ্রহ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।  

তিনি বলেন, এবারও বিগত বছরের মতোই নগদ টাকায় চামড়া বেচাকেনা হবে বলে প্রত্যাশা আড়তদারদের। তবে লবণের দাম বৃদ্ধি ও পশুর ভাইরাসজনিত রোগ লাম্পি স্কিন ডিজিজের (এলএসডি) কারণে চামড়া সংগ্রহ নিয়ে আড়তদারদের মধ্যে কিছুটা সংশয় রয়েছে।  

তারমতে প্রতিবছরের মতো এবারও দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩৬টি জেলার চামড়া এখানে আমদানি হবে। সেই সঙ্গে নগদে চামড়া বেচাকেনা করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করছেন তারা। শুধুমাত্র কোরবানি ঈদের সময়েই দেশের মোট চামড়ার ৫০ ভাগ চামড়া ঢাকার ট্যানারিগুলোতে চকবৈদ্যনাথ আড়ত থেকে পাঠানো হয়। তবে এবার ব্যবসায়ীদের ভাবাচ্ছেন লবণের মাত্রাতিরিক্ত দাম এবং পশুর ভাইরাসজনিত রোগ লাম্পি স্কিন ডিজিজ। ফলে চামড়ার উপরিভাগে ফেসকা জাতীয় দাগ সৃষ্টি হয়ে তার বাজারমূল্য কমে যায়।

চামড়া সংরক্ষণে সবাইকে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করার ওপর গুরুত্বারোপ করে চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের এই নেতা আরও বলেন, চামড়া কেনার সার্বিক প্রস্তুতি যেমন নেওয়া হয়েছে। তেমনি ধীরে ধীরে চামড়া বাজারের মন্দাভাব অনেকটা কেটে যাচ্ছে। এবারও বিগত বছরের মতো আশানুরূপ বেচাকেনার আশা করছি।
নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, সরকার এবার বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে প্রতি পিস গরুর চামড়া ১২০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। আর লবণবিহীন চামড়া সাড়ে ৮০০-৯০০ টাকা দাম বেধে দিয়েছেন। অর্থাৎ এবার প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ৫ টাকা দাম বৃদ্ধি করে ৫০-৫৫ টাকায় চামড়া কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া খাসির চামড়ার দাম (লবণযুক্ত) প্রতি বর্গফুট ২০-২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সেটি সঠিক গুণগত মানের হতে হবে।

গত বছর (২০২৩ সালে) প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ ছিল ৪৫-৪৮ টাকা। আর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ ছিল ১২-১৪ টাকা। তার আগের বছর (২০২২ সালে) প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ ছিল ৪০-৪৪ টাকা। আর খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়া দাম নির্ধারণ ছিল ১২-১৪ টাকা। ২০২১ সালে প্রতি বর্গফুট গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ছিল ৩৩-৩৭ টাকা। খাসির লবণযুক্ত চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ১৫-১৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ছিল ১২-১৪ টাকা বর্গফুট। এবার (২০২৪ সালে) প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ৫ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে, স্থানীয় অন্যান্য ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকারের বেধে দেওয়া দামে চামড়া কিনলেও তা একই প্রক্রিয়ায় বিদেশে বিক্রি করতে পারেন না। এজন্য তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। সেইসঙ্গে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রধান কাঁচামাল লবণের দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। তাই চামড়া কেনা ও বেচার দাম নির্ধারণ এবং লবণের দাম কামাতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী ও আড়ত মালিক বাংলানিউজকে জানান, ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনেন ঠিকই কিন্তু সময় মতো টাকা পরিশোধ করেন না। তারা সুযোগ বুঝে আড়ত থেকে চামড়া বাকিতে কিনে নিয়ে যান। পরে টাকা দিতে গড়িমসি ও হয়রানি করেন। বিকল্প কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে তাদের কাছে বাকিতে চামড়া কেনাবেচা করতে হয়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ হওয়া দরকার। তা না হলে ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে।

তারা অভিযোগ করে বলেন, বিগত কয়েক বছরে ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রায় শত কোটি টাকা বকেয়া পাওনা আছে। সঠিকভাবে এবং সঠিক সময়ে তারা টাকা দেন না। তবুও পাওনাদার ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তাদের সঙ্গে সর্ম্পক রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ধীরে ধীরে পাওনা টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করছেন। অনেকে সময় মতো টাকা না পাওয়ায় দেউলিয়া হয়েছেন, অনেকে চামড়া ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় নেমেছেন। তাদের দাবি, গত কয়েক বছর ধরে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বেচাকেনা হয়নি। সিন্ডিকেটের কারণে পানির দরে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন সাধারণ মানুষ। এবারও সেই সিন্ডিকেটের ইচ্ছাতেই চামড়া বাজার চলবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন।

নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. তারিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নাটোরের চকবৈদ্যনাথ চামড়া আড়তে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সেজন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে টহলসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঈদের দিন থেকে প্রায় সপ্তাহব্যাপী পুরো চামড়া আড়ত এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। জাল টাকা প্রতিরোধেও ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি কেউ যাতে কোনো ধরনের হয়রানি বা প্রতারণার শিকার না হন, সেজন্য পুলিশি নজরদারি থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৫ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।