ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ চৈত্র ১৪৩১, ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪ শাওয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সপ্তাহে ৩ লাখ টাকার বাঁশ বিক্রি হয় মৌলভীবাজারে 

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৫
সপ্তাহে ৩ লাখ টাকার বাঁশ বিক্রি হয় মৌলভীবাজারে  বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে নানা জাতের বাঁশ। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: বহুতল ভবন নির্মাণের সহায়তা, সীমানা চিহ্নিতকরণের নিরাপত্তাজনিত বেড়া তৈরি কিংবা বাঁশের তৈরি বিভিন্ন কুটিরশিল্পের উপকরণ তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে লাগে বাঁশ। প্রকৃতির একটি অস্থায়ী বৃক্ষনির্ভর উপাদান এটি।

মৌলভীবাজার জেলা চা বাগান বেষ্টিত পাহাড়ি এলাকা হওয়াতে এখানে রয়েছে নানা প্রজাতির বাঁশের প্রচলন।

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওরপারে রয়েছে বাঁশের হাট। এই বাজারের আলাদা পরিচিত রয়েছে জেলায়। শুধু মৌলভীবাজার জেলাতেই নয়, বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলেরও একটি পরিচিত ‘বাঁশের হাট’।

সম্প্রতি জেলার রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের কালারবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, নানারকমের পণ্য থাকলেও প্রায় সব হাটেই যেমন কমবেশি বিশেষ কিছু পণ্যের পরিচিতি থাকে, তেমনই এই হাটেও আছে বিশেষ পণ্য বাঁশ।

চাঁদনীঘাট-হলদিগুল সড়কের উত্তর পাশের নিচু জমিতে থরে থরে লম্বা, মাঝারি ও ছোট দৈর্ঘ্যর অনেক বাঁশ বিছিয়ে রাখা হয়েছে। ক্রেতারা আসছেন, প্রয়োজনীয় বাঁশ পছন্দ করছেন। দরদামে হলে বাঁশ আলাদা করে রাখছেন।

এ সময় দেখা যায়, অল্প বাঁশের জন্য টেলাগাড়ি এবং বেশি পরিমাণের বাঁশের জন্য পিকআপভ্যানে বাঁশ তুলছেন ক্রেতারা, গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য।  

বাঁশ ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, হাওরপারের কালারবাজার এলাকায় শত বছর আগে গড়ে উঠেছিল একটি গ্রামীণ হাট। দূর-দূরান্তের মানুষ এই হাটে নানান পন্যের পাশাপাশি বাঁশ কিনতে আসে। আর এই বাঁশ বিক্রির ঐতিহ্য শত বছরের পুরোনো। কাউয়াদীঘি হাওর ও কুশিয়ারা নদীকে কেন্দ্র করে যোগাযোগের সুবিধার্থে হাটটি গড়ে উঠে। দূর-দূরান্ত থেকে পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের মানুষের পানিপথই ছিল ভরসা। এই পথে শুধু নৌকা নয়, একসময় লঞ্চও চলাচল করতো। এর ফলে বাঁশ সহ অন্য পণ্য পরিবহন সহজ ছিল।

হাটের সূচনাকাল থেকেই এই বাঁশের হাট গড়ে উঠেছে। এই হাটে বালাগঞ্জ, নবীগঞ্জ, আজমিরিগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে বাঁশ কিনে নিয়ে যান।  

তারা আরও জানান, আগের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন বদলে গেছে। বর্তমানে বাজারে আসা-যাওয়া জন্য পাকা সড়ক হয়েছে। তারপরও অনেকেই পানিপথেই বেশি বাঁশ পরিবহন করে থাকেন। কাঁচা ঘর তৈরি, বহুতল ভবন নির্মাণসহ নানা রকম কাজে এই বাঁশ ব্যবহার করা হয়। এ হাটে নিয়মিত ২৫ থেকে ৩০ জন বাঁশের ব্যবসায়ী আছেন, যারা বারো মাসই এখানে ব্যবসা করেন।  

এই হাটে প্রায় ৩৫ বছর ধরে বাঁশের ব্যবসা করছেন বাছিত মিয়া। তিনি বলেন, ‘জেলার রাজনগর, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, কুলাউড়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশ সংগ্রহ করা হয়। এ হাটে প্রতিদিনই বাঁশ বেচাকেনা চলে। তবে সাপ্তাহিক হাট বসে সোম ও শুক্রবার। এই দুই দিন দূর-দূরান্তের মানুষ আসেন বাঁশ কিনতে। সবচেয়ে দামি বাঁশ হলো বড়ুয়া বাঁশ। বড় আকারের প্রতিটি বড়ুয়া মূল্য ৩০০ টাকা থেকে ৪৫০/৫০০ টাকা। প্রতি হাটে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার বাঁশ বিক্রি হয়। তবে শুক্রবার বেশি বাঁশ বিক্রি হয়। ওই দিন ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার বাঁশ বিক্রি হয়। ‘

বেত-শিল্পের কারিগর মহেন্দ্র সরকার বলেন, ৪০ বছর ধরে এই বাজার থেকে বাঁশ কিনি। সেই বাঁশ দিয়ে টুকরি, কুলা ও খলই তৈরি করি। আমাদের এলাকায় এমন বড় বাঁশের হাট আর একটিও নেই।

বাঁশ ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতা কালাম মিয়া বলেন, বর্তমানে সোজা, লম্বা ও মজবুত বাঁশের সরবরাহ কম। আগে গ্রামগঞ্জে যেসব জায়গায় বাঁশঝাড় ছিল, এখন সেখানে বাড়ি-ঘর উঠে যাচ্ছে। গ্রামে ফাঁকা বা বাঁশঝাড়ের জায়গা এখন আর কেউ রাখছেন না। ফলে উৎপাদন কম, সরবরাহ কম। তারপরও কালারবাজার বাঁশের জন্য সবার কাছে পরিচিত।

জেলা শহর থেকে কালারবাজারে বাঁশ কিনতে এসেছেন নির্মাণাধীন একটি ভবনের ঠিকাদার আবু তাহের। তিনি বলেন, সাধারণত সব ধরনের বাড়ি বা ভবনে ঢালাইয়ের সময় বাঁশ খুঁটি হিসেবে ব্যবহার হয়। ভবনের নির্মাণকাজে প্রচুর পরিমাণে বাঁশ লাগে। দুইতলা-পাঁচতলা যাই হোক ভেতরে বা বাইরে, প্রতিটি ফ্লোরে মাচা তৈরি করতে হয় বাঁশ দিয়ে। সেই সঙ্গে এগুলোর খুঁটি হিসেবেও বাঁশের ব্যবহার হয়। এই হাটে চাহিদামতো ও সস্তায় বাঁশ পাওয়া যায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৫
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।